Advertisement
০৮ মে ২০২৪

দলকেই জলে ফেলে সব্যসাচীর ‘গঙ্গাজল’

ছিল ভেজাল। হল এখন গঙ্গাজল! নারদ নিউজের গোপন ক্যামেরার ফুটেজ দলের এক ঝাঁক নেতা-মন্ত্রীর ঘুষ নেওয়ার ছবি প্রকাশ্যে আনার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, সে ছবি ভেজাল! তার পরে গঙ্গা দিয়ে রোজই জল গড়িয়ে চলেছে। শুধু ঘুষ নেওয়ার ছবিই নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৬
Share: Save:

ছিল ভেজাল। হল এখন গঙ্গাজল!

নারদ নিউজের গোপন ক্যামেরার ফুটেজ দলের এক ঝাঁক নেতা-মন্ত্রীর ঘুষ নেওয়ার ছবি প্রকাশ্যে আনার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, সে ছবি ভেজাল! তার পরে গঙ্গা দিয়ে রোজই জল গড়িয়ে চলেছে। শুধু ঘুষ নেওয়ার ছবিই নয়। গোপন ক্যামেরার সামনে কখনও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম, কখনও পুলিশ-কর্তা এসএইচ মির্জা, আবার কখনও কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়— এক এক জনের বিস্ফোরক কথোপকথন সামনে আসছে। দুর্নীতি, কেলেঙ্কারির সঙ্গে শাসক দলের কেষ্ট-বিষ্টুদের গভীর যোগসাজশের অভিযোগ নিয়ে ভোট-বাজারে সরব বিরোধীরা। আর তার মোকাবিলায় নেমে ততই দিশাহার হচ্ছে তৃণমূল! যত চাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, ততই বেরিয়ে পড়ছে ফাঁক-ফোকর!

এমন চেষ্টার সূত্রেই এ বার এসেছে গঙ্গা জলের তত্ত্ব! রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল প্রার্থী তথা বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত যেমন সোমবার বলে বসেছেন, ‘‘তৃণমূল অনেকটা গঙ্গা জলের মতো! যেখানে মড়াও ভাসে। আবার সেই জলই মানুষ মাথায় দেয়!’’ অর্থাৎ কথার চাতুরিতে সব্যসাচীবাবু কবুল করে নিচ্ছেন, তৃণমূলে এখন পচা-গলা জিনিসও আশ্রয় পায়!

প্রথমে সারদা, তার পরে নারদ এবং সর্বশেষ উড়ালপুল-কাণ্ড— যে কোনও ঘটনাতেই তৃণমূলের রক্ষণ শুরু হয় ‘গোটাটাই অপপ্রচার’ বলে। তার পরে বিতর্ক যত গড়ায়, অভিযুক্ত নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানোর চেষ্টায় নামেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘কেউ চুরি করে থাকলে ব্যক্তিগত ভাবে চোর হয়। দল চোর হয় না!’’ সাফাই দেওয়ার সেই ট্র্যাডিশনই যেন এগিয়ে নিয়ে চলেছেন কখনও সৌগত রায়, কখনও সব্যসাচীরা!

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরে এ দিন নারদের স্টিং অপারেশন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে সব্যসাচী প্রথমে বলেন, ‘‘এটা বিচারাধীন বিষয়। তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’ তার পরেই তৃণমূলকে গঙ্গা জলের সঙ্গে তুলনা করেন সব্যসাচী! যার জেরে বিরোধীরা বলছে, নারদের ভিডিও ফুটেজে যে কিছু সত্য আছে, ঘুরিয়ে সে কথাই স্বীকার করে নিয়েছেন বিধাননগরের মেয়র। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘মানুষের আস্থা-ভরসার নাম করে ওঁরা প্রতারণা করছেন! গঙ্গার দূষণ কমানোর জন্য হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হয়েছিল। আর এঁরা হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করে এখন দলকে গঙ্গা জল বলে দাবি করছেন। ওঁদের দূষণ কমানো তো যাবে না, একেবারে দূর করে দিতে হবে!’’ বিজেপির শমীক ভট্টাচার্যেরও কটাক্ষ, ‘‘হঠাৎ গঙ্গার দিকে নজর কেন? অন্তর্জলি যাত্রা শুরু হচ্ছে বলে?’’

সব্যসাচীর কায়দাতেই কয়েক দিন আগে তৃণমূলের সাংসদ সৌগত রায় খড়দহে অমিত মিত্রের জন্য প্রচার করতে গিয়ে বলেছিলেন, নারদ-কাণ্ডে তাঁর নাম জড়ানোয় তিনি লজ্জিত। কিন্তু অমিতবাবু তো টাকা নেননি, তাই তাঁকে ভোট দেওয়া উচিত! বাঁকুড়ার ওন্দায় রবিবারই তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ-র প্রচারে গিয়ে স্বয়ং মমতা বলে এসেছেন, ‘‘অরূপ চোর নয়! ওকে ভোট দিন!’’ যে কথার মানে দাঁড়ায়, তাঁর দলে কিছু চোরও আছে! বিরোধীদের মতে, শাসক দলের নেতাদের এই সব মন্তব্যে প্রতিনিয়ত স্পষ্ট হচ্ছে, সব অভিযোগকে আড়াল করার জায়গায় তাঁরা আর নেই!

সব্যসাচী যখন গঙ্গা জলের কথা বলছেন, তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় তখন নারদ-বিতর্কে জল ঢালার চেষ্টা করেছেন। রামপুরহাটে নারদ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে পার্থবাবুর মন্তব্য, ‘‘জলটা ওরা (বিরোধী) ঘোলা করুক! ঘোলা জল কী ভাবে পরিষ্কার করতে হয়, জনগণ জানে!’’

সব দেখেশুনে সিপিএমের এক নেতার টিপ্পনী, ‘‘কেউ বলছেন, ঘোলা জল পরিষ্কার করবেন। কেউ বলছেন গঙ্গা জল! বোঝা যাচ্ছে, তৃণমূল সত্যিই জলে পড়েছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE