Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
CPM

মগজ ধোলাই রুখতে বাম, কংগ্রেস কোমর বেঁধেছে

আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন। হাতিয়ার সামাজিক মাধ্যমও। কৌশলটা কী সিপিএম-সহ গোটা বাম শিবিরই এখন সামাজিক মাধ্যম ও ডিজিটাল প্রচারে প্রবল সক্রিয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:১১
Share: Save:

এখনও সঙ্গে মোবাইল ফোন রাখেন না। প্রয়োজনে কাছে থাকা সঙ্গী বা সহকর্মীর মোবাইলই ভরসা। সেই বিমান বসুকেই এখন দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে লাইভ বক্তৃতায়! সময়ের দাবি এবং ডিজিটাল যুদ্ধেও সূচ্যগ্র মেদিনী ছেড়ে না দেওয়ার তাগিদ বিমানবাবুদের দিয়ে এই ভার্চুয়াল কর্তব্য সাধন করিয়ে নিচ্ছে।

সিপিএম-সহ গোটা বাম শিবিরই এখন সামাজিক মাধ্যম ও ডিজিটাল প্রচারে প্রবল সক্রিয়। প্রথম দিকে যা ছিল অনেকটাই স্বেচ্ছা-সক্রিয়তার উপরে নির্ভরশীল, এখন তা দলের ধারা-বাঁধা দায়িত্বে পরিণত। পরিস্থির মোড় এমনই যে, সিপিএমের পার্টি চিঠিতে ইদানীং কালে লিখে দেওয়া হচ্ছে এরিয়া কমিটি বা শাখা স্তরে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে কাজের সমন্বয় বাড়ানোর কথা। একই ছবি কংগ্রেসেও। সর্বভারতীয় স্তরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম-সহ সামাজিক মাধ্যমে জাতীয় ও রাজ্য রাজনীতির নানা প্রশ্নে নিবিড় ভাবে নিজেদের বক্তব্য জানান দিয়ে চলেছেন কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা।

তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন যেমন বলেছে‌ন, একই সুরে সিপিএম ও কংগ্রেস নেতারাও একমত যে বিজেপির ডিজিটাল প্রচারের উপকরণ ও তার নেপথ্যে অর্থবল আরও কার সঙ্গে তুলনীয় নয়। এই কারণেই বাম ও কংগ্রেসের ডিজিটাল কর্মকাণ্ডের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে গেরুয়া শিবিরের ‘ভুয়ো দাবি’র মোকাবিলা করা। আর বাকিটা নিজেদের বক্তব্য, কর্মসূচি সামাজিক মাধ্যমে যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। তেলঙ্গানার জনজাতিদের উৎসবে সীতারাম ইয়েচুরির ছবিকে মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়া বা সিপিএমের বাংলা মুখপত্রে প্রকাশিত চিনা সেনাবাহিনীর বক্তব্যকে সিপিএমেরই বক্তব্য বলে চালিয়ে দিয়ে ময়দানে নেমে পড়া— সাম্প্রতিক কালে একাধিক ঘটনায় বিজেপির আইটি সেলের ‘কৃতিত্ব’ দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে বাম নেতাদের! তাঁরা তাই সর্বদাই সচেষ্ট বিজেপির বক্তব্য ডিজিটাল ময়দানে পড়া মাত্রই তার পাল্টা আক্রমণে চলে যেতে। ইয়েচুরির কথায়, ‘‘মানুষের কাছে পৌঁছতে সামাজিক মাধ্যম এখন বড় হাতিয়ার। তবে একই সঙ্গে আমরা ডিজিটাল মাধ্যমের নামে মানুষের মধ্যে ভাগাভাগিরও বিরুদ্ধে।’’

নজরে নেট-বাহিনী

বিজেপি

• রাজ্য স্তরে: ১৫

• জেলা স্তরে: ৩৮টি সাংগঠনিক জেলায় ৭৬ জন

• বিধানসভা স্তরে: প্রতি কেন্দ্রে ১১ করে ৩২৩৪ জন

• ব্লক স্তরে: প্রতি ব্লকে (মণ্ডল) ২ জন করে ১২০০ মণ্ডলে ২৪০০। প্রতি বুথে ২ জন

• হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ: সারা রাজ্যে ৪০ হাজার

• প্রতি গ্রুপ সদস্য: গড়ে ১৫০ জন

• হোয়াটসঅ্যাপের আওতায়: অন্তত ৬০ লক্ষ

কাজ

• দিনে ৫-১২টি পর্যন্ত ‘কনটেন্ট’ রাজ্য থেকে বুথ পর্যন্ত ছড়ান প্রত্যেক কর্মী। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্যরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে কনটেন্ট ছড়ান।

তৃণমূল

• রাজ্য স্তরে: ১৫ জন

• জেলাস্তরে: কমবেশি ২৫ জন

• বিধানসভা স্তরে: বিধানসভা পিছু এক জন

কাজ

• বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারের দায়িত্ব ভাগ করা আছে। দলের ও দলের মাধ্যমে প্রশাসনিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে পেশাদার কর্মীরা ভিডিয়ো তৈরি করেন। তবে তৃণমূলের সব স্তরে সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারের পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণ প্রায় পুরোটাই ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের দলের হাতে। তাই পেশাদারি গোপনীয়তার কারণে দলের অনেক নেতা-কর্মীর কাছেও প্রচারের নকশা সম্পর্কিত বিশদ তথ্য নেই।

সিপিএম

• রাজ্য স্তরে: ১২ জন। ডিজিটাল মাধ্যমে সড়গড় অনেকে প্রচারের উপকরণ জোগান দেন, তাঁরা সকলে দলের প্রত্যক্ষ কর্মী নন।

• জেলা স্তরে: ২২টি জেলার প্রতিটিতে সোশ্যাল মিডিয়া ইউনিটের দায়িত্বে এক জন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। ৪-৫টি জেলায় ডিজিটাল প্রচার একেবারে নিচু তলা অবধি প্রসারিত। বাকিগুলিতে এরিয়া কমিটি পর্যন্ত।

• স্বেচ্ছাসেবক: রাজ্যে এক লক্ষ সোশ্যাল মিডিয়া স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছে সিপিএম। এখন সংখ্যাটা প্রায় ৭০ হাজার।

কাজ

• প্রচারের কাজ ভাগ করা রয়েছে। কেউ গ্রাফিক করেন, কেউ পোস্টারের নকশা করেন, কেউ ফেসবুক-টুইটারে দলের অফিশিয়াল অ্যাকাউন্টগুলি দেখেন, কেউ ভিডিয়ো এডিটিং।

কংগ্রেস

• রাজ্য স্তরে: ১ জন চেয়ারপার্সন, তিন জন কো-অর্ডিনেটর

• জেলা স্তরে: জেলা কমিটির মাথায় কো-অর্ডিনেটর

• বিধানসভা স্তরে: কেন্দ্র ভিত্তিক কো-অর্ডিনেটর

• কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক: প্রায় ৬০ হাজার

কাজ

• লেখা, ছবি এডিটিং, ভিডিয়ো এডিটিং, সাবটাইটেল তৈরি, ভয়েস ওভার দেওয়া।

• সংগঠন, রিসার্চ ও কনটেন্ট তৈরি, ডেটা অ্যানালিটিক্স, ট্রেনিং— কাজের এই চারটি ভাগ রাজ্য স্তরে।

• জেলা, বিধানসভা ও বুথ স্তরে কর্মীদের ফেসবুক, টুইটারে প্রচার ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ চালাতে হয়।

করোনা-কালে রাস্তায় নেমে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ছেদ পড়েছে অনেকটাই। এই অবসরে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বেশি ভরসা রাখতে হচ্ছে সব দলকেই। আর এরই সঙ্গে বিজেপি এবং রাজ্যে তৃণমূলকে মোকাবিলার তাগিদে বাম ও কংগ্রেস নেট-যুদ্ধে কোমর বেঁধে নেমেছে। দু’দলের নেতাদেরই চেষ্টা, বিপক্ষের প্রচারের জবাব দিতে গিয়ে নিজেদের পরম্পরা ও কর্মসূচিকে আরও বেশি মানুষের সামনে এনে দেওয়া। বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা যেমন সাম্প্রতিক কালে স্বাধীনতা আন্দোলনকে জড়িয়ে নানা দাবি করেছেন। সিপিএম তার পাল্টা দিতে গিয়ে স্বাধীনতার মাস অগস্টে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের বীর সেনানীদের তালিকা সামাজিক মাধ্যমে এনে দেখানোর চেষ্টা করেছে, তাঁদের মধ্যে কত জনের সঙ্গে কমিউনিস্ট মতাদর্শের যোগ ছিল। আবার বিজেপির ধারাবাহিক ‘অপপ্রচারে’র মোকাবিলায় কংগ্রেস শুরু করেছে ধারাবাহিক ডিজিটাল এপিসোড ‘ধরোহর’, রাজ্যে যা বাংলায় অনূদিত হয়ে দেখানো হচ্ছে এ দেশে কংগ্রেসের ঐতিহ্য বলতে আসলে কী বোঝায়।

আরও পড়ুন: পাহাড় চুড়ো খুইয়ে যুদ্ধের হুমকি চিনের, ফের গুলি নিয়ন্ত্রণরেখায়

ডিজিটাল ও সামাজিক মাধ্যমের কাজকর্ম চালানোর জন্য সাংগঠনিক কাঠামোও এখন তৈরি হয়েছে বাম ও কংগ্রেস শিবিরে। সিপিএমের রাজ্য স্তরে এই সংক্রান্ত বিভাগের আহ্বায়ক এখন মহম্মদ সেলিম। জেলায় জেলায় কমিটি আছে। আরও নিচু তলা পর্যন্ত বহু কর্মী-সমর্থক প্রচারের বিষয় তৈরি করে দেন, যাঁদের বলা হয় স্বেচ্ছাসেবক। কংগ্রেসেও আছে স্বেচ্ছাসেবকের বাহিনী। কংগ্রেসে আবার কমিউনিকেশন এবং সোশ্যাল মিডিয়া সেল নামে দু’টো বিভাগ আছে। প্রথম বিভাগ সব মাধ্যমের পাশাপাশি ডিজিটাল মাধ্যমের জন্যও বিষয়বস্তু তৈরি করে, সর্বভারতীয় স্তরে রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার নেতৃত্বে রাজ্য কংগ্রেসে তার দায়িত্বে অমিতাভ চক্রবর্তী। আর জাতীয় স্তরে রোহন গুপ্তের তত্ত্বাবধানে সোশ্যাল মিডিয়া সেলের প্রদেশ শাখার চেয়ারপার্সন মিতা চক্রবর্তী, পাশাপাশি কো-অর্ডিনেটর হিসেবে মূল দায়িত্ব সামলান অশোক ভট্টাচার্য ও শুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়। অমিতাভবাবুর মতে, ‘‘বিশেষত, তরুণ প্রজন্মের নজর কাড়তে ডিজিটাল মাধ্যম এখন উপযোগী। আমরা চেষ্টা করি, ভূরি ভূরি মিথ্যা প্রচারের মাঝে আসল তথ্যটা তুলে ধরতে।’’

আরও পড়ুন: টানা বাড়ছে সুস্থতা, রাজ্যের করোনা চিত্রে স্বস্তির রেখা সংক্রমণের হারেও

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Congress Social Media TMC BJP IT Cell
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE