ক্ষমতায় আসার মুহূর্ত থেকেই স্বাস্থ্য দফতর হাতে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন তিনি স্বাস্থ্য বিমায় রাজ্যের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের দাবি জানালেও তাঁর দফতরই কিছুটা সতর্ক। স্বাস্থ্যকর্তাদের অনেকেরই অভিমত, এতে আত্মতুষ্ট হওয়ার কোনও জায়গা নেই। বরং খামতির মোকাবিলা করাটা জরুরি।
মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বড়সড় সাফল্যের দাবি করছেন রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা (আরএসবিওয়াই)-কে সামনে রেখেই। তাঁর দাবি, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ এই প্রকল্পে অনেকটাই এগিয়ে গিয়ে নজির গড়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক এবং গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর সোশ্যাল প্রোটেকশন নামে জার্মানির একটি সংস্থাও এ ব্যাপারে রাজ্যের প্রশংসা করেছে বলে সোমবার ফেসবুকে জানান মমতা। সেই সঙ্গে তিনি জানান, জুনে বার্লিনে বিশ্ব ব্যাঙ্ক আয়োজিত সামাজিক বিমা ক্ষেত্র সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা অন্যান্য দেশের সামনে তুলে ধরার জন্য পশ্চিমবঙ্গকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ অন্যদের রাস্তা দেখানোর ট্র্যাডিশন বজায় রেখেছে।’’
খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই দাবিতে আত্মতুষ্ট হওয়ার কোনও কারণ দেখছেন না স্বাস্থ্যকর্তাদের একটি বড় অংশ। তাঁরা মনে করছেন, রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনাকে ঘিরে রাজ্য সরকারের আত্মতুষ্টি যথার্থও নয়। কারণ, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সরকারি হাসপাতালে ওই বিমাকে ঘিরে অসাধু চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, ওই সব চক্র ভাঙার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহলে এখনও তেমন কোনও উদ্যোগ নেই। ফলে সাফল্যের চাকা উল্টো দিকে ঘোরার আশঙ্কাও রয়েছে।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে রাজ্যের ৬০ লক্ষ পরিবার ওই বিমার আওতায় এসেছেন। গত এক বছরে চিকিৎসার খরচ বাবদ তিন লক্ষ ৩০ হাজার মানুষ প্রায় ২২৫ কোটি টাকা পেয়েছেন। ওই বিমা কার্ড থাকলে যে-কোনও পরিবার বছরে নির্দিষ্ট তালিকাভুক্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ‘ক্যাশলেস’ চিকিৎসার সুযোগ পাবে। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে রাজ্যের ১০৪৩টি হাসপাতাল এই যোজনার তালিকায় রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও একটি বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গকে এগিয়ে রেখেছেন। সারা দেশে একমাত্র বাংলাতেই পরিবারের প্রধান হিসেবে মহিলাদের চিহ্নিত করে তাঁদের নামে কার্ড হচ্ছে।
তা হলে সমস্যাটা কোথায়?
স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানান, কোথাও কোথাও সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে সেখান থেকে কমিশন আদায় করছেন। আবার কোথাও বা সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কিংবা নার্সিংহোম বিমা তালিকার আওতায় থাকা সত্ত্বেও সেখানকার ডাক্তারেরা রোগীদের কাছ থেকে চিকিৎসার খরচ বাবদ টাকা আদায় করছেন। শুধু ডাক্তার নন, অন্যান্য কর্মীও এর সঙ্গে জড়িত। ‘‘ওই সব চক্র ভাঙতে না-পারলে প্রকল্প অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়বে,’’ আশঙ্কা ওই শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তার।
স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, এ ছাড়াও এমন কিছু অবাঞ্ছিত কাজকর্ম চলছে, যা ওই বিমা ব্যবস্থার সাফল্যের দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যেমন, রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমার আওতায় থাকা রোগীদের প্রায়শই বাইরের দোকান থেকে নিজেদের খরচে ওষুধ কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। অথচ নিয়ম অনুযায়ী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর এই কার্ড থাকলে ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে কিংবা বাইরের যে-সব দোকানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের চুক্তি আছে, সেখান থেকে বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়ার কথা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই রোগীরা তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy