বেহাল: কালো ছিট ধরা চাল। আমতার কুরিট গ্রামে। ছবি: সুব্রত মণ্ডল
ধান আছে। ভিতরে চাল নেই!
কোথাও ধান শুকিয়ে কালো। শিসটুকুও নেই!
কত ধানে কত চাল, তার একটা হিসেব থাকে চাষিদের। কিন্তু ধান কাটতে গিয়ে হিসেব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
বৃষ্টির ঘাটতি ছিল। তার জেরে সেচখালে পর্যাপ্ত জল মেলেনি। আবার ডিজেলের দামবৃদ্ধি-সহ সামগ্রিক ভাবে সেচের ব্যয়বৃদ্ধি— এই ত্র্যহস্পর্শে আমন নিয়ে চিন্তার ভাঁজ ক্রমশ চওড়া হচ্ছে ‘শস্যগোলা’ পূর্ব বর্ধমান-সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলার চাষিদের।
পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের চাষি শ্যামল চৌধুরী মোট ন’বিঘা জমিতে ধান বুনেছিলেন। সাধারণত ৭৫-৮০ কুইন্টাল ফলন হয়। তাঁর আশঙ্কা, ৫৫ কুইন্টালের বেশি ধান মিলবে না। আউশগ্রামের মুশিয়ার রহমান মল্লিকও জানিয়েছেন, তাঁর ধানের ফলন ২৫ শতাংশ কমেছে।
রাজ্যের আর এক ধান উৎপাদক জেলা হুগলি। বৃষ্টি কম হওয়ায় এখানকার ধনেখালির ভাস্তারা গ্রামের মন্টু কোলে সেচের জলের দিকে তাকিয়েছিলেন। কিন্তু ডিভিসি খালে জল কম। ফলে, শুধুমাত্র খালের কাছাকাছি জমিতে জল দিতে পেরেছেন। মন্টুবাবু বলেন, ‘‘গত বার বিঘেপ্রতি সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। এ বার সাড়ে আট হাজার টাকা। মনে হচ্ছে প্রতি বিঘেতে অন্তত সাড়ে তিন হাজার টাকা লোকসান হবে।’’
চাষিদের ছ্যাঁকা লেগেছে ডিজেলের দামেও। নদিয়ার মুরুটিয়ার নফরউদ্দিন শেখের ক্ষোভ, “পাঁচ বিঘা জমিতে চাষ করেছিলাম। ডিজেলের দাম এত চড়া যে সব জমিতে সেচ দিতে পারিনি। ফলে, দু’বিঘা জমির ধান নষ্ট। শিস বের হয়নি।’’
চাষিদের একই রকম হাহাকার শোনা গিয়েছে মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, বীরভূম এবং উত্তরবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহতেও। ধান কাটা এখনও পুরো শেষ না-হওয়ায় ফলন নিয়ে প্রশাসনিক তথ্য এখনও মেলেনি। তবে ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসনগুলিও।
কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বৃষ্টির ঘাটতির জন্য সেচের জলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু ডিজেলের দাম বাধ সেধেছে।’’ তবে পূর্ব বর্ধমানের যে সমস্যা রয়েছে, তা বীরভূম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদের বেশিরভাগ জায়গায় নেই। মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের দাবি, ‘‘শেষ মুহূর্তে পূর্ব বর্ধমান-সহ বিভিন্ন জেলায় আপৎকালীন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। ডালশস্য-সহ বিকল্প চাষ বাড়ানোর জন্য এখন থেকে উদ্যোগী হয়েছি আমরা।’’
পূর্ব বর্ধমান জেলা কৃষি দফতরের হিসেবে, এখানে বৃষ্টির ঘাটতি ছিল ৪৫০ মিলিমিটার। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় জেলা জুড়ে সাব-মার্সিবলের সংযোগ কাটা হয়। পরে সাব-মার্সিবলের সংযোগ দেওয়া হয়। তবে, শেষবেলার এমন উদ্যোগে পরিস্থিতি পুরোটা সামাল দেওয়া যায়নি বলে চাষিদের দাবি।
অন্য কয়েকটি জেলার চাষিরা জানান, সেচখাল, পুকুর, নদী বা অন্য কোনও জলাশয় থেকে জল আনতে পাম্পসেট চালাতে হয়েছে। সে জন্য গত বারের চেয়ে ঘণ্টায় কমপক্ষে ১৫-১৮ টাকা বেশি খরচ হয়েছে। বেড়েছে কীটনাশকের দাম। কিন্তু সব করেও ফলন নেই। আক্ষেপ তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy