Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রঙ্গচিত্র-ছড়া বাড়ন্ত, আক্ষেপে শিল্পীরা

লোকসভা, বিধানসভা বা পঞ্চায়েত নির্বাচন— একটা সময় ছিল সব ধরনের ভোটের প্রচারের দেওয়াল লিখনে দেখা মিলত এমনই সব রাজনৈতিক কটাক্ষ-ছড়া। শালীনতার মধ্যে থেকে সমান তালে আঁকা হতো বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের রঙ্গচিত্রও। এ জন্য রীতোমতো শিল্পী ‘ভাড়া’ করা হতো।

তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারীর ছবি এঁকে ভোট-প্রচার। হলদিয়ায়। নিজস্ব চিত্র

তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারীর ছবি এঁকে ভোট-প্রচার। হলদিয়ায়। নিজস্ব চিত্র

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯ ০৮:২৩
Share: Save:

‘যেখানেই মমতা সেখানেই সততা’।

‘দিদির বাড়ি কালীঘাট, টাটা গেল গুজরাত’।

‘....হায় রে কী জ্বালা, সিপিএম শহর ছেড়ে পালা’।

লোকসভা, বিধানসভা বা পঞ্চায়েত নির্বাচন— একটা সময় ছিল সব ধরনের ভোটের প্রচারের দেওয়াল লিখনে দেখা মিলত এমনই সব রাজনৈতিক কটাক্ষ-ছড়া। শালীনতার মধ্যে থেকে সমান তালে আঁকা হতো বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের রঙ্গচিত্রও। এ জন্য রীতোমতো শিল্পী ‘ভাড়া’ করা হতো। এমনও শিল্পী ছিলেন, যাঁদের এমন ধরনের দেওয়াল লিখেই দিন গুজরান হতো। কিন্তু বর্তমানে ওই সব শিল্পীদের আয়ের ভাড়ারে টান পড়েছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় যুগে রাজনৈতিক দেওয়াল লিখনের চাহিদা কমেছে। আর দেওয়ালে কার্যত প্রায় দেখাই মেলে না রাজনৈতিক রঙ্গচিত্র বা কটাক্ষ-ছড়ার।

গত ১৫ বছর ধরে দেওয়ালে লিখছেন তমলুকের শিল্পী ইন্দ্রজিৎ রায়চৌধুরী। ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘‘ভোটে দেওয়াল লিখনের রেওয়াজ অনেকদিনের। আমি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের হয়ে দেওয়াল লিখনের কাজ করি। এবারও দেওয়াল লিখনের কাজ শুরু করেছি। তবে আগের চেয়ে ক্রমশ দেওয়াল লিখনের প্রবণতা কমেছে।’’ ইন্দ্রজিতের কথায়, ‘‘দেওয়াল লিখনে আগে প্রার্থীর নাম লেখা, প্রতীক আঁকার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ছড়া ও রঙ্গচিত্র আঁকা হতো। শ্লেষের মাধ্যমে মানুষ সুস্থ বিনোদনের সুযোগ পেতেন। কিন্ত এখন ছড়া ও রঙ্গচিত্র আঁকার প্রবণতা কমেছে। আমাদেরও ডাক পড়ছে না আগের মত।’’ নন্দকুমারের শিল্পী বরুণ ধাড়া বলেন, ‘‘ভোট এলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাক পড়ে দেওয়াল লিখনের জন্য। এবারও কয়েক জায়গা থেকে ডাক পেয়েছি। তবে তা আগের থেকে অনেক কম। দেওয়াল লিখনে রঙ্গচিত্র আঁকার সুযোগ পেলে শিল্পী হিসাবে খুবই ভাল লাগত।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক শশাঙ্কশেখর মেট্যার আবার নেশা দেওয়াল লিখন। বাবা সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সেই সুবাদে শশাঙ্ক ছোটবেলা থেকে দেওয়াল লিখছেন। দেওয়াল লিখনে রঙ্গচিত্র আঁকা-ছড়া লেখার প্রবণতা কমার কারণ প্রসঙ্গে শশাঙ্কের বক্তব্য, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারের সুযোগ নিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলি। ফেসবুকের দেওয়ালে নানা ছড়া ও রঙ্গচিত্র আঁকা হচ্ছে। কম্পিউটারের মাধ্যমে এগুলি আঁকা, লেখাও সহজ। দেওয়াল লিখনে খরচও বেশি।’’

তাহলে কি এই দেওয়াল-যুদ্ধে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে? এ নিয়ে বিজেপি’র তমলুক জেলা সভাপতি প্রদীপ দাস বলেন, “দেওয়াল লিখনের জন্য পেশাদার শিল্পীদের ডাকা হচ্ছে না ঠিক। এখনও পর্যন্ত তমলুক বিধানসভা এলাকায় আমাদের যে ৪৫টি দেওয়াল লিখন হয়েছে, তা দলের কর্মীরাই করেছেন। আসলে দেওয়াল লিখনের জন্য বাড়ি মালিকের অনুমতি নেওয়া থেকে নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। তাই দেওয়াল লিখনে বেশি আগ্রহ দেখানোও হচ্ছে না।’’

রাস্তার দেওয়ালের থেকে তাই ফেসবুকের দেওয়ালেরই জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Wall Writing Artist Flex
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE