E-Paper

প্রভাবশালীর নির্দেশেই কি পাস বিলোয় পুলিশ?

পুলিশ সূত্রের দাবি, এখানেই সামনে আসছে এই ঘটনায় শতদ্রুর সঙ্গে রাজ্যের কিছু নেতা ও প্রভাবশালীর সম্পর্কের বিষয়টি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:৩৮
বিক্ষোভ যুবভারতীতে।

বিক্ষোভ যুবভারতীতে। ফাইল চিত্র।

যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে লিয়োনেল মেসির অনুষ্ঠান ঘিরে কোন ব্যক্তি বা কোন কোন সংস্থা টাকা দিয়েছিল, সেই টাকা কোন পথে, কার কার কাছে পৌঁছেছে, সেই বিষয়ে জোর দিচ্ছেন বিশেষ তদন্তকারী দলের সদস্যরা। আলাদা করে নজর দেওয়া হচ্ছে মেসি-সফর ঘিরে এই অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা, ধৃত শতদ্রু দত্তের আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে। বৃহস্পতিবার সিট-এর প্রধান তথা রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তা পীযূষ পাণ্ডে শুধু বলেছেন, “সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সময় মতো সবটা প্রকাশ করা হবে।”

সূত্রের দাবি, প্রাথমিক তদন্তে সিট-এর সদস্যরা নিশ্চিত হয়েছেন, মেসি বেরিয়ে যাওয়ার আগেই প্রথম বোতল ছোড়া হয়েছিল স্টেডিয়ামের নীচের টিয়ার থেকে। এর পরই নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বেরিয়ে যায় মেসির টিম। তারপর আশপাশের একাধিক জায়গা থেকে বোতল ছোড়া শুরু হয়। এক তদন্তকারী অফিসারের দাবি, “বোতল ছোড়ার কারণ দেখতে গিয়ে সামনে আসছে, মেসিকে দর্শকদের একেবারেই দেখতে না পাওয়ার বিষয়টি। এই সূত্রেই আতশকাচের নীচে, সে দিন মাঠে কারা কারা লোক ঢুকিয়েছিলেন এবং কী করে ঢুকিয়েছিলেন, সেই বিষয়টি।”

পুলিশ সূত্রের দাবি, এখানেই সামনে আসছে এই ঘটনায় শতদ্রুর সঙ্গে রাজ্যের কিছু নেতা ও প্রভাবশালীর সম্পর্কের বিষয়টি। পুলিশি জেরায় শতদ্রুও এ ব্যাপারে ধীরে ধীরে মুখ খুলছেন বলে ওই সূত্রের দাবি। দেখা যাচ্ছে, ব্যক্তিগত পরিচিতির ভিত্তিতেই ওই দিন একাধিক প্রভাবশালী তাঁদের আত্মীয়-পরিচিতদের নিয়ে মাঠে গিয়েছিলেন। শতদ্রু সিট-এর সদস্যদের সামনে দাবি করেছেন, শুক্রবার পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে তাঁদের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট দল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, মেসির সঙ্গে মাঠে থাকবে শুধু ১৫ জনের একটি দল। তার মধ্যেই থাকবেন মেসি-সহ তিন ফুটবলার, দোভাষী, মেসির পরিবারের সদস্য এবং আন্তর্জাতিক ‘ব্রডকাস্টার’-রা। মেসি ও ফুটবলারদের নিরাপত্তাকর্মী ছাড়াও রাখা হয়েছিল শতদ্রু ও তাঁর দলের কয়েক জনকে। সেখানে এই রাজ্যের সাংবাদিকদেরও রাখার ব্যাপারে ছাড়পত্র মেলেনি।

গোল বাধে শুক্রবার রাতে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যের শাসক দলের কিছু লোক মাঠে ঢুকতে চাওয়ায় জলঘোলা শুরু হয়। সূত্রের দাবি, ১৫ জন ছাড়া কাউকেই মেসির সঙ্গে যেতে দেওয়া সম্ভব নয় বলে পুলিশকে জানিয়ে দেওয়া হয় শতদ্রুর দলের তরফে। তবে পরে ঠিক হয়, মুখ্যমন্ত্রী এলে তাঁর সঙ্গে আরও পাঁচ জন যেতে পারবেন। অভিযোগ, এর পরেই আসরে নামেন এক প্রভাবশালী। পুলিশের ওই সূত্রের দাবি, ওই প্রভাবশালীর সঙ্গে শতদ্রুর ফোনে কথা কাটাকাটি হয়। এই রাজ্যে তাঁকে কী কী ভাবে সুবিধা দেওয়া হয়েছে মনে করানো হয় শতদ্রুকে। এই রাজ্যেই তাঁকে কাজ করতে হবে বলেও স্মরণ করানো হয়। এতেও কাজ না হওয়ায় ওই প্রভাবশালী নিজেই পুলিশকে আলাদা করে বেশ কিছু ‘পাস’ দেওয়ার নির্দেশ দেন। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এতেই সমস্যার সূত্রপাত।

গত শনিবার মেসি যখন যুবভারতীতে ঢুকেছেন, তখন ভিআইপি-রা ওই প্রভাবশালীর সূত্রেই মেসির প্রবেশ পথের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। মেসির সঙ্গেই ঢুকে পড়েন তাঁদের অনেকে। যাঁদের ছবি ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। প্রভাবশালীরা সঙ্গে থাকায় পুলিশও সেই মুহূর্তে আর কিছুই বলেনি বলে সূত্রের দাবি। ওই প্রভাবশালী ও নেতা-দাদাদের থেকে শতদ্রু অতীতে কী কী সাহায্য নিয়েছিলেন, মেসির সফর ঘিরে তাঁদের মধ্যে আর্থিক লেনদেন হয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখতে চাইছেন তদন্তকারীরা। এই ‘লেনদেনের সম্পর্কে’র জেরেই কি তাঁদের মেসি-সঙ্গ ঝেড়ে ফেলতে পারেননি শতদ্রু? খোঁজ করছে বিশেষ তদন্তকারী দল।

এ দিন বিধাননগর পুলিশের সঙ্গে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলেন সিট-সদস্যেরা। সূত্রের খবর, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের সমস্ত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, মেসির অনুষ্ঠানের ব্রডকাস্ট হওয়া আউটপুট লিঙ্ক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে থাকা রিল এবং ভিডিয়ো খতিয়ে দেখাও শুরু হয়েছে। তদন্তকারীরা বুঝতে চাইছেন, মাঠের কোন অংশ থেকে প্রথম গোলমালের শুরু? এই ঘটনার পিছনে অন্য ইন্ধন ছিল কি না, পুলিশের ‘তৎপরতা’ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মাঠ থেকে ওই দিন বিভিন্ন জিনিস চুরি হওয়া নিয়েও একটি লুট-চুরির মামলা পুলিশ রুজু করতে পারে বলে খবর।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Special Investigation Team Salt Lake Stadium

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy