Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Health

হোটেলের ঘর ফাঁকা, আতঙ্কে রেস্তরাঁ খাঁ খাঁ 

একটি মার্কিন সংস্থার হোটেল-বাণিজ্য সংক্রান্ত রিপোর্ট বলছে, ২ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সপ্তাহটিতে হোটেল ভর্তি থাকা বা ‘অক্যুইপ্যান্সি’র হার ভারতে ১৭ শতাংশ কমেছে।

সাবধানি: করোনা-আতঙ্কের জেরে প্রায় ফাঁকা প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি শপিং মল। শনিবার সন্ধ্যায়।—ছবি: সুমন বল্লভ

সাবধানি: করোনা-আতঙ্কের জেরে প্রায় ফাঁকা প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি শপিং মল। শনিবার সন্ধ্যায়।—ছবি: সুমন বল্লভ

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২০ ০৪:৪৩
Share: Save:

দিল্লি, মহারাষ্ট্র বা কর্নাটকের ঢঙে এখনও বড়সড় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি রাজ্য। তবু করোনা আতঙ্কের ধাক্কা এখনই মালুম হচ্ছে রীতিমতো। আথিথেয়তা-শিল্প ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

কলকাতা থেকে অফিসের একটি অনুষ্ঠানের জন্য এ মাসের শেষে কালিম্পঙে যাওয়ার কথা শহরের একটি সংস্থার কর্মীদের। ব্যাঙ্কক-সিঙ্গাপুর নয়, বিমানবন্দর থেকে উড়ানে বাগডোগরা যাওয়াটাও ঠিক হবে কি না জানতে তাঁরা নানা মহলে পরামর্শ নিচ্ছেন। একদা বিলেত যাত্রা বা কালাপানি পার হওয়া নিয়ে বিস্তর সংস্কার ছিল বাঙালি-সমাজে। এ যাত্রা, গোটা বিশ্ব জুড়েই অন্য কোথাও যাওয়া নিয়ে জড়তা জাঁকিয়ে বসছে। কলকাতা বা শিলিগুড়ির মতো এ রাজ্যের শহরগুলিও তার ব্যতিক্রম নয়।

পূর্ব ভারতের হোটেল-রেস্তরাঁ মালিকদের প্রধান সংগঠন হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁ অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সম্পাদক সুদেশ পোদ্দারের কথায়, ‘‘প্রাথমিক ভাবে প্রভাব বেশি পড়েছে হোটেলগুলির উপরে। লোকে বিভিন্ন শহরে যাতায়াত কমালে সেটাই হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন রেস্তরাঁও নানা পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছে।’’ দেশের বড়-সড় হোটেল চেনের পোড়খাওয়া প্রাক্তন কর্তা তথা বিভিন্ন হোটেল-রেস্তরাঁর উপদেষ্টা অভিজিৎ বসু বলছিলেন, ‘‘সব মিলিয়ে যা আঁচ মিলছে, তাতে কলকাতাতেও গত বছর মার্চের এই সময়ের তুলনায় ২০২০তে হোটেলে ঘর ভর্তি থাকার অনুপাত কমেছে ২০-২৫ শতাংশ। এআরআর বা ঘর ভাড়া থেকে গড় আয়ও ২৫ শতাংশ কম।’’ সুদেশবাবুর হিসেব, ‘‘রেস্তরাঁ ব্যবসাও ৫-৭ শতাংশ কমেছে।’’ সূত্রের খবর, বেকবাগানের একটি শপিংমলের রেস্তরাঁয় ভিড়ের হার শতকরা ৪০ ভাগ কম। এমন চললে ঘোর সঙ্কটের সম্ভাবনা। কলকাতায় বিবাদী এলাকার একটি পাঁচতারা হোটেলের মুখপাত্র বলছিলেন, ‘‘এখনই যে হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েট বা বিভিন্ন রেস্তরাঁয় চোখে পড়ার মতো ভিড় কমেছে, তা নয়। কিন্তু ঘর বুকিং কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। এই সময়টায় শহরে বেশ কিছু বিদেশি পর্যটক আসেন। সেটা ধাক্কা খেয়েছে।’’

একটি মার্কিন সংস্থার হোটেল-বাণিজ্য সংক্রান্ত রিপোর্ট বলছে, ২ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সপ্তাহটিতে হোটেল ভর্তি থাকা বা ‘অক্যুইপ্যান্সি’র হার ভারতে ১৭ শতাংশ কমেছে। তবে চিন, ইটালি, দক্ষিণ কোরিয়ায় এই হার ৭৮ শতাংশ। আর একটি প্রথম সারির আমেরিকান ম্যানেজমেন্ট সংস্থার রিপোর্টেও আশঙ্কা, কপাল ভাল থাকলে ব্যবসার এই দুঃসময় বছরের শেষ ভাগে কাটিয়ে উঠে পুরোটা চাঙ্গা হতে পারে। করোনার দৌড়ে এখনও আমেরিকা, আফ্রিকা বা ভারতকে তারা পিছনের সারিতে রেখেছে। তাতেও এই বিশ্বব্যাপী মহামারীর অভিঘাতে বছরের শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে বিমানযাত্রায় বিধিনিষেধ থাকা অসম্ভব নয় বলে মনে করছে তারা। খুব ইতিবাচক পরিস্থিতিতেও সঙ্কট নিয়ন্ত্রণ তিন-চার মাসের ধাক্কা বলে মনে করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অযথা আতঙ্কিত না-হয়ে ব্যক্তিগত এবং সামগ্রিক সতর্কতা বজায় রাখা এবং সুসময়ের অপেক্ষাই একমাত্র রাস্তা বলে মনে করেন অভিজিৎবাবু। পূর্ব ভারতের হোটেল-রেস্তরাঁ মালিকদের সংগঠনের তরফে একটি ইমেলেও সদস্যদের স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা অক্ষরে অক্ষরে মানতে বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Coronavirus Pandemic Restaurant Hotels
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE