বক্তৃতায় মতুয়াদের উল্লেখ থাকলেও তাঁদের এসআইআর-উদ্বেগ কমানোর মতো কোনও বার্তা ছিল না। তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ফোন-ভাষণ শেষ হওয়ার পরে মতুয়া সমাজের অনেকে হতাশা নিয়েই নদিয়ার তাহেরপুরের মাঠ ছাড়েন। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক শিবিরে কাটাছেঁড়াও শুরু হয়ে গিয়েছিল পুরোদমে। যুবভারতী প্রসঙ্গেও তাঁর নীরবতা বিস্মিত করেছিল অনেককে। সন্ধ্যায় সেই সব না-বলা প্রসঙ্গ একে একে লিখে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করলেন মোদী। পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া সমাজের উদ্দেশে মোদী লিখলেন, ‘‘আমি প্রত্যেকটি মতুয়া ও নমশূদ্র পরিবারকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, আমরা সর্বদা তাঁদের সেবায় নিয়োজিত থাকব।’’ যুবভারতীকাণ্ড নিয়েও লিখিত আক্রমণ শানালেন তৃণমূলকে।
শনিবার বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে তাহেরপুরে মোদীর কর্মসূচি মিটে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে হেলিকপ্টার তাহেরপুরে নামতে না-পারায় কলকাতা বিমানবন্দরে ফিরে এসে ফোনে ভাষণ দেন মোদী। ১টা ৪৫ নাগাদ তাঁর ভাষণ শেষ হয়। কিন্তু তার পরে ঘণ্টা পাঁচেকও কাটল না। পশ্চিমবঙ্গের উদ্দেশে আরও কিছু বার্তা দিলেন তিনি। সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে এক্স হ্যান্ডলে একগুচ্ছ পোস্টের মাধ্যমে সে বার্তা এল, যার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী লিখলেন, ‘‘আরও কিছু বিষয় ছিল, যা আমি রানাঘাটে বলতাম, কিন্তু আবহাওয়ার কারণে আমি সশরীরে সভায় হাজির হতে পারিনি। এখানে একগুচ্ছ বিষয় নিয়ে আরও কিছু কথা জানাচ্ছি।’’
আরও পড়ুন:
-
৭৫ মিনিটের সভা সারতে হল ১৬ মিনিটে! এসআইআর নিয়ে মতুয়া-উদ্বেগে নীরব প্রধানমন্ত্রী, তবে ‘দাদা’ থেকে ‘বাবু’ বঙ্কিম
-
কুয়াশায় তাহেরপুর যাওয়া হল না, ফোনেই বক্তৃতা প্রধানমন্ত্রী মোদীর! পশ্চিমবঙ্গকে ‘মহাজঙ্গলরাজ’ থেকে মুক্ত করার ডাক
-
মোদীর সভায় যাওয়ার পথে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত তিন বিজেপি সমর্থকের বাড়িতে তৃণমূল নেতাদের পাঠালেন অভিষেক
প্রত্যেক মতুয়া এবং নমশূদ্র পরিবারকে পাশে থাকার ‘নিশ্চয়তা’ দেওয়ার পাশাপাশি মোদী লিখেছেন, ‘‘তাঁরা (মতুয়া ও নমশূদ্ররা) তৃণমূলের দয়ায় এখানে থাকছেন না। আমাদের সরকারের আনা সিএএ-র সৌজন্যে মর্যাদার সঙ্গে ভারতে বাস করা তাঁদের অধিকার। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকার শপথ নেওয়ার পরে আমরা মতুয়া এবং নমশূদ্র সমাজের জন্য আরও অনেক কিছু করব।’’ রাজ্য বিজেপির ব্যাখ্যা, প্রধানমন্ত্রী এই কথাগুলি তাহেরপুরে দাঁড়িয়েই বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সশরীরে সভায় পৌঁছোতে না-পারায় এবং পরবর্তী কর্মসূচির জন্য অসমের গুয়াহাটি রওনা হওয়ার কথা থাকায় প্রধানমন্ত্রীর হাতে সময়ও বেশি ছিল না। সময়াভাবে যে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তিনি বলতে পারেননি, সেগুলিই সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে জানালেন।
প্রধানমন্ত্রীর পোস্টে যুবভারতীতে লিয়োনেল মেসিকে নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠান ভেস্তে যাওয়ার প্রসঙ্গও এসেছে। মেসি বা যুবভারতী, কোনও শব্দই তিনি লেখেননি। তবে লিখেছেন, ‘‘তৃণমূলের সৌজন্যে পশ্চিমবঙ্গের মতো একটা ফুটবলপ্রেমী রাজ্যের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনাটি অজস্র ফুটবলপ্রেমী তরুণের মন ভেঙে দিয়েছে।’’
এ ছাড়া আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির (স্বাস্থ্যকেন্দ্র), পিএম-বিজেপি (কম দামে ওষুধ), আবাস যোজনা, জল জীবন মিশনের মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গকে কী কী দেওয়া হয়েছে, তার হিসাবও প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেছেন তাঁর পোস্টগুচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘বিজেপি সুশাসনে বিশ্বাস করে। কিন্তু তৃণমূল কাটমানি এবং কমিশন ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে ভাবিত নয়।’’