Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

কোটা থেকে ফিরে এলেন সেই পড়ুয়ারা

বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বুধবার রাজস্থানের কোটা থেকে জেলার পড়ুয়াদের নিয়ে রওনা দেয় বাস।

ফাইল-চিত্র

ফাইল-চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২০ ০১:১৪
Share: Save:

ঘরবন্দি সারা দেশ। এমন দুর্দিনে বাড়ি থেকে সুদূর রাজস্থানের কোটায় আটকে থাকা জেলার ছেলেমেয়েরা ঘরে ফেরার জন্য অধীর হয়ে উঠেছিলেন। তাঁদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন অভিভাবকেরাও। অবশেষে রাজ্য সরকারের পাঠানো বাসে শুক্রবার ঘরে ফেরায় স্বস্তি মিলল। তবে জেলা প্রশাসন তাদের জানিয়েছে, ঘরে তাঁরা যেন একলা থাকেন। সতর্ক করা হয়েছে তাঁদের পরিবারের লোকজনকেও।

শনিবার বাঁকুড়ার জেলাশাসক এস অরুণপ্রসাদ ও পুরুলিয়া জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “কোটা থেকে ফেরা পড়ুয়াদের হোম কোয়রান্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মীরা পড়ুয়াদের শারীরিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখবেন।”

বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বুধবার রাজস্থানের কোটা থেকে জেলার পড়ুয়াদের নিয়ে রওনা দেয় বাস। শুক্রবার মোট ৬৪ জন পড়ুয়াকে জেলায় ফিরিয়ে আনা হয়। বাঁকুড়া শহর লাগোয়া ধলডাঙা এলাকায় তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা করে নিজ নিজ এলাকার সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে পাঠানো হয়। ধলডাঙায় জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও বাঁকুড়া মেডিক্যালের চিকিৎসক দল উপস্থিত ছিলেন। কোটা থেকে ফেরা পড়ুয়াদের প্রাথমিক ভাবে শারীরিক পরীক্ষা ও লালারস সংগ্রহ করেন তাঁরা।

বাঁকুড়ার জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামল সোরেন এ দিন বলেন, “৬৪ জন পড়ুয়ার মধ্যে ৪৪ জনের লালারস সংগ্রহ করা হয়েছে করোনা পরীক্ষার জন্য। ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করা লালারস মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এখনও পাইনি।” তিনি জানান, জেলায় ফেরা কোনও পড়ুয়ার মধ্যেই জ্বর, ঠান্ডা লাগা বা করোনার উপসর্গ নেই। বাঁকুড়ার জেলা পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “কোটা থেকে আসা সকল পড়ুয়াকে রাতেই তাঁদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি।”

শুক্রবার অনেক রাতে পুরুলিয়ায় ফেরেন ৫৮ জন পড়ুয়া। তাঁদের পুরুলিয়া শহরের উপকন্ঠে হাতোয়াড়াতে দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নবনির্মিত ক্যাম্পাসে ‘রুটিন’ কিছু শারীরিক পরীক্ষার পরে, শনিবার ভোরে সবাইকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। তাঁদের ফুল-মিষ্টি দিয়ে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সৌমেন বেলথরিয়া, অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মুফতি শামিম সওকত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পিনাকী দত্ত প্রমুখ।

কোটায় আটকে থাকা পড়ুয়ারা ঘরে ফেরায় স্বস্তি ফিরেছে তাঁদের পরিবারে। বাঁকুড়া শহরের যুবক কৌস্তুভ পাল কোটায় ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়েছিলেন। তাঁর বাবা দেবাশিস পাল বলেন, “ছেলেকে ঘরে আসায় চিন্তার পাথর নামল বুক থেকে। প্রশাসনের নির্দেশে ওকে একটা আলাদা ঘরে থাকার ব্যবস্থা করেছি। আমরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি ১৪ দিন নিজেদের ঘরবন্দি করে রাখব।”

কোটা থেকে ফেরা বলরামপুরের এক যুবকের কথায়, ‘‘লকডাউনের পর থেকে খুব কষ্টে ছিলাম। খাবারের মান দিন-দিন খারাপ হচ্ছিল। কবে বাড়ি ফিরতে পারব, কত দিন ধরে ‘লকডাউন’ চলবে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। শুধু দিন গুনছিলাম। বাড়ি ফিরে শান্তি ফিরে পেলাম।’’ আদ্রার এক পড়ুয়ার কথায়, ‘‘হস্টেলে বন্দিজীবন কাটছিল। কিছুই ভাল লাগছিল না।’’

বাঁকুড়ার যুবক অনুব্রত সরকার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রশিক্ষণ নিতে কোটায় গিয়েছিলেন। তাঁরা এক সঙ্গে ৬৫ জন পড়ুয়া হস্টেলে থাকতেন। তিনি বলেন, ‘‘লকডাউন শুরু হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই ৬০ জন বাড়ি ফিরে যান। শুধু পশ্চিমবঙ্গের দু’জন ও বিহারের তিন জন হস্টেলে আটকেছিলাম। খুব কষ্টে ছিলাম। পাঁচ জনে নিজেদের সমস্যা ভাগাভাগি করে নিতাম। এখনও বিহারের তিন জন আটকে। ওঁদের জন্য খারাপ লাগছে। আমি চাই, ওঁরাও যেন দ্রুত বাড়ি ফেরেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown Kota
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE