Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অন্য ছবি, দিনভর সচল হাসপাতাল

হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রাইভেট চেম্বার যেহেতু বন্ধ থাকায় এ দিন জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তির সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

সচল: চিকিৎসার আশায়। রামপুরহােট। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

সচল: চিকিৎসার আশায়। রামপুরহােট। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৯ ০২:২৬
Share: Save:

সহকর্মীদের প্রতি সহমর্মিতা রয়েছে। একই সঙ্গে রয়েছে কর্তব্যবোধ। গোটা রাজ্যে অনেক সরকারি হাসপাতালে যখন চিকিৎসা পরিষেবা কার্যত স্তব্ধ, তখন কর্তব্যের টানে দিনভর পরিষেবা চালু রাখলেন রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। ব্যক্তিগত চেম্বার তাঁরা বন্ধ রেখেছেন প্রতিবাদেই। কিন্তু, হাসপাতালের কর্তব্যে অবহেলা করেননি। চিকিৎসকদের বক্তব্য, প্রতিবাদ জানাবেন ঠিকই। কিন্তু, রোগী ফেরাতে পারবেন না।

এনআরএস হাসপাতালে সোমবার রাতে জুনিয়র ডাক্তারদের মারধরের প্রতিবাদে বুধবার রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত ছিল। কিন্তু, মঙ্গলবারের পরে বুধবারও রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অন্য দিনের মতোই সমস্ত পরিষেবা চালু ছিল। হাসপাতালের বহির্বিভাগ এবং জরুরি বিভাগে পরিষেবা চালু ছিল। বহির্বিভাগে জেনারেল মেডিসিন, মেডিসিন, অর্থোপেডিক, সার্জারি, গাইনি, দাঁত, বক্ষ, চর্ম, চোখ, নাক-কান-গলার মতো সব বিভাগে সকাল থেকেই পরিষেবা পেয়েছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা। হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, বহির্বিভাগ থেকে বুধবার ৭৫৬ জন নতুন রোগীর টিকিট দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিন্টেডেন্ট ও ভাইস প্রিন্সিপাল (এমএসভিপি) সুজয় মিস্ত্রি জানান, হাসপাতালে স্বাভাবিক পরিষেবা চালু ছিল। জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তির সংখ্যাও অন্যান্য দিনের মতো ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘এই হাসপাতালে শুধু বীরভূম থেকে নয়, পড়শি মুর্শিদাবাদ ও ঝাড়খণ্ডের একটা অংশ থেকেও রোজ অনেক রোগী আসেন। হাসপাতালের চিকিৎসকদের রোগী পরিষেবা চালু রাখার অনুরোধ করা হয়েছিল। তাঁরা সেটা চালু রেখেছেন।’’

এ দিন সকালে গিয়ে দেখা গেল, হাসপাতালের সুপার স্পেশ্যালিটি ভবনের বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টারের সামনে মহিলা ও পুরুষ নতুন রোগীদের লম্বা লাইন। নির্দিষ্ট সময়ে টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট দেওয়া শুরু হয়। রোগীরা একে একে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের দোতলায় পরিষেবা নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট বিভাগে চলে যান। সেখানে সকাল দশটা থেকে সমস্ত বিভাগের চিকিৎসকেরা রোগী দেখা শুরুও করেন। কর্মরত চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘এনআরএসে আমাদের জুনিয়রেরা মার খেয়েছে। এক জনের আঘাত খুবই গুরুতর। ওদের জন্য খারাপ লাগছে বলেই আমরা প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ রেখেছি। কিন্তু, মানবিকতার খাতিরে হাসপাতালে আসা রোগীদের যাবতীয় পরিষেবা দেওয়া হয়েছে।’’

হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রাইভেট চেম্বার যেহেতু বন্ধ থাকায় এ দিন জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তির সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসক না পেয়ে জরুরি বিভাগে আসা তারাপীঠ থানার সন্ধ্যাজোল এলাকার এক রোগী বলেন, ‘‘পেটে ব্যথায় দীর্ঘদিন ভুগছি। প্রাইভেটে দেখাচ্ছিলাম। হঠাৎ মঙ্গলবার রাত থেকে পেট ব্যথা বাড়ে। রামপুরহাটে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানতে পারি চেম্বার বন্ধ। তাই জরুরি বিভাগে দেখালাম।’’

ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রামপুরহাট শাখার সম্পাদক দেবব্রত দাসের কথায়, ‘‘রোগীদের স্বার্থেই রামপুরহাট মেডিক্যালের চিকিৎসকেরা পরিষেবা বন্ধ রাখেননি।’’ তিনি জানান, সমস্ত চিকিৎসক মিলিত হয়ে বৈঠক করেছেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুনিয়র ডাক্তারদের মারধরের ঘটনায় দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি এবং রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসচিবকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE