Advertisement
১১ মে ২০২৪

সর্বাধিক ভোটে নুসরতের জয়ের মূলে বাম সমর্থনও

লোকসভা ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ইছামতীর পাড়ের এই আসনে ধর্মীয় মেরুকরণ ছিল স্পষ্ট।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৯ ০৩:৪২
Share: Save:

সাতে সাত হয়েছে। শুধু যে জয় সুনিশ্চিত হয়েছে তা-ই নয়, ব্যবধানও বেড়েছে। যা রাজ্যে শাসক দলের জয়ীদের মধ্যে সর্বোচ্চ। কেন্দ্র বসিরহাট। তৃণমূলের হাতেই ছিল। তবে এ বার সেখানে প্রার্থী ছিলেন নবাগতা নুসরত জহান রুহি।

লোকসভা ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ইছামতীর পাড়ের এই আসনে ধর্মীয় মেরুকরণ ছিল স্পষ্ট। সেই মেরুকরণের ফসলই ঘরে তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বাম ভোট যখন হুহু করে রামের ঝুড়ি ভরেছে, সেই সময়ে বসিরহাটের পরিসংখ্যান ভিন্ন কথা বলছে। ওখানে বাম ভোট গিয়েছে তৃণমূলেই।

মেরুকরণের ফলেই যে ওখানে ব্যবধান এক লাফে কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে, তা কার্যত স্বীকার করে নিচ্ছেন তৃণমূল ও বিজেপি দু’দলের নেতারাই। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, ‘‘মানুষ ভোট দিয়েছেন। অন্য জায়গার মতো বাম ভোট বিজেপিতে যায়নি।’’ আর বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী সায়ন্তন বসুর মতে, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম, তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটে ভাগ বসাবে সিপিআই এবং কংগ্রেস। বাস্তবে তা হয়নি। সেই জন্যই ওখানে ব্যবধান এত বড় হয়েছে।’’

২০১৪ সালে বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী ইদ্রিস আলির ঝুলিতে গিয়েছিল ৩৮.৬৫ শতাংশ ভোট। তা ধরে রেখে এ বার তৃণমূলের ভোট বেড়েছে আরও ১৫.৯১ শতাংশ। নুসরত পেয়েছেন ৫৪.৫৬ শতাংশ ভোট। অথচ ২০১৪ সালের তুলনায় বামেদের ভোট কমেছে ২৫.২১ শতাংশ। ২০১৪ সালে বিজেপির ভোট ছিল ১৮.৩৬ শতাংশ। এ বার তা বেড়ে হয়েছে ৩০.১২ শতাংশ। অর্থাৎ ১১.৭৬ শতাংশ। তবে কংগ্রেস প্রায় একই ভাবে ভোট ধরে রাখতে পেরেছে। এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, বসিরহাটে বামেদের ভোট কার্যত বিভাজিত হয়েছে। তাতে সুবিধা পেয়েছে তৃণমূল। তাঁদের মতে, ওখানে হিন্দুত্বকে ঠেকাতে তৃণমূলকেই বেছে নিয়েছিলেন বসিরহাটের ভোটারেরা। সেই জন্যই বঙ্গেও যখন নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে ভোটবাক্স ভরিয়েছেন ভোটদাতারা, সেই সময়ে সব হিসেব পিছনে ফেলে সেখান থেকে ৩,৫০,৩৬৯ ব্যবধানে জিতেছেন নুসরত। যিনি নির্বাচন কমিশনে জমা পড়া তথ্য অনুযায়ী সম্ভবত রাজ্যের কনিষ্ঠতম সাংসদ। তিনি ভোট পেয়েছেন ৭,৮২,০৭৮টি। নুসরতের প্রতিপক্ষ বিজেপির সায়ন্তন ভোট পেয়েছেন ৪,৩১,৭০৯টি।

হাড়োয়া, মিনাখাঁ, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, বসিরহাট দক্ষিণ, বসিরহাট উত্তর এবং বাদুড়িয়া— সব বিধানসভা আসনেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। একদা বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভার উপনির্বাচনে জিতেছিলেন বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য। এ বার সেখানেও বিজেপির থেকে ১৪ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে রয়েছে রাজ্যের শাসক শিবির। বাদুড়িয়ার বিধায়ক কংগ্রেস প্রার্থী কাজি আব্দুল রহিম। সেখানে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে তিনি তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। হাড়োয়ায় ৯৭ হাজারের বেশি ভোটে বিজেপিকে পিছনে ফেলেছে তৃণমূল। মিনাখাঁয় সেই ব্যবধান ৬৬ হাজারের বেশি। বসিরহাট উত্তরে এ বার

তৃণমূল এবং বিজেপির ভোটের ফারাক প্রায় ৮৩ হাজার। জেতার পরে মাঝরাতে বসিরহাটে পৌঁছে শংসাপত্র নেন নুসরত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE