Advertisement
০৪ মে ২০২৪

রাজ্যপালের কল্যাণ তহবিলের টাকা চিকিৎসার জন্য নয়, এ বার বললেন ধনখড়

একান্ত সাক্ষাৎকারে রাজ্যপাল আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, বীরেন জে শাহ রাজ্যপাল থাকাকালীন ওই কল্যাণ তহবিল গড়া হয়েছিল।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:০০
Share: Save:

রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ-অনুযোগের বিরাম নেই। এ বার স্বাস্থ্য নিয়েও রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতের পথে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ২০০৪ সালের ২৯ জুন রাজ্যপালের অধীনে যে-ওয়েলফেয়ার বা কল্যাণ তহবিল গড়া হয়েছিল, তা থেকে সাধারণের চিকিৎসা খাতে তিনি টাকা দেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন ধনখড়।

একান্ত সাক্ষাৎকারে রাজ্যপাল আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, বীরেন জে শাহ রাজ্যপাল থাকাকালীন ওই কল্যাণ তহবিল গড়া হয়েছিল। সেখানে বলা আছে: স্বামীহারা মহিলা, প্রাক্তন সেনাকর্মী, বয়স্ক ও সহায়সম্বলহীন অনাথ, পরিবার থেকে পরিত্যক্ত— এমন সব মানুষকে সাহায্য করার কাজে এই তহবিল ব্যবহার করতে হবে। ধনখড়ের প্রশ্ন, ‘‘সার্বিক শিক্ষার খাতে, পরিবেশ রক্ষার খাতেও ওই টাকা খরচ করার কথা। তা না-করে ব্যক্তি-মানুষের চিকিৎসা খাতে খরচ হবে কেন?’’

কিন্তু অসংখ্য মানুষ যে চিকিৎসার প্রয়োজনে সাহায্যের আবেদন করে রেখেছেন? তাঁরাও তো দাবিদার? এর জবাব দিতে গিয়েই রাজ্যপাল স্বাস্থ্যের হাল নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিঁধেছেন। কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে যোগ না-দেওয়ায় রাজ্যের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ভাবতে পারেন, তিন মাসে তিন হাজার মানুষ শুধু চিকিৎসার জন্য টাকা চাইছেন! এতে তো রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল ছবিটাই ফুটে উঠছে। এক দিকে রাজ্য বলছে, সকলকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা দেওয়া হবে। কিন্তু আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ ওই খাতে দিল্লি থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা পেতে পারত পশ্চিমবঙ্গ। সামান্য টাকার জন্য যাঁরা আমার কাছে আবেদন করেছেন, তাঁরা অনায়াসে সেই টাকা পেয়ে যেতেন।’’

আরও পড়ুন: ‘ডেকে কৈফিয়ৎ চান’, ধনখড়কে নিয়ে অমিতকে বলল তৃণমূল, সংসদেও তোলার প্রস্তুতি

কিন্তু কল্যাণ তহবিলের টাকা তো রাজ্যের বাজেট থেকে আসে? সাধারণ মানুষ তা পাবেন না কেন?

রাজ্যপালের জবাব, ‘‘তহবিলটা তো রাজ্যপালের নিয়ন্ত্রণে। রাজ্য যদি কাল ওই টাকা বন্ধ করে দেয়, দিক। কিন্তু আমি এই টাকা চিকিৎসার জন্য দেব না।’’ তাঁর যুক্তি, রাজ্যপালের এই তহবিলে রয়েছে মাত্র দু’‌কোটি টাকা। তিন হাজার আবেদনকারীকে সেটা দিতে হলে বড়জোর ৬-৭ হাজার টাকা পড়বে প্রত্যেকের ভাগে। ফলে ওই টাকায় কোনও লাভ হবে না।

প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, কল্যাণ তহবিলের টাকা চিকিৎসা খাতে না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত রাজ্যপাল যদি নিয়েই থাকেন, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেটা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে না কেন? জানিয়ে দিলে মানুষের হয়রানি কমে।

আরও পড়ুন: ‘ডেকে কৈফিয়ৎ চান’, ধনখড়কে নিয়ে অমিতকে বলল তৃণমূল, সংসদেও তোলার প্রস্তুতি

টালিগঞ্জের অসীম দাসের ছেলে দেবাদিত্য, বেহালার বাসিন্দা ৫৫ বছরের পরিমল পোদ্দারের চিকিৎসার জন্য টাকা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। কয়েক মাস ধরে সেই সব আবেদন পড়ে রয়েছে রাজভবনে। পরিমলের ছেলে হীরক বললেন, ‘‘বাবার চিকিৎসার জন্য ওই টাকার খুব প্রয়োজন। পেলে খুব সুবিধা হত।’’

নবান্ন সূত্রের খবর, ১৫ বছর ধরে চিকিৎসার জন্য ওই তহবিলের টাকা পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তার জন্য রাজ্য বাজেটে আলাদা করে টাকা মঞ্জুর করা হয়। যাঁদের এই টাকার প্রয়োজন, তাঁদের হয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিয়মিত রাজভবন ও নবান্নে তহবিলের টাকার জন্য আবেদন পাঠানোর কাজ করে। সেই সংস্থার প্রতিনিধি অনিন্দ্যশঙ্কর মজুমদারের অভিযোগ, ধনখড় রাজভবনে আসার আগে থেকেই এই টাকা দেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গত মার্চে সম্ভবত শেষ বার কাউকে এই তহবিল থেকে টাকা দেওয়া হয়েছিল। তখন রাজ্যপাল ছিলেন কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। তার পর থেকে বন্ধ। ধনখড় দায়িত্ব নেন ২৯ জুন। রাজভবন সূত্রের খবর, সম্প্রতি বিষয়টি ধনখড়ের কানে তোলা হলে তিনি এই তহবিল সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র চেয়ে পাঠান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jagdeep Dhankhar Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE