Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Mamata Banerjee

অনেক হয়েছে আর নয়, এ বার কড়া দাওয়াই মুখ্যমন্ত্রীর

হাওড়া এখন রেড-স্টার, কলকাতা রেড জোনে রয়েছে। ১৪ দিন সময় দিলাম। এই দুই এলাকাকে অরেঞ্জ জোনে আনতে হবে।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৪৩
Share: Save:

গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা সংক্রমণের ৯০% খবর হাওড়া ও কলকাতার কয়েকটি জায়গা থেকে এসেছে বলে জানিয়ে ‘কড়া দাওয়াই’ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার জেলাশাসক-পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠকে তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘‘অনেক হয়েছে, আর নয়। টোটাল লকডাউন হবে। প্রয়োজনে হাওড়ায় সশস্ত্র পুলিশ নামবে। কলকাতাতেও পুলিশ কঠোর হবে। কাউকে বেরোতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজন হলে পুলিশ বাড়িতে খাবার বা প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দিয়ে আসবে।’’

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক করোনা চিত্রে কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরকে ‘হটস্পট’ বলে উল্লেখ করেছিল। তার আগেই অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী বেশ কয়েকটি জেলার এলাকাকে ‘স্পর্শকাতর’ বলে চিহ্নিত করে ‘মাইক্রোপ্ল্যানিং এরিয়া’য় রেখে বিশেষ নজরদারি চালাতে বলেছিলেন। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী নিজে করোনা-আক্রান্ত এলাকাকে ‘রেড জ়োন’, ‘রেড স্টার’ জ়োন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, আগে যেখানে গড়ে প্রতিদিন ১০-১২টি করে নতুন সংক্রমণের খবর আসছিল, গত দু’দিনে সেই সংখ্যা গড়ে ২২-২৪ হয়েছে। তবে তাঁদের বক্তব্য, নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘যে সব এলাকায় ১৫ দিন আগেও একটা-দু’টো কেস আসছিল, সেখানে হুড়হুড় করে কেস বেরোতে শুরু করেছে। এ সব চেপে রাখার চেষ্টা করবেন না। উপসর্গ দেখা দিলে হাসপাতালে আসতে হবে।’’

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জেলাশাসক-পুলিশ সুপারদের বলেন, ‘‘দুটো অঞ্চল নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তা— হাওড়া এবং উত্তর ও মধ্য কলকাতার বেশ কয়েকটি অঞ্চল। এই সব এলাকায় কেউ বাড়ি থেকে বেরোতে পারবেন না। মেলামেশা বন্ধ করতে হবে। বাজারে পাঁচ জনের বেশি থাকবেন না। ১২টার মধ্যে সব বাজার বন্ধ করে দিতে হবে।’’

করোনা-চিত্র

• হাওড়া রেড জ়োন থেকে রেড স্টার
• উত্তর ও মধ্য কলকাতাও রেড জ়োন ঘোষিত
• উত্তর ২৪ পরগনা ও হুগলি নিয়ে চিন্তা
• গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমণের ৯০% হাওড়া, কলকাতায়
• নতুন সংক্রমণ ডায়মন্ড হারবার, মুর্শিদাবাদ, ডানকুনি, জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, দার্জিলিং
• আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, দুই দিনাজপুর, মালদহ, বীরভূম,
বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামে একটিও সংক্রমণ হয়নি
• মাস্ক পরে না-বেরোলে কোভিড আইনে মামলা

প্রতিরোধে আদর্শ পূর্ব মেদিনীপুর

• পূর্ব মেদিনীপুর রেড জোনে ছিল। এগরার বিয়েবাড়ি থেকে ছড়িয়েছিল সংক্রমণ। এখন লকডাউন এলাকায় নয়া সংক্রমণ নেই।
• সেখানে আগে থেকেই সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করে পরীক্ষা করা হয়
• রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়রান্টিনে বা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ফলে নতুন এলাকা থেকে সংক্রমণ হয়নি
• নজরদারিতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যেই সংক্রমণ সীমাবদ্ধ রয়েছে
• ১৪ দিন এমন চললে পূর্ব মেদিনীপুর অরেঞ্জ জোনে

(সূত্র: মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিবের বক্তব্য)

হাওড়া ও কলকাতার পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তাদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘হাওড়া এখন রেড-স্টার, কলকাতা রেড জ়োনে রয়েছে। ১৪ দিন সময় দিলাম। এই দুই এলাকাকে অরেঞ্জ জ়োনে (কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সংজ্ঞায় যে এলাকায় টানা ১৪ দিন নতুন সংক্রমণ নেই) আনতে হবে। হাওড়ার শিবপুর, মন্দিরতলা, ব্যাঁটরা, ধুলাগড়, মালিপাঁচঘরা, বেলুড় প্রভৃতি জায়গায় টোটাল লকডাউন হবে। স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ বাড়ি বাড়ি ঢুকে কাজ করবেন। মানুষকে সহযোগিতা করতে হবে।’’ হাওড়ার জেলাশাসক মুক্তা আর্য এবং পুলিশ কমিশনার কুণাল অগ্রবালকে কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। একই নির্দেশ দেন কলকাতার পুর কমিশনার খলিল আহমেদ এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাকেও। উত্তর ২৪ পরগনা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখতে এগরাই মডেল, আরও বেশি কোয়রান্টিনে জোর মুখ্যমন্ত্রীর

জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘ডেঙ্গি, সোয়াইন ফ্লু, করোনা, সব ক্ষেত্রেই উত্তর ২৪ পরগনার নাম কেন? রেড জ়োন থেকে অরেঞ্জে আসতে হবে। তার পর দ্রুত গ্রিন জ়োনে (কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সংজ্ঞায় টানা ২৮ দিন নতুন সংক্রমণ না-হলে গ্রিন)।’’ তিনি জানান, হুগলিতে এখনও পাঁচটি ‘করোনা অ্যাক্টিভ কেস’ রয়েছে। কোন্নগর, ডানকুনি, শেওড়াফুলি, রিষড়া, মাহেশ-সহ কয়েকটি এলাকা নিয়ে জেলাশাসককে সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ বৈঠকে জানান, পূর্ব মেদিনীপুর রেড জ়োনে ছিল। পরে সেখানে সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করে পরীক্ষা করানো হয়েছে। রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়রান্টিনে বা হাসপাতালে রাখা হয়েছে। ফলে নজরদারিতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যেই সংক্রমণ সীমাবদ্ধ রয়েছে। ১৪ দিন এমন চললে পূর্ব মেদিনীপুর অরেঞ্জ জ়োনে পরিণত হবে। এ ভাবে অন্য জেলাকেও কাজ করতে হবে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে ফোন করে লকডাউনের মধ্যেই আজ বিয়ে করবেন ওঁরা!

রাজ্যের যেখানেই বাসিন্দাদের জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টের উপসর্গ দেখা দেবে, তাঁদের ‘সারি (সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস) হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন মুখ্যসচিব। স্বাস্থ্য সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদে জ্বর-শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বেশি। সেখানকার জেলাশাসককে সতর্ক করে মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা কম হলেও, জ্বর-শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীর ইতিহাস রয়েছে।’’ মালদহকেও একই ভাবে সতর্ক করেন তিনি।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Coronavirus COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE