Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal News

কাল প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন মমতা, বিজেপির ঘোষণা দফায় দফায়, বাম-কং সমঝোতা এখনও ঝুলে

কালীঘাটে তৃণমূলের ওই বৈঠক শুরু হবে মঙ্গলবার দুপুর ১টা নাগাদ। ১২ জনের কমিটিকে বৈঠকটিতে ডেকেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডেকেছেন জেলা সভাপতিরদেরও। বৈঠকে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গেলে ওই দিন বিকেল সাড়ে তিনটেয় সাংবাদিক সম্মেলন করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। 

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯ ১৯:২৩
Share: Save:

ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেল। কিন্তু বাংলায় কোনও দলই এখনও প্রকাশ করল না প্রার্থী তালিকা। আগামিকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার বিকেলে কালীঘাটের দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠক রয়েছে। সেই বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলন করবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি দফা ধরে ধরে প্রার্থী ঘোষণা করতে পারে বলে খবর। বাম-কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা ঝুলে সমঝোতা সূত্রের অপেক্ষায়।

তৃণমূলের নির্বাচনী প্রস্তুতি এবং ব্যবস্থাপনা দেখভালের জন্য যে ১২ জনের কমিটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গড়ে দিয়েছিলেন, ৪২ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামের তালিকা সেই কমিটির হাতে এখন তৈরি। তবে তালিকা চূড়ান্ত নয়। কারণ বেশ কয়েকটি আসনের জন্য একাধিক নাম উঠে এসেছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। সে সব আসনের জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকাতেও চূড়ান্ত সিলমোহরটা তিনিই দেবেন এবং সেই সিলমোহর পড়বে ১২ মার্চের বৈঠকে।

কালীঘাটে তৃণমূলের ওই বৈঠক শুরু হবে মঙ্গলবার দুপুর ১টা নাগাদ। ১২ জনের কমিটিকে বৈঠকটিতে ডেকেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডেকেছেন জেলা সভাপতিরদেরও। বৈঠকে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গেলে ওই দিন বিকেল সাড়ে তিনটেয় সাংবাদিক সম্মেলন করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।

রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৪টি-ই গতবার গিয়েছিল তৃণমূলের দখলে। কিন্তু সেই ৩৪ সাংসদের প্রত্যেকেই যে এ বার টিকিট পাচ্ছেন, এমনটা ভাবার পরিস্থিতি আর নেই বলে তৃণমূলের অন্দরেই গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে। ২০১৪ সালে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় সেলিব্রিটিদের যে দাপট দেখা গিয়েছিল, এ বার তেমনটা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। রাজনৈতিক প্রার্থীর সংখ্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার বাড়াতে চাইছেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছিল আগেই। সেই নীতিই শেষ পর্যন্ত অনুসৃত হচ্ছে, ফলে বিদায়ী সাংসদদের বেশ কয়েকজন এ বার টিকিট পাচ্ছেন না বলে শোনা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: ভোটে হিংসা রুখতে কড়া কমিশন, গোটা রাজ্যে ৬০ হাজার অভিযুক্ত এখনও অধরা

২৫ ফেব্রুয়ারি নজরুল মঞ্চে তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, কয়েকটি আসনে দলের মুখ এ বার বদলাতে পারে। তবে দল কাউকে অসম্মান করবে না, যাঁরা টিকিট পাবেন না, তাঁদের সম্মানজনক পুনর্বাসনই যে হবে, সে ইঙ্গিতও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নজরুল মঞ্চ থেকেই দিয়েছিলেন।

রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের আসনগুলিতেই তৃণমূলের তালিকায় এ বার সবচেয়ে বেশি রদবদল থাকতে পারে বলে খবর। ওই অঞ্চলে অন্তত ৬টি আসনে তৃণমূলের তরফে এ বার নতুন প্রার্থী থাকবেন বলে খবর। তার মধ্যে বিষ্ণুপুর এবং এবং বোলপুর আসনও রয়েছে। ওই দুই আসন থেকে যাঁরা গত বার জিতেছিলেন তৃণমূলের টিকিটে, এখন তাঁদের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক আর নেই।

আরও পড়ুন: ইভিএম-এ প্রার্থীর ছবি, এ বার ভোটে নতুন আর কী কী চালু করল কমিশন

এ ছাড়া দক্ষিণবঙ্গের গোটা চারেক আসনে তৃণমূলের প্রার্থী বদল হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা রয়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে। বেশ কয়েকজন বিধায়ককে এ বার সংসদে যাওয়ার টিকিট দেওয়া হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, যে সাংসদরা গোটা মেয়াদটাই নিজেদের এলাকায় যথেষ্ট সময় দিয়েছেন এবং কাজ করেছেন, যাঁদের নিয়ে বড় কোনও বিতর্ক তৈরি হয়নি এবং দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণ যাঁদের জন্য খুব একটা নেতিবাচক নয়— তাঁরা প্রত্যেকেই টিকিট পেয়ে যাবেন এ বারও।

এ বারের নির্বাচনে বাংলায় তৃণমূলের মূল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারে যারা, সেই বিজেপি-র প্রার্থী তালিকা নিয়ে ধোঁয়াশা কিন্তু আরও বেশি। প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। তালিকার চেহারাটা কেমন হতে চলেছে, সে সম্পর্কে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের স্পষ্ট ধারণা নেই। রাজ্যের তরফ থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম সুপারিশ করার চেষ্টা হয়নি, এমন নয়। কিন্তু বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, কোনও সুপারিশের প্রয়োজন নেই, বিচার-বিশ্লেষণ করে দিল্লি সরাসরি সিদ্ধান্ত নেবে।

বিজেপি সূত্রের খবর— বাংলার প্রার্থী তালিকা এক বারে ঘোষিত হবে না। মঙ্গলবার বা বুধবার ঘোষিত হতে পারে আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার লোকসভা আসনের প্রার্থীর না। ওই দুই আসনে ভোট হবে প্রথম দফায়। তার পরে ধাপে ধাপে প্রত্যেকটি দফার জন্য প্রার্থীদের নাম ঘোষিত হতে পারে বলে খবর।

বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা কবে ঘোষিত হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কৌশলগত কারণে রায়গঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম বামেরা একটু আগেভাগেই ঘোষণা করে দিয়েছে। ওই দুই আসনে পাল্টা প্রার্থী দিলে জোট ভাঙার দায় কংগ্রেসের উপরেই যে পড়বে, সে কথা মাথায় রেখেই এই কৌশল নিয়েছিল বামেরা। কৌশল সফল। আর বেশি স্নায়ুর লড়াইয়ে না গিয়ে মুর্শিদাবাদ এবং রায়গঞ্জ আসন বামেদের ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারেই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছেন বলে খবর। তার বিনিময়ে বাংলায় অন্তত ১৭টি আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাবও পেশ করা হয়েছে কংগ্রেসের তরফ থেকে।

সিপিএম অবশ্য ১৭টি আসন কংগ্রেসকে ছাড়তে পুরোপুরি প্রস্তুত নয় এখনও। দু’তিনটি আসন নিয়ে দর কষাকষি বহাল। সিপিএমের বক্তব্য— বামফ্রন্টের শরিক দলগুলি এমনিতেই কংগ্রেসকে আসন ছাড়তে রাজি ছিল না। কিন্তু রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতার উপরে জোর দিয়ে শরিকদের রাজি করানো গিয়েছে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়ার ব্যাপারে। কিন্তু সিপিআই এবং আরএসপি নিজেদের ভাগের একটি করে করে আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দিতে রাজিও হয়েছে বলে খবর। যে সব আসনে সিপিএম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত, সে রকম বেশ কয়েকটি আসনও কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সংখ্যাটা সব মিলিয়ে ১৭ হওয়া কঠিন। ফরওয়ার্ড ব্লককে সমঝোতায় রাজি করানোও সিপিএমের পক্ষে কঠিন হচ্ছে। ফলে ফরওয়ার্ড ব্লকের ভাগে থাকা পুরুলিয়া আসনটি বামফ্রন্টের তরফ থেকে কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া নিয়েও কিছুটা জট তৈরি হয়েছে।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র আগেই জানিয়েছিলেন যে, বহরমপুর, জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ মালদহ, উত্তর মালদহ, রায়গঞ্জ এবং পুরুলিয়া— রাজ্যে এই ৭টি আসনেই কংগ্রেসের ভোট বেশি। তাই সমঝোতায় আসতে হলে এই আসনগুলি কংগ্রেসকে ছাড়তেই হবে। কিন্তু বামেদের অনড় অবস্থান দেখে শেষ পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ এবং রায়গঞ্জের উপর থেকে নিজেদের দাবি কংগ্রেস প্রত্যাহার করে নিতে পারে বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। এর পরে যদি পুরুলিয়াও কংগ্রেসকে ছাড়তে না পারে বামেরা, তা হলে পূর্ণাঙ্গ সমঝোতায় পৌঁছনো মুশকিল হতে পারে।

সমঝোতা বা আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হলেই বামেরা প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারে। ১৩ মার্চের মধ্যেই সে কাজটা সেরে ফেলতে চাইছে বামফ্রন্ট। আর কোন কোন আসনে কংগ্রেস লড়ছে, তা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রার্থীদের নামের বিষয়ে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রদেশ কংগ্রেস পাঠিয়ে দেবে দিল্লিতে। এ রাজ্যের কংগ্রেস প্রার্থীদের নাম ঘোষিত হবে দিল্লি থেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE