—প্রতীকী ছবি।
কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন। কিন্তু বিক্রি হয়ে যান বিহারের যৌনপল্লিতে। ২৭ দিন পর ওই তরুণীকে মৃতপ্রায় অবস্থায় উদ্ধার করা হল চম্পারণের এক যৌনপল্লি থেকে।
বছর ২০-র ওই তরুণী মালদহের জলঙ্গার বাসিন্দা। বাবা-মা মারা গিয়েছেন। স্বামীও ছেড়ে গিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। মালদহ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গেলে তাঁকে কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে স্ত্রী রোগ বিভাগে রেফার করে দেওয়া হয়। বাড়িতে কেউ না থাকায় একাই কলকাতায় আসেন চিকিৎসা করাতে, ডিসেম্বরের এক তারিখে।
বাড়িতে কেউ না থাকায়, কলকাতায় এসে কী অবস্থায় আছেন তিনি, তার খোঁজ খবর কেউই নেননি। এ মাসের ১২ তারিখ একটি অজানা মোবাইল নম্বর থেকে তরুণীর ফোন পান তাঁর সৎ ভাই। ফোনে ওই তরুণী খালি বলতে পেরেছিলেন যে তাঁকে অপহরণ করে বিহারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। “আমাকে বাঁচাও”— তার পর এটুকুই সে দিন বলতে পেরেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: বেনামে লগ্নি? রোজভ্যালি-কাণ্ডে জড়াল পুলিশ কর্তার নাম
তরুণীর ভাই দিশেহারা হয়ে যোগাযোগ করেন বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে। সংগঠনের সম্পাদক তন্ময় ঘোষ বলেন, “আমরাও প্রথমে দিশেহারা ছিলাম। কারণ প্রথমে মালদহ থানায় গেলে সেখানে পুলিশ কোনও সহযোগিতা করেনি। তাঁরা তদন্তই করতে চায়নি। তারপর আমরা ডিজি, কলকাতা পুলিশের কমিশনার এবং মালদহের পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করি।”
ইতিমধ্যে আলাদা আলাদা আরও কয়েকটি নম্বর থেকে ওই তরুণী যোগাযোগ করেন পরিবারের সঙ্গে। কিন্তু পুলিশ কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায়, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি বিহারে যোগাযোগ করে অন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে। ওই তরুণীর দেওয়া তথ্যের সাহায্যে বিহারের ওই সংগঠনটি বিহারের পশ্চিম চম্পারণ জেলার বেতিয়ার নাগরিচকের একটি তিনতলা বাড়িতে হদিশ পায় ওই তরুণীর।
অভিযোগ, সেই তথ্য নিয়ে মালদহ পুলিশের কাছে গেলে তারা প্রথমে বিহারে গিয়ে ওই তরুণীকে উদ্ধার করতে অস্বীকার করে। তন্ময় অভিযোগ করেন, “অনেক অনুরোধের পর, এবং পুলিশের যাওয়া আসার সমস্ত খরচ আমরা দিতে রাজি হওয়ার পর, মালদা পুলিশ যেতে রাজি হয়।”
শাটারস্টক থেকে সংগৃহীত।—প্রতীকী চিত্র।
আরও পড়ুন: পাহাড় জুড়ে বরফ, কাঁপছে দার্জিলিং, কলকাতাতেও শীতলতম দিন
বৃহস্পতিবার রাতে ওই যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার করা হয় তরুণীকে। কিন্তু উদ্ধারের সময় প্রায় অচেতন অবস্থায় ছিলেন তিনি। উদ্ধারকাজে পুলিশের সঙ্গে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক প্রতিনিধি বলেন, বশ মানাতে শারীরিক নির্যাতন এবং ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের ফলেই তাঁর এই অবস্থা। কোনও কোনও দিন ১৪-১৫ জন ‘কাস্টমার’কেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁর কাছে।
কিন্তু কী ভাবে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল বিহারে? গুরুতর অসুস্থ তরুণীর থেকে এখনও বিস্তারিত কথা উদ্ধার করতে পারা যায়নি। তবে প্রাথমিক ভাবে ওই তরুণী বলতে পেরেছেন, হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় পাপ্পু নামে এক যুবকের। তরুণী কলকাতায় একটি থাকার জায়গা খুঁজছিলেন। কারণ তখনও তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হয়নি। ওই যুবকের ফাঁদেই পড়ে যান তিনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, তরুণী জানিয়েছেন— তাঁকে অপহরণ করে বিহারে নিয়ে গিয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকায় বেচে দেওয়া হয় এক যৌনপল্লিতে। সেই জায়গা বিহারের কোথায়, তা অবশ্য তিনি বলতে পারেননি। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় নেপাল সীমান্তের কাছে বেতিয়াতে। সেখানেই রাখা হয়েছিল তাঁকে। যৌনপল্লির এক গ্রাহকের সাহায্যে প্রথম তিনি ভাইকে ফোন করেন।
বৃহস্পতিবার তাঁকে উদ্ধার করার পর শুরু হয়ে যায় আইনি জটিলতা। বিহার পুলিশ মালদহ পুলিশকে বাধা দেয় ওই তরুণীকে নিয়ে আসতে। তাঁরা এফআইআর দেখতে চায়। এ দিকে অভিযোগ জানানোর পর মালদহ পুলিশ কোনও এফআইআর না করায়, তাঁরা তা দেখাতে পারেননি। মালদহ পুলিশ পাল্টা দায় কলকাতা পুলিশের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করে। কারণ তরুণী নিখোঁজ হয়েছিলেন কলকাতার ভবানীপুর থানা এলাকা থেকে। শেষ পর্যন্ত বিহারের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হস্তক্ষেপে বিহারের স্থানীয় থানায় এফআইআর করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার ওই তরুণীকে নিয়ে আসা হবে মালদহে। তন্ময়বাবুর অভিযোগ, পুলিশ সক্রিয় হলে আরও আগেই উদ্ধার করা সম্ভব হত। হয়ত আর একটু সুস্থ অবস্থায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy