Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল শেষ দফার ভোটেও

সপ্তম দফার নির্বাচন শেষে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) আরিজ আফতাব বলেছেন, ‘‘বিক্ষিপ্ত কিছু অভিযোগ ছাড়া ভোট হয়েছে মোটের উপরে শান্তিপূর্ণ।’’

ছত্রভঙ্গ: কাঁকিনাড়ায় বোমা পড়ার পরে। রবিবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

ছত্রভঙ্গ: কাঁকিনাড়ায় বোমা পড়ার পরে। রবিবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৯ ০২:০৩
Share: Save:

কলকাতা এবং পাশের দুই ২৪ পরগনায় লোকসভা ভোট থাকল প্রায় রক্তপাতহীন। তবে দিনভর বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট এবং ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগে সরগরম হল সপ্তম ও শেষ দফার নির্বাচন।

লোকসভা ভোটের সঙ্গে বিধানসভার উপনির্বাচন ছিল চার কেন্দ্রে। উত্তরবঙ্গের তিন কেন্দ্রের মধ্যে একমাত্র ইসলামপুরে বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ভাটপাড়ার উপনির্বাচন উত্তপ্ত হল বিজেপি এবং তৃণমূলের সংঘর্ষে। কাঁকিনাড়ার কাঁটাপুকুরে রবিবার দুপুরে বোমা পড়ল মুড়ি-মুড়কির মতো। তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্রকে ঘিরে বিক্ষোভ সামলাতে লাঠি চালাতে হল পুলিশকে, আবার বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ হল পুলিশের। বোমাবাজির পরে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে অর্জুনকেও। উল্টে দিয়ে ভাঙচুর চালানো হয় পুলিশের দু’টি গাড়িতেও। দিনের শেষে ভাটপাড়ায় ভোট পড়েছে ৬৮%।

সপ্তম দফার নির্বাচন শেষে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) আরিজ আফতাব বলেছেন, ‘‘বিক্ষিপ্ত কিছু অভিযোগ ছাড়া ভোট হয়েছে মোটের উপরে শান্তিপূর্ণ।’’ দক্ষিণ কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভোট দিয়ে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘সকাল থেকে বিজেপি যে ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে অত্যাচার করিয়েছে, তা আগে কখনও দেখিনি। অভূতপূর্ব এবং অসাংবিধানিক!’’ বিরোধীরা অবশ্য ভোটে দখলদারি ও গোলমালের জন্য শাসক দল তৃণমূলের দিকেই আঙুল তুলেছে। তাদের দুই প্রার্থী অনুপম হাজরা ও নীলাঞ্জন রায়ের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে বিজেপির অভিযোগ।

নির্বাচন কমিশনের হিসেবে, বিকাল ৫টা পর্যন্ত রাজ্যের ৯টি লোকসভা আসনে গড়ে ভোট পড়েছে ৭২.৯১%। তার মধ্যে মথুরাপুরে ভোটের হার সর্বাধিক ৭৮.৫২%। সব চেয়ে কম কলকাতা উত্তরে—৬১.১৮%। মোট ৩৪৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ভাটপাড়ার গোলমালে গ্রেফতার করা হয়েছে ১৮ জনকে। প্রিসাইডিং অফিসারকে সরানো হয়েছে তিন জায়গায়। চারটি গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, তার মধ্যে তিনটিই পুলিশের। অন্য দিকে, দত্তপুকুরের এক যুবক এ দিন ঠানে থেকে মুম্বই হয়ে কলকাতা বিমানবন্দরে নামলে তাঁর কাছ থেকে নগদ ১ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা উদ্ধার হয়। কোথা থেকে টাকা এল, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের ফলতা ও বজবজ এলাকার বহু বুথ, যাদবপুর কেন্দ্রের বেশ কিছু এলাকা, জয়নগরের কিছু এলাকা, কলকাতা উত্তরের মধ্যে বেলেঘাটা, বেলগাছিয়া, শিয়ালদহ-সহ কিছু এলাকায় তৃণমূল বাহিনীর বিরুদ্ধে বুথ দখল বা ভোট দিয়ে দেওয়ার অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা। বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায়ের অভিযোগ, ‘‘সারা দিন জনগণ বনাম তৃণমূল বাহিনীর লড়াই মানুষ দেখেছেন। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ভোট আটকানোর চেষ্টা করেছে তৃণমূল। কেন্দ্রীয় বাহিনীকেও বোমা ছুড়েছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাস মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী আরও অন্তত ৭ দিন থাকুক, এই দাবি আমরা কমিশনের কাছে করব।’’

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, ‘‘শেষ দফায় ভোট ছিনিয়ে নেওয়ার সব রকম চেষ্টা হবে বলে কমিশনকে বারংবার আগাম জানানো সত্ত্বেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিশেষ করে, এ দিন ডায়মন্ড হারবার, কলকাতা উত্তর, বসিরহাটে ব্যাপক বুথ দখলের চেষ্টা হয়েছে। এর মধ্যেও জনগণ সাহসের সঙ্গে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন, বুথ দখলের চেষ্টা কিছু ক্ষেত্রে প্রতিরোধও করেছেন। কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।’’

সিপিএমের অভিযোগ, যাদবপুর ও ডায়মন্ড হারবারে লাগাতার অভিযোগ জানিয়েও কমিশন বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর তেমন সাড়া মেলেনি। অথচ মথুরাপুরে অভিযোগ পেয়ে বাহিনী তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয় হয়েছে। এই প্রেক্ষিতেই সূর্যবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমরা লক্ষ্য করেছি, যাদবপুর, ডায়মন্ড হারবার বিজেপি তৃণমূলকে ছেড়ে দিয়েছে। বিনিময়ে মথুরাপুর তৃণমূল ছেড়ে দিয়েছিল বিজেপিকে।’’ কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দলের নেতৃত্বই অবশ্য এমন ‘গড়াপেটা’র অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেছেন, ‘‘শেষ দফাতেও বুথ দখল, ছাপ্পা, কারচুপির অভিযোগ এসেছে বিস্তর। কমিশনের ভূমিকায় আমরা খুশি নই। তবে অন্যান্য পর্বের তুলনায় তাদের ভূমিকা একটি স্বস্তিদায়ক ছিল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE