প্রতীকী ছবি।
উত্তর দিকে বিহার, পশ্চিম দিকে ঝাড়খণ্ড সীমানা আর পূর্ব দিকে অনেকটা এলাকাজুড়ে বাংলাদেশ সীমান্ত। বেআইনি অস্ত্রের কারবারের পাশাপাশি রয়েছে পাচারের প্রবণতা। ২০১৭ সালের বন্যার ক্ষতচিহ্ন এখনও বিদ্যমান অনেকাংশেই। কর্মসংস্থানের মারাত্মক অভাবে ভিন্ রাজ্যে যাওয়ার প্রবণতার সূচকও ঊর্ধ্বমুখী। এ সবের পাশাপাশি ভোটে আরও একাধিক ফ্যাক্টর নিয়ে জোর আলোচনা চলছে মালদহ উত্তর কেন্দ্রে।
মৌসমের দলবদল
দু’বার কংগ্রেসের টিকিটে এই আসন থেকেই সাংসদ হয়েছিলেন মৌসম নুর। জেলা কংগ্রেস সভাপতির কুর্সিতেও ছিলেন তিনিই। কিন্তু ২৮ জানুয়ারি নবান্নে গিয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। সে দিনই তাঁকে মালদহ উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু ভোটের মাত্র তিন মাসের মধ্যে মৌসম কি তৃণমূলের ঘরের মেয়ে হতে পেরেছেন? মমতা অবশ্য প্রচারে মৌসমকে ঘরের মেয়ে বলেই তকমা দিয়েছেন। কিন্তু দলীয় কর্মীরা কি তা মানছেন? কংগ্রেস কিন্তু মৌসমের দলবদলের কিসসাকে তুরুপের তাস করেছে। শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে জেলা নেতারাও মৌসমকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ তকমা দিতে কসুর করেনি। ফলে তাঁকে চাপে রেখেছে দলবদল।
খগেনের দলবদল
ছিলেন সিপিএমের তিন বারের বিধায়ক। ২০১৬ সালে রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের প্রবল হাওয়াও হবিবপুর আসনে খগেন মুর্মুকে টলাতে পারেনি। কিন্তু নির্বাচন ঘোষণার দিন কয়েক আগে দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন সিপিএমের এই কট্টর নেতা এবং মালদহ উত্তর আসনের টিকিটও হাসিল করে আসেন। নব্য এই দলীয় প্রার্থীকে ঘিরে চাপা অসন্তোষ দলের অন্দরে রয়েই গিয়েছে। সিপিএম তো বটেই কংগ্রেসও দলবদলের বিষয়টিকে প্রচারে এনে খগেনকে চাপে রেখেছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কোতোয়ালির ভাগাভাগি
মৌসম যে দিন তৃণমূলে যোগ দেন সে দিনই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র কোতোয়ালি পরিবারের সদস্য ইশা খান চৌধুরীকে পাল্টা মালদহ উত্তরের প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করেছিলেন। ফলে ভোটযুদ্ধে কোতোয়ালি পরিবারেরই দুই সদস্য এই আসনে মুখোমুখি। সম্পর্কের টানাপড়েনের বাইরেও মালদহের রাজনীতিতে কোতোয়ালি পরিবারের আলাদা জায়গা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে একই পরিবার থেকে দুই প্রার্থী দুই শিবিরের হয়ে যাওয়ায় সেই ভোট ভাগাভাগির মুখে।
গনি মিথ
বরকত আতাউর গনি খান চৌধুরী যখন লোকসভায় দাঁড়াতেন তখন বিশেষ করে, রতুয়া, মালদহ, চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর, হবিবপুর, মালতীপুর ও গাজল বিধানসভা এলাকায় গনি খানের প্রভাব বরাবরই ছিল ভোটবাক্সে। যার ফল পেতেন আর এক মিথ প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সিও। এ বারে গনি পরিবারের দুই সদস্য এই আসনে প্রার্থী হওয়ায় গনি-মিথ কার পালে কাজ করবে সেটাই দেখার।
আদিবাসী ভোট
মালদহ উত্তর আসনের অন্যতম ফ্যাক্টর আদিবাসী ভোট। হবিবপুর, বামনগোলা, গাজল, পুরাতন মালদহ, চাঁচল ২ এলাকায় ছড়িয়ে থাকা প্রায় ২১ শতাংশ আদিবাসী ভোট যে কারও ভাগ্য গড়ে দিতে পারে। গত লোকসভা ভোটে আদিবাসী ভোটের বেশির ভাগই সিপিএম কব্জা করেছিল বলেই প্রচার। পঞ্চায়েত ভোটেও আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপি ব্যাপক সাফল্য পায়। তার পর থেকেই তৃণমূল ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া প্রয়াস শুরু করে। কিন্তু ভোট শেষমেশ কার ঝুলিতে পড়ে সেটাই প্রশ্ন।
সংখ্যালঘু ভোট
মালদহ উত্তর আসনের অন্যতম নির্ণায়ক সংখ্যালঘু ভোট। পরিসংখ্যান বলছে, এই আসনে প্রায় ৪৬ শতাংশ ভোট বাসিন্দা সংখ্যালঘু। এর আগে প্রতিবারই সংখ্যালঘু ভোট কংগ্রেসের পালেই পড়ত। কিন্তু গত পঞ্চায়েত ভোটে সেই ভোটবাক্স বেশির ভাগটাই চলে যায় তৃণমূল শিবিরে। তবে এ বারে ভোট ভাগাভাগি হয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূলের পালে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিছুটা সিপিএমও পাবে। এ ছাড়া মতুয়া ও নমঃশূদ্র ভোট ভোট টানতেও সব পক্ষ মরিয়া।
সিপিএম ভোট
গত লোকসভা নির্বাচনে ২৭.৭৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল সিপিএম প্রার্থীর ঝুলিতে। আসন ছিল দ্বিতীয়। কিন্তু পঞ্চায়েতে সিপিএমের ফল তীব্র হতাশাজনক। কেউ তৃণমূলে, কেউ বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সিপিএম প্রার্থী বিশ্বনাথ ঘোষ কত ভোট টানছেন তার উপরেও নির্ভর করছে ভোটের অঙ্ক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy