ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় যে খসড়া তালিকা বেরিয়েছে, তাতে প্রায় ৫৮ লক্ষ ২০ হাজার নাম বাদ গিয়েছে। বিজেপির দাবি করা এক কোটির বেশি অনুপ্রবেশকারী, রোহিঙ্গারা কোথায় গেল, সেই প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় শাসক দল এবং নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করছে তৃণমূল কংগ্রেস ও অন্যান্য বিজেপি-বিরোধী দল। এরই মধ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বাদের সংখ্যা এবং গত লোকসভা নির্বাচনে ভোটপ্রাপ্তির হিসাবকে হাতিয়ার করে বৃহস্পতিবার ফের দাবি করলেন, এসআইআর-এর পরে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের ব্যবধান থাকছে না। এসআইআর-প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগেও শাণ দিয়েছেন তিনি। তৃণমূল ভোটদানের হিসাবকে হাতিয়ার করে পাল্টা নিশানা করেছে শুভেন্দুকে।
বিরোধী নেতা বীরভূমের লাভপুরে বলেছেন, “আপাতত ৫৮ লক্ষ নাম বাদ গিয়েছে, আরও যাবে। আমাদের সঙ্গে তৃণমূলের ফারাক কত? মাত্র ৪২ লক্ষ। এসআইআর-এর পরে আর ফারাক নেই। কারণ, তৃণমূল মৃত, ভুয়ো, ক্যামেরা বন্ধ করে ভোট দেয়।” তাঁর সংযোজন, “মমতা বলেছিলেন, এসআইআর হবে না, এসআইআর মানে এনআরসি। বলেছিলেন, ১৬ তারিখ তালিকা বেরোলে আগুন লাগবে, বিজেপি নেতারা রাস্তায় বেরোতে পারবেন না। ওঁর কথা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে!”
ভোটদানের হিসাবের কথা বলে শুভেন্দুর দাবিকে নস্যাৎ করেছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, “প্রতিটি ভোটে বেশ কয়েক শতাংশ মানুষ ভোট দেন না। মৃত, স্থানান্তরিতদের সেই ভোটের হিসাব করে রাজনৈতিক ভবিষ্যতের অঙ্ক কষছে বিজেপি। ভোটের আগে পর্যন্ত আনন্দ পান। ফলাফলে দেখবেন, তৃণমূলের ভোট, আসন বাড়বে।”
অনুপ্রবেশ-প্রশ্নে শুভেন্দু ও বিজেপিকে নিশানা করা অব্যাহত রেখেছে বিভিন্ন দল। রাজ্যে এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মীর বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের ভিড়, এমন আখ্যান তৈরির চেষ্টা করেছে বিজেপি। আর কমিশন যে ৫৮ লক্ষের তালিকা দিয়েছে, তার মধ্যে ২০-২২ লক্ষ মৃত। প্রতি বছর দু’বার ভোটার তালিকার সংশোধন হয়। সেই সংশোধনে কেন এই নাম বাদ দেওয়া হয়নি?” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও বলেছেন, “বিদেশি বা বাংলাদেশি মুসলমান হিসাবে কত জনের নাম বাদ গিয়েছে? মিথ্যাচারের জন্য শুভেন্দু ক্ষমা চান।” যদিও অনুপ্রবেশ-প্রশ্নে শুভেন্দুর বক্তব্য, “সবে ‘ব্রেকফাস্ট’ হচ্ছে। এক মাস শুনানি চলবে। যিনি বাংলাদেশের বাবাকে মুর্শিদাবাদের বাবা বানিয়েছেন, তিনি থাকবেন না! অপেক্ষা করুন।”
খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে শুরু হচ্ছে শুনানি-পর্ব। সেই পর্বে সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে প্রদেশ কংগ্রেসের দফতর বিধান ভবনে শুরু হয়েছে সহায়তা শিবির। ছিলেন এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক মীর, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, দলের এসআইআর সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারপার্সন প্রসেনজিৎ বসু প্রমুখ। কংগ্রেস নেতা প্রশান্ত দত্ত, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়েরা কমিশনে অভিযোগ করেছেন, এন্টালির মহম্মদ সইফ খান নামে এক ব্যক্তি গণনা-পত্র পূরণ করলেও, তাঁকে ‘সন্ধান মেলেনি’ বলা হয়েছে। দ্রুত এমন ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা। পাশাপাশি, কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন দল জেলাশাসকের দফতর ছাড়াও স্থানীয় স্তরে শুনানি-কেন্দ্র করার দাবি জানাচ্ছিল। এই প্রেক্ষিতে রাসবিহারী-সহ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন স্কুলে শুনানি-কেন্দ্র করেছে কমিশন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)