Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

করোনা-বন্দিত্বে প্রাপ্তি পরিকাঠামো

পরিকাঠামো বৃদ্ধির দু’টি মূল লক্ষ্য ছিল সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং মৃত্যু ঠেকানো।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:২৯
Share: Save:

স্বাস্থ্য পরিকাঠামো প্রাপ্তি। তবে মৃত্যুর হার হল সান্ত্বনা পুরস্কার মাত্র। বঙ্গে কোভিডের আগমনের ষান্মাসিক রিপোর্ট কার্ডে উন্নতির জায়গা প্রচুর রয়েছে বলে মনে করছেন করোনা-যুদ্ধে সামিল চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞরা।

সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৪ মার্চ দেশ জুড়ে একুশ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ধাপে ধাপে তার মেয়াদ বেড়ে জুনে শুরু হয় আনলক-পর্ব। করোনার মোকাবিলায় লক-আনলক কৌশলের মূল্যায়নে নেমে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর মানোন্নয়নকে প্রাপ্তি হিসাবে দেখছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, সারা দেশের মতো এ রাজ্যেও সিসিইউ-আইসিইউ-অক্সিজেন শয্যার সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ‘নবজাতক’ কোভিড হাসপাতালগুলিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। কোভিডকে কেন্দ্র করে রাজ্যের ল্যাবরেটরি পরিকাঠামোরও সমৃদ্ধি ঘটেছে।

এই পরিকাঠামো বৃদ্ধির দু’টি মূল লক্ষ্য ছিল সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং মৃত্যু ঠেকানো। বঙ্গে এখন গড় মৃত্যুর হার ১.৯ শতাংশের ঘরে রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘লকডাউন-পর্বকে কাজে লাগিয়ে করোনা সম্পর্কে ধারণা অর্জন হল প্রাপ্তি। ক্ষতি হল এতগুলি মৃত্যু।’’

সরকারি পরিধির বাইরে করোনা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকদের বক্তব্য, রাজ্যের মৃত্যুর হারের পরিসংখ্যান সন্তোষজনক হলেও স্বস্তিদায়ক নয়। ইএসআই জোকার কমিউনিটি মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় জানান, পরিকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিদিন মোট আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে মৃত্যু কমেছে। কিন্তু গুরুতর অসুস্থদের মৃত্যুর সংখ্যা কমেনি। আক্রান্ত চিকিৎসকদের মধ্যে মৃত্যুর হার কেন বেশি, তারও উত্তর মেলেনি। এই প্রশ্নে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, গত ৩ অগস্ট এ রাজ্যে চব্বিশ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধশতকের গণ্ডি অতিক্রম করেছিল। পরবর্তী দু’মাসে ষাটের ঘরেই আটকে রয়েছে একদিনে করোনায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান।

কার্ডিওথোরাসিক সার্জন কুণাল সরকার জানান, সংক্রমণের গোড়ায় ভাইরাসের যে দাপট ছিল তা এখন নেই। কিন্তু স্বাস্থ্য প্রশাসনের কৃতিত্ব খুব একটা নেই। যে কোনও অসুখে ২ শতাংশের কাছাকাছি মৃত্যুর হার কম নয়। সংক্রমণের ১৮০ দিন পরে এ রাজ্যে নমুনা পরীক্ষার পরিসংখ্যানে হতাশ করোনা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, অগস্টের প্রথম সপ্তাহে (৬ অগস্ট) চব্বিশ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা পঁচিশ হাজারের গণ্ডি পেরিয়েছিল। তখন রাজ্যে ল্যাবরেটরির সংখ্যা ছিল ৫৬টি। বুধবার স্বাস্থ্য দফতরের করোনা বুলেটিন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এখন রাজ্যে করোনা পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে এমন ল্যাবরেটরির সংখ্যা ৭৮। ২২টি ল্যাব বাড়লেও প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দ্বিগুণ করা সম্ভব হয়নি! দেড় মাস পরও গড়ে পঁয়তাল্লিশ হাজারের আশপাশেই আটকে রয়েছে নমুনা পরীক্ষার সূচক। কুণালবাবুর কথায়, ‘‘এ রাজ্যে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যায় বৃদ্ধি না ঘটিয়ে যেভাবে কেস পজ়িটিভির হার সাড়ে সাত শতাংশের ঘরে আটকে রয়েছে তা উদ্বেগজনক। ইচ্ছাকৃত ভাবে নমুনা পরীক্ষার নিরিখে আক্রান্তের সংখ্যা যে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে তা স্পষ্ট। আমরা জানিই না উপসর্গহীন আক্রান্তেরা কোথায়? পুজোর মুখে এই তথ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে।’’

বস্তুত, পুজোর পরে আচমকা সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না স্বাস্থ্য ভবনে শীর্ষ কর্তারাও। তবে নমুনা পরীক্ষায় আরও বৃদ্ধি নিয়ে ভিন্ন মত দফতরের কর্তাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal Health Death Covid-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE