—প্রতীকী ছবি।
লাগাতার অবস্থানের পরেও যোগ্যতার ভিত্তিতে বেতন-কাঠামোর পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ। আর তারই প্রতিবাদে স্কুলপড়ুয়াদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অনুদান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলেন রাজ্যের প্রাথমিকের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ।
পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, হুগলি-সহ বিভিন্ন জেলায় এই অনুদান বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বহু শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে পুরুলিয়া জেলার অধিকাংশ প্রতিবাদীই পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পদাধিকারী বলে নিজেরাই দাবি করেছেন। যদিও ওই প্রতিবাদীরা তাঁদের সংগঠনের কেউ নয় বলে জানিয়ে দেন সমিতির রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র। সোমবার তৃণমূল ভবনে দলের প্রাথমিক শিক্ষকদের সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পরে তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষকদের উন্নয়নে সরকার যে-সব কাজ করছে, তার খবর মানুষের কাছে প্রচার করতে বলেছি ওই সংগঠনকে।’’
তৃণমূল সূত্রের খবর, দলীয় শিক্ষক সংগঠন প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে রাজ্যের প্রকল্পগুলির প্রচার ঠিকমতো করছে না। তাই বৈঠকে মন্ত্রী জানিয়ে দেন, ওই সংগঠনকে মন দিয়ে এই প্রচার চালাতে হবে। এ ব্যাপারে দুর্বলতা বরদাস্ত করা হবে না।
আরও পড়ুন: উচ্চশিক্ষায় শিক্ষক এক তো ছাত্র ৪৪!
এ দিনই পুরুলিয়ার জেলা স্কুলশিক্ষা দফতরের সঙ্গে শিক্ষকদের এক বৈঠকে শিক্ষকেরা সাফ জানিয়ে দেন, ‘সার্ভিস রুল’ অনুসারে তাঁরা স্কুলের ক্রীড়ার সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, কিন্তু কোনও অনুদান দেবেন না। স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, প্রতিটি জেলায় আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা হয় নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে সার্কেল, মহকুমা, জেলা হয়ে রাজ্য-ভিত্তিক প্রতিযোগিতা হয়। ওই সব প্রতিযোগিতায় ডিআই বা জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতর থেকে কিছু অর্থ দেওয়া হয়। যেমন কোথাও ৪০ হাজার টাকার প্রয়োজন হলে সাত থেকে আট হাজার টাকা দেয় দফতর। বাকিটা দেন শিক্ষকেরা।
আরও পড়ুন: উদ্বৃত্ত শিক্ষক পাঠানো হবে অন্য স্কুলে
এ ক্ষেত্রে প্রতিটি সার্কেলে স্কুল ইনস্পেক্টর (এসআই)-কে আহ্বায়ক করে কিছু শিক্ষককে নিয়ে কমিটি গড়া হয়। কমিটি প্রতিযোগিতায় আসা সব স্কুলের শিক্ষকদের থেকে ৩০০, ৫০০ বা ১০০০ টাকা অনুদান নেয়।
নিজেকে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রঘুনাথপুর (৩) সার্কেলের সভাপতি তথা উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (ইউইউপিটিডব্লিউএ)-এর জেলা সম্পাদক হিসেবে দাবি করে আসিউদ্দিন আনসারি বলেন, ‘‘জেলার ৪৫টি সার্কেল থেকে সব শিক্ষক এই অনুদান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ দুর্গাপুর, কাঁকসা-২ ব্লকের শিক্ষকদের দাবি, প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের বহু সদস্যও। এক এসআই বলেন, ‘‘অর্থের অভাব হলে খেলা চালানো মুশকিল। ওই সব শিক্ষক এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
তবে সংগঠনের রাজ্য সভাপতি অশোকবাবু বলেন, ‘‘শিক্ষকেরা পড়ুয়াদের স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করছেন। এ কেমন শিক্ষক? যাঁরা নিজেদের তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের বলে দাবি করছেন, তাঁরা আমাদের সংগঠনের কেউ নন। তাঁদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের সংগঠনের কেউ সরকার-বিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত নয়।’’ এর পিছনে ইউইউপিটিডব্লিউএ এবং বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের মদত রয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। ইউইউপিটিডব্লিউএ-র সম্পাদক পৃথা বিশ্বাস বলেন, ‘‘এটা শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের সমবেত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।’’
যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সম্প্রতি শহিদ মিনার ময়দানে দু’দিন ধর্না দেয় ইউইউপিটিডব্লিউএ। শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘একটা নির্দিষ্ট শর্তে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরে যোগ্যতা বাড়িয়েই উচ্চ বেতন-কাঠামো দাবি করলে হবে না। এটা মেনে নেওয়ার মতো আর্থিক ক্ষমতাও নেই রাজ্য সরকারের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy