Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

কথায় সংযম রাখার বার্তা যুবরাজের মঞ্চেই

চুলে সামান্য একটু জলের ছিটে লাগল! বাকি যেমন বেণী, তেমনই রয়ে গেল! অভিষেক-কাণ্ডে এমনই সতর্ক এবং কৌশলী অবস্থান নিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হল, দু’দিন আগে বসিরহাটের সভায় তিনি কী বলেছিলেন?

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৫ ০৩:১৭
Share: Save:

চুলে সামান্য একটু জলের ছিটে লাগল! বাকি যেমন বেণী, তেমনই রয়ে গেল!

অভিষেক-কাণ্ডে এমনই সতর্ক এবং কৌশলী অবস্থান নিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হল, দু’দিন আগে বসিরহাটের সভায় তিনি কী বলেছিলেন? যুবরাজকে মঞ্চে বসিয়ে রেখেই বুধবার অন্য এক সভা থেকে বার্তা দেওয়া হল, কোনও প্ররোচনার মুখেই কারও বাক্ সংযম হারানো উচিত নয়। আবার এত কিছুর পরেও প্রকাশ্যে তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে দাবি করা হল, আসলে অভিষেকের মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করেছে সংবাদমাধ্যমই!

তৃণমূলের ২১শে জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশের প্রস্তুতি সভায় গিয়ে সোমবার বসিরহাটে অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতে বাংলার মানুষকে চোখ দেখালে আমরা চোখ ছিঁড়ে রাস্তায় ফেলে দিতে পারি। হাত দেখালে হাত কেটে নিতে পারি।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘কিন্তু মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্রে মানুষই শেষ কথা বলে।’’ তাঁর ওই মন্তব্যেই বিতর্কের ঝ়়ড় ওঠে। বিরোধীদের দাবি, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো এমন কথা বললে এর পরে রাজ্য জুড়ে হিংসা ছড়াবে। অভিষেকের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগও দায়ের করেছে বিরোধীরা। সেই সঙ্গেই তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের দিকেও আঙুল উঠেছে, তাঁদের দেখানো পথেই যুবরাজ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন। কিন্তু এই নিয়ে গোড়ায় নীরবতা বজায় রাখার পরেও শেষ পর্যন্ত এ দিন দলের শীর্ষ মহলের সবুজ সঙ্কেত নিয়ে আসরে নামেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তবে নামাই সার! তার কার্যকারিতা ঘোর সংশয় থাকছে সব মহলেই।

২১শের প্রস্তুতির জন্যই এ দিন রানাঘাটে সভা ছিল পার্থ-অভিষেকের। সেই অবসরেই মহাসচিব দলের যুব সভাপতির কাছে ওই মন্তব্যের প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছিলেন। অভিষেক তাঁকে জানিয়েছেন, তিনি কখনওই কারও হাত কেটে নেওয়া বা চোখ ছিঁড়ে নেওয়ার হুমকি দেননি। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র আছে বলেই এ সব হয় না। কিন্তু সংবাদমাধ্যম নাকি তাঁর মন্তব্যের এই অংশ সম্প্রচার করছে না। যুবরাজের এই ব্যাখ্যা শোনার পরে পার্থবাবু এ দিন প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘‘অভিষেক রাজ্যের উন্নয়ন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে রানিগঞ্জের ছাত্রনেতা সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথার কোনও তুলনাই হয় না! তা ছাড়া, সংবাদমাধ্যমে অভিষেকের বক্তব্যের অপব্যাখ্যা হয়েছে।’’

রানাঘাটের সভামঞ্চে অবশ্য পার্থবাবুই বলেছেন, ‘‘উন্নয়নের পথে কোনও চক্রান্ত আমরা মানব না। কিন্তু আমাদের সকলকেই সতর্ক থাকতে হবে, কোনও প্ররোচনায় যেন আমরা পা না দিই। কোনও ভাবে আমরা যেন বাক্ সংযম হারিয়ে না ফেলি।’’ তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, মহাসচিবের ওই বার্তার পরিষ্কার লক্ষ যুবরাজই।

বিরোধীরা অভিষেক-কাণ্ডে চাপ অব্যাহতই রেখেছে। তৃণমূল সাংসদের মন্তব্যকে ‘হিংস্র’ এবং ‘প্ররোচনামূলক’ বলে দাবি করে বসিরহাট থানায় এ দিন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সিপিএম নেতা নিরঞ্জন সাহা। ওই মন্তব্যের প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার এলাকায় পথ অবরোধ করা হবে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় বাম নেতৃত্ব। একই বিষয়ে ইতিমধ্যেই বসিরহাট ও কলকাতার জোড়াসাঁকো থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বিজেপি নেতারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE