Advertisement
০২ মে ২০২৪
চাল নিতে স্কুলে কিছু পড়ুয়াও
Coronavirus

বদলি শিক্ষাকর্তা, কলকাতার দুই প্রধান শিক্ষকও

পর্ষদ-প্রধানের নির্দেশ জানাচ্ছে, যাদবপুর বিদ্যাপীঠের শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য এবং কাটজুনগর স্বর্ণময়ী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক কাজি মাসুম আখতারকে বদলি করা হয়েছে।

মিড-ডে মিলের চাল-আলু দেওয়া চলছে উলুবেড়িয়ায়।

মিড-ডে মিলের চাল-আলু দেওয়া চলছে উলুবেড়িয়ায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২০ ০৫:২১
Share: Save:

করোনার দাপটে স্কুল বন্ধ। তা সত্ত্বেও সোমবার মিড-ডে মিলের চাল-আলু বণ্টনের সময় কলকাতা-সহ সারা রাজ্যেই কিছু পড়ুয়া স্কুলে এসেছে বলে অভিযোগ। এর জেরে কলকাতার দু’টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের অন্য স্কুলে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশেই এই বদলি। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলবে বলে জানানো হয়েছে। সরিয়ে দেওয়া হয় স্কুলশিক্ষা দফতরের মিড-ডে মিলের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিককেও।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই তিন জনেই বার বার নিয়ম ভেঙে কাজ করছিলেন। সেটা আমাদের নজরে আসার পরেই ওঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ চাল-আলুর জন্য ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, স্কুলগুলিকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কোনও পড়ুয়া চাল-আলু নিতে স্কুলে আসবে না। তবু কী ভাবে কিছু ছাত্রছাত্রী স্কুলে এল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনও স্কুল নিয়ম ভেঙে কিছু করলে ব্যবস্থা হবে।

পর্ষদ-প্রধানের নির্দেশ জানাচ্ছে, যাদবপুর বিদ্যাপীঠের শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য এবং কাটজুনগর স্বর্ণময়ী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক কাজি মাসুম আখতারকে বদলি করা হয়েছে। আখতার এ বার পদ্মশ্রী প্রাপক। প্রধান শিক্ষক হিসেবে তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছে উত্তর কলকাতার হরনাথ বয়েজ হাইস্কুলে। ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক শুভাশিস দণ্ডপতকে কাটজুনগর স্বর্ণময়ী বিদ্যাপীঠের টিচার ইনচার্জ করা হয়েছে। পরিমলবাবুকে বদলি করা হয়েছে উত্তর কলকাতার রানী ভবানী হাইস্কুলে। যাদবপুর বিদ্যাপীঠে সহকারী শিক্ষক বিজয়রঞ্জন আচার্যকে টিচার ইনচার্জের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, পরিমলবাবু ও আখতারের স্কুল থেকে চাল-আলু নিয়ে গিয়েছে পড়ুয়ারাও। আখতার বলেন, ‘‘স্কুলে কয়েক জন অভিভাবক সন্তানদের নিয়ে এসেছিলেন। সেই সব পড়ুয়াকে স্কুলের বাইরে বার করে দিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে চাল-আলু বণ্টন করি। এখানে মিড-ডে মিল দেওয়ার দায়িত্ব একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের। কিন্তু তারা সাহায্য করেনি। আমি নিজের টাকায় আলু কিনেছিলাম। আমি চরম নোংরামির শিকার।’’

অভিযোগ, এক ছাত্রী তার মায়ের সঙ্গে যাদবপুর বিদ্যাপীঠে স্কুলে এসে চালের প্যাকেট নিয়ে যায়। যদিও পরিমলবাবু বলেন, ‘‘আমরা সরকারি নিয়ম মেনেই চাল-আলু বিতরণ করেছি। জমায়েত যাতে না-হয়, সেই বিষয়ে নোটিসও টাঙিয়েছি। ওই অভিভাবক অসুস্থ, তাঁকে সাহায্য করতেই এসেছিল ছাত্রীটি।’’

কিছু স্কুলে পড়ুয়াদের হাজিরা নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে এ দিন লকডাউন পর্ব শুরু হওয়ার আগেই বেশির ভাগ স্কুল থেকে দু’‌কেজি চাল এবং দু’‌কেজি আলু নিয়ে যান অভিভাবকেরা। মেট্রোপলিটন স্কুল মেনের প্রাথমিক বিভাগে মিড-ডে মিল বিতরণ কেন্দ্রে দেখা যায়, মুখোশ ও দস্তানা পরে চাল-আলু বিতরণ করা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষিকা সোমা দাস বলেন, ‘‘সব অভিভাবককে ফোনে বলা হয়েছিল, তাঁরা যেন ছেলেমেয়েদের না-আনেন। কোনও অভিভাবকই তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসেননি।’’

হেয়ার স্কুলে সাড়ে ১১টার মধ্যে শতাধিক অভিভাবককে চাল-আলু দেওয়া হয়। বিপুল ভট্টাচার্য নামে এক শিক্ষক বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে চাল শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই নিজেরাই ১০০ কেজি চালের একটি বস্তা কিনে এনেছি। তার পরেও আরও এক বস্তা চাল আনতে হয় হিন্দু স্কুল থেকে।’’

তবে সার্বিক ভাবে চাল-আলুর জোগানে ঘাটতি ছিল না বলেই দাবি স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তাদের। তাঁদের মতে, সোমবার বিকেলে লকডাউনের আগে, বেলা ৩টের মধ্যে স্কুলে সুষ্ঠু ভাবে চাল-আলু আলু বিলি হয়েছে। কিছু আলু বেঁচে গিয়েছে। তা অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Mid Day Meal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE