Advertisement
০২ মে ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

বাড়ির রোগীর চিকিৎসায় নয়া বিধি, প্রশিক্ষণ

রাজ্যে করোনা-আক্রান্তের ৭৮ শতাংশই ‘হোম আইসোলেশনে’ অর্থাৎ বাড়িতে আছেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২০ ০৪:২৫
Share: Save:

রাজ্যে মোট ২০০ সেফ হোম রয়েছে এবং তারা হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত, তাদের তত্ত্বাবধানে আছেন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা। তা সত্ত্বেও সেফ হোমের ১১,৫০০ শয্যার মধ্যে ৯৭% খালি!

অথচ রাজ্যে করোনা-আক্রান্তের ৭৮ শতাংশই ‘হোম আইসোলেশনে’ অর্থাৎ বাড়িতে আছেন। মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণে এই বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর-সহ রাজ্য প্রশাসন উদ্বিগ্ন। বাড়িবন্দি রোগীরা যাতে ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে থাকেন, তা নিশ্চিত করতে মঙ্গলবার আইএমএ বা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। বাড়িবন্দি রোগীদের জন্য নতুন একটি চিকিৎসা বিধি তৈরি করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান, সোমবার পর্যন্ত রাজ্যে ৩৭,১৯০ জন অ্যাক্টিভ রোগীর মধ্যে ২৯,১১৭ জন (৭৮.২২%) বাড়িতে চিকিৎসাধীন। আক্রান্তের রেখচিত্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়িবন্দি রোগী বাড়লেও সেফ হোমের ক্ষেত্রে তা নিম্নমুখী। গত ২২ অক্টোবর মোট অ্যাক্টিভ রোগীর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৯.৫৭%। বাড়িবন্দি এবং সেফ হোমে ছিলেন যথাক্রমে ৭৭.০৪% এবং ৩.৩৮%। সোমবার পর্যন্ত রাজ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী কমে হয়েছে ১৮.৯৮%। সেফ হোমে আছেন ২.৭২%, বাড়িতে ৭৮.২২%!

আরও পড়ুন: কালীপুজোতেও হাইকোর্ট দেখাতে হবে কি বাঙালিকে

এক প্রশাসনিক শীর্ষ কর্তা জানান, সময়ে হাসপাতালে না-পাঠানোয় প্রাণসংশয় বাড়ছে। করোনায় মৃতদের মধ্যে ৩০ শতাংশেরই মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তির তিন-চার দিনের মধ্যে। ‘‘করোনার অন্যতম চিকিৎসা হল অক্সিজেন থেরাপি। বাড়িতে থেকে তা সম্ভব নয়। হোম আইসোলেশনের সব সুযোগ-সুবিধাও সকলের বাড়িতে নেই,’’ বলেন ওই কর্তা। তাঁর বক্তব্যেরই প্রতিফলন ঘটেছে স্বাস্থ্য দফতরের এ দিনের পদক্ষেপে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সমস্যার মোকাবিলায় সপ্তমীতে করোনা নিয়ন্ত্রণে যুক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে এসএসকেএমে বৈঠক করেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। আইএমএ-র রাজ্য শাখার সাহায্যে বাড়িবন্দি বিপুল সংখ্যক রোগীকে কী ভাবে চিকিৎসা পরিষেবার আওতায় আনা যায়, সেই বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয় সেই বৈঠকে। এই প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ভবনে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের সঙ্গে এ দিন বৈঠক করেন আইএমএ-র রাজ্য শাখার প্রতিনিধিরা।

আরও পড়ুন: উৎসবের কারণে পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়েছে: কেন্দ্র

পরে আইএমএ-র রাজ্য শাখার সম্পাদক শান্তনু সেন বলেন, ‘‘হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীদের চিকিৎসায় পারিবারিক ও পাড়ার ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আইএমএ বাংলার সঙ্গে যৌথ ভাবে এ কাজ করবে রাজ্য। হাসপাতালে দেরিতে ভর্তির দরুন বহু রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। তা আটকানোই লক্ষ্য।’’ যে-সব জেলায় (কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি) সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সব চেয়ে উদ্বেগজনক, কাল, বৃহস্পতিবার সেখানকার আইএমএ সভাপতি-সম্পাদক, পুর প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করবে স্বাস্থ্য ভবন। শনিবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে জেলার আইএমএ-সদস্য চিকিৎসকদের।

হোম আইসোলেশনের রোগীদের কথা ভেবেই তো টেলি-মেডিসিন চালু হয়েছিল। তার পরেও এই ধরনের পদক্ষেপের প্রয়োজন কী? স্বাস্থ্য দফতরের কিছু চিকিৎসক-কর্তার বক্তব্য, রোগীদের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে টেলি-মেডিসিন পরিষেবা খুব একটা কার্যকর নয়। তাই সমস্যার সমাধানে পুরসভা, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সহযোগিতায় পারিবারিক ও পাড়ার চিকিৎসকদের যুক্ত করা হচ্ছে।

আইএমএ বাংলার যুগ্ম সম্পাদক এবং রাজ্য করোনা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক জ্যোতির্ময় পাল বলেন, ‘‘বাড়িতে থাকা রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির প্রক্রিয়া সুনিশ্চিত করার সঙ্গেই ন্যূনতম পরীক্ষানিরীক্ষার সুযোগ থাকাও জরুরি। তাই স্থানীয় পুর হাসপাতালগুলিকেও এই কাজে যুক্ত করার কথা ভাবা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE