Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
mamata banerjee

বিধায়কদের ক্লাস নেওয়ার আগে প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে বৈঠক, আচরণবিধি বেঁধে দিলেন মমতা

কেউ নিজের এলাকায় বিরোধী দলের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াবেন না— বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বিধায়কদের এই বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যখন তখন সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলা যাবে না, আলটপকা মন্তব্য একেবারেই চলবে না— নির্দেশ দলনেত্রীর।

এ দিনের বৈঠকে তৃণমূল বিধায়কদের জন্য আচরণবিধি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

এ দিনের বৈঠকে তৃণমূল বিধায়কদের জন্য আচরণবিধি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৯ ২১:০১
Share: Save:

শহিদ দিবসের প্রস্তুতিকে সামনে রেখে দলের সব বিধায়ককে বৈঠকে ডাকলেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু শহিদ দিবস সংক্রান্ত আলোচনার চেয়েও বেশি প্রাধান্য পেল বিধায়কদের প্রতি দলনেত্রীর সতর্কবার্তা এবং আচরণবিধি সংক্রান্ত পরামর্শ। কেউ নিজের এলাকায় বিরোধী দলের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াবেন না— বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বিধায়কদের এই বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যখন তখন সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলা যাবে না, আলটপকা মন্তব্য একেবারেই চলবে না— নির্দেশ দলনেত্রীর।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ দিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন না বেহালা পূর্বের বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। মন্ত্রিত্ব এবং মেয়র পদ ছাড়ার পর থেকে দলের কোনও কর্মসূচিতেই যাচ্ছেন না শোভন। এ বার সেই তালিকায় সব্যসাচীর নামও জুড়ে গেল। বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও এ দিনের বৈঠকে গরহাজির ছিলেন।

ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরকে তৃণমূলের বৈঠকে দেখা যাচ্ছে ইদানীং। বৃহস্পতিবার বিধায়কদের নিয়ে যখন বৈঠকে বসবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তখন প্রশান্ত কিশোরও সঙ্গে থাকবেন— প্রথমে শোনা গিয়েছিল এমনই। কিন্তু তা হয়নি। বিধায়কদলের সঙ্গে নেত্রীর বৈঠক শুরু হওয়ার আগেই মমতার সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেন প্রশান্ত। ৩টে নাগাদ বিধায়কদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মমতা তৃণমূল ভবনে পৌঁছে যান দুপুর পৌনে দুটো নাগাদই। প্রথমে প্রায় এক ঘণ্টা প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তার পরে বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক শুরু হয় তৃণমূল চেয়ারপার্সনের।

আরও পড়ুন:নিম্নচাপ অক্ষরেখার জেরে পাহাড়ে আরও ৪ দিন প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা, জারি চূড়ান্ত সতর্কতা

জনসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দলকে আগেও দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধায়কদের এ দিন ফের সে কথা বলেন। জনসংযোগ বাড়ানোর জন্য তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বেশ কিছু কর্মসূচি স্থির করে দেবেন এবং প্রত্যেক বিধায়ককে নিজের নিজের এলাকায় সে সব কর্মসূচি সফল করতে হবে— বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। প্রত্যেক বিধানসভা কেন্দ্র থেকে চার জন করে কর্মীর নামও নেতৃত্বের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে বিধায়কদের। এঁদের মধ্যে দু’জনকে হতে হবে বুথ স্তরের কর্মী। বিধানসভা এলাকায় সাংগঠনিক কাজ যাঁরা দেখভাল করেন, তাঁদের মধ্যে এক জন এবং যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়া দেখভাল করেন, তাঁদের মধ্যে আর এক জনের নাম জমা দিতে বলা হয়েছে। সব বিধায়ককেই ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে এই নামের তালিকা জমা দিতে হবে। অর্থাৎ শুধু বিধায়ক বা ব্লক সভাপতিদের সঙ্গে নয়, একেবারে নীচের স্তরের কর্মীদের সঙ্গেও সমান্তরাল ভাবে এ বার থেকে যোগাযোগ রেখে চলবেন নেতৃত্ব— বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে এ দিনের বৈঠকে।

গোটা রাজ্য থেকে তৃণমূল ভবনে আসা জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে এ দিন নেত্রীর বার্তা— সাধারণ মানুষের সঙ্গে সহজ-সরল ভাবে মিশতে হবে, কোনও কারণেই জনগণের থেকে দূরে সরে থাকা চলবে না। ‘কাটমানি’ সংক্রান্ত অভিযোগ এবং আরও নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে তৃণমূলের কিছু নেতার বিরুদ্ধে যে রাজ্যের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ চলছে, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অজানা নয়। কিন্তু তার জেরে যদি নেতারা বা জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের গুটিয়ে নেন, তা হলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বিধায়কদের বলেন, ‘‘যদি কোনও ভুল করে থাকেন, তা হলে মানুষের মুখোমুখি হন, এড়িয়ে যাবেন না।’’

তবে রাজনৈতিক সংঘর্ষ বা উত্তেজনা থেকে অনেক দূরে থাকতে হবে— নেত্রীর সাফ বার্তা বিধায়কদের প্রতি। বিধায়করা যেন নিজেদের এলাকায় কোনও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে না জড়ান, কর্মীদেরও যেন জড়াতে না দেন— এ দিন সতর্ক করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খবর তৃণমূল ভবন সূত্রের।

আরও পড়ুন:উত্তরবঙ্গে লাগাতার বৃষ্টি, ধসে বন্যা পরিস্থিতি, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সিকিম-ডুয়ার্সে

সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলার উপরেও অলিখিত বিধিনিষেধ আরোপ হয়ে গিয়েছে এ দিনের বৈঠকে। চাইলেই যেখানে সেখানে মিডিয়াকে কোনও বিবৃতি দিয়ে দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে, বিধায়কদের বলেছেন নেত্রী। আলটপকা বা বেফাঁস মন্তব্য করা একেবারেই চলবে না, হুঁশিয়ারি দলের চেয়ারপার্সনের।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও একটি নির্দেশ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। রাজ্য বা দেশের বাইরে যেতে হলে, এমনকি নিজের এলাকা ছেড়ে বাইরে যেতে হলে দল ও প্রশাসনকে জানিয়ে যেতে হবে— বৈঠকে মমতা এই রকম নির্দেশ দিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। এ রকম নির্দেশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেও দিয়েছেন। নিজের নিজের এলাকায় জনপ্রতিনিধিরা কতটা সময় দিচ্ছেন, সে দিকে নজর রাখতেই এই নির্দেশ তিনি দিয়ে থাকেন বলে দলের একটি অংশের মত। এ দিনও তিনি বলেছেন যে, বার বার কলকাতায় আসার দরকার নেই, এলাকায় বেশি করে সময় দিতে হবে। কিন্তু এলাকার বাইরে বা রাজ্যের বাইরে যেতে হলে দলের পাশাপাশি প্রশাসনকেও জানাতে হবে বলে যে নির্দেশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন বলে তৃণমূল ভবন সূত্রের খবর, সেই নির্দেশের বিশেষ তাৎপর্য খুঁজে পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকে দলবদলের যে প্রবণতা বাড়তে শুরু করেছে, তার প্রেক্ষিতে বিধায়কদের গতিবিধির উপরে আরও বেশি করে নজর রাখতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব, সেই কারণেই দল ও প্রশাসনকে জানিয়ে এলাকার বাইরে যাওয়ার নির্দেশ। মত বিশ্লেষকদের।

বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকের আগে এ দিন প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে বসেছিলেন মমতা। তাই তৃণমূলের একাংশের মত যে, প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শেই এ দিন বিধায়কদের জন্য একগুচ্ছ আচরণবিধি মমতা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE