Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মোদীর কাছে আগে নয় কেন, মুকুল-খোঁচা মমতাকে

রাজ্যের উন্নয়ন ও আর্থিক অগ্রগতিতে রাজনীতি সরিয়ে রেখে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সমন্বয়ের কথা বার বার বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বার মোদীর সুরেই সুর মেলালেন তৃণমূলের সদ্য প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবারই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে দিল্লি যাচ্ছেন।

নিজাম প্যালেসে মুকুল রায়। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিজাম প্যালেসে মুকুল রায়। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৪
Share: Save:

রাজ্যের উন্নয়ন ও আর্থিক অগ্রগতিতে রাজনীতি সরিয়ে রেখে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সমন্বয়ের কথা বার বার বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বার মোদীর সুরেই সুর মেলালেন তৃণমূলের সদ্য প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবারই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে দিল্লি যাচ্ছেন। তার ঠিক আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুখ্যমন্ত্রীর এই যাওয়াকে ‘ইতিবাচক’ আখ্যা দিয়ে মুকুল জানিয়েছেন, এটা আর একটু আগে হলে ভাল হতো!

সারদা কাণ্ডে রাজ্যে সিবিআই তদন্ত চলছে। বিজেপি সম্পর্কেও তৃণমূলের মনোভাব বৈরী। এমনকী, লোকসভা ভোটের আগে পরোক্ষে মোদীকে কোমরে দড়ি দিয়ে ঘোরানোর কথাও বলা হয়েছিল! সেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেই দেখা করতে দিল্লি যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এই পরিপ্রেক্ষিতেই শনিবার এবিপি আনন্দ চ্যানেলে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে মুকুলকে প্রশ্ন করা হয়, বিষয়টিকে তিনি কী ভাবে দেখছেন? মুকুলের জবাব, “সমস্যা সমাধানে রাজ্যের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন মুখ্যমন্ত্রী এটা দল নয়, গণতন্ত্রের ঐতিহ্য। এটাই ভারতবর্ষের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক। এবং আমার মনে হয়েছে, আর একটু আগে হলে বোধ হয় ভাল হতো।”

মুকুলের বক্তব্যে তৃণমূল নেতৃত্ব বেশ ক্ষুব্ধ। মুকুলের নাম না করে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, “উনি তো এখনও আমাদের দলেই আছেন! উনি তো নিজেকে মনে করেন দলের এক জন সৈনিক। তা হলে এই সুপরামর্শটা উনি তো

দলের ভিতরেই দিতে পারতেন!” দলের অন্য কয়েক জন নেতার ব্যাখ্যায়, দলে কোণঠাসা মুকুল আসলে মোদীর পক্ষে সওয়াল করেছেন তাঁর ভবিষ্যতের কথা ভেবেই। তবে মুকুল-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, “এক জন স্বাভাবিক বোধ-বুদ্ধিসম্পন্ন রাজনৈতিক নেতা হিসেবেই তিনি সে কথা বলেছেন।”

এখানেই শেষ নয়। সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাঁর দল কেন রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর সংশোধনী আনতে সামিল হল, তা নিয়েও সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন তুলেছেন মুকুল। রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আনা সংশোধনী প্রস্তাবের পক্ষে দলের ‘হুইপ’ মেনে তিনি ভোটও দিয়েছিলেন। কিন্তু এ দিন তিনি বলেন, “সাধারণত রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর কেউ সংশোধনী আনে না। সে দিন যারা হুইপ দিয়ে ভোট করল, যারা ভোট দিল, তারা দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে সিপিএমের সঙ্গে এক যোগে ভোট দিল কি না তা আমি জানি না। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, এই কাজটা না হলেই ভাল হতো।”

রাজ্যে সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করে তাঁর নেত্রী রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এমনকী, প্রতারিতদের টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা তদন্তকারী সংস্থাকেই করতে হবে বলেও দাবি তুলেছিলেন মমতা। এ ক্ষেত্রেও দলনেত্রীর সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে মুকুল বলেন, “প্রতারিত মানুষগুলোর টাকা ফেরত দেওয়া দরকার। আমার মনে হয়, প্রতারিত মানুষদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। যদিও এই দায়িত্ব তদন্তকারী সংস্থার নয়। সেই দায়িত্ব অন্যের। যে কোনও তদন্তকারী সংস্থা ভারতের যে কোনও ল অ্যাবাইডিং সিটিজেন-কে তদন্তের স্বার্থে ডাকলে তাঁদের সাহায্য করা দরকার। তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে মানুষের প্রশ্ন থাকতেই পারে। কিন্তু সেটা আলাপ-আলোচনার বিষয়। সে জন্য আলাদা ফোরাম রয়েছে।”

অবশ্য মুকুলের এই সমস্ত মন্তব্য নিয়ে পার্থবাবু কোনও মন্তব্য করেননি। দলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ ব্রায়েনও বিশেষ আমল না দিয়ে জানিয়েছেন, মুকুল যা বলেছেন তা তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত। তাঁর স্পষ্ট কথা, “এগুলো দলের বক্তব্য নয়।” মুকুলের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে চাননি সদ্য দায়িত্ব পাওয়া দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। মুকুলকে নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সে প্রসঙ্গে এ দিন ফিরহাদ বলেন, “আমাদের একটিই মুখ। তিনি হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে দেখেই মানুষ ভোট দেন। ভোট বেড়েছে। মুকুল রায় আমাদের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। এর বাইরে আর কিছু নয়।”

মুকুলের বক্তব্যকে দলীয় নেতৃত্ব গুরুত্ব না দিলেও তাঁর কাছে এ দিনও জেলা স্তরের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ভিড় হয়। এ দিন সকালে এলগিন রোডে মুকুলের ডেরায় গিয়েছিলেন দল থেকে বহিষ্কৃত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের পর হুমায়ুন বলেন, “মুকুলদার হাত ধরেই এক দিন তৃণমূলে ঢুকেছিলাম। রাজনীতির মধ্যে তো আমাকে থাকতে হবে। সেই ব্যাপারে কথা বলতে এসেছিলাম।”

হুমায়ুন জানান, তাঁর পুরনো দল কংগ্রেস তাঁর জন্য দরজা খোলা রেখেছে। কিন্তু তিনি এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। হুমায়ুনের কথায়, “মুকুলদা আগামী দিনে চূড়ান্ত কিছু পদক্ষেপ করবেন। তিনি আমাকে সহকর্মী হিসেবে পেতে চান।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc mukul roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE