বেচাকেনা: দমদমের বাজারে। —নিজস্ব চিত্র।
ধরা বেআইনি, সবাই জানে। তবু এক শ্রেণির মৎস্যজীবী আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কার্যত মোহনা ‘ছেঁচে’ টন-টন ছোট ইলিশ তুলে নিচ্ছেন। ১৩০-১৫০ গ্রামের এই ছোট ইলিশই পরে চালান হয়ে যাচ্ছে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের বাজারে। গত এক সপ্তাহে খুচরো বাজারগুলিতে ছোট ইলিশ বিকিয়েছে ১৫০-২০০ টাকা কেজিতে।
অক্টোবরের এই সময়টায় বাংলাদেশে ইলিশ ধরা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। সমুদ্র থেকে মিষ্টি জলে এসে এখন ইলিশ ডিম পাড়ে। ছোট ইলিশ এই সময় পদ্মা-মেঘনায় দৌড়দৌড়ি করে কিছু দিনের মধ্যেই প্রমাণ সাইজের হয়ে ওঠে। যে কারণে ও-পার বাংলায় ১-২২ অক্টোবর ইলিশ ধরলে আর্থিক জরিমানা-সহ বাজেয়াপ্ত করা হয় জাল-সহ মাছ ধরার অন্য সরঞ্জাম। দু’বছর পর্যন্ত জেলও হতে পারে। মৎস্যবিজ্ঞানীদের মতে, ভাদ্রের শেষ থেকে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা পর্যন্ত মিষ্টি জলে ইলিশের এই বংশ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলতে থাকে। তখন ইলিশ ধরা মানে সব দিক থেকেই প্রভূত ক্ষতি।
এই রাজ্যেও ছোট ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু সে সব শুনছে কে! মৎস্য দফতরের একাংশের মতে, নজরদারির অভাব আর দুর্বল আইনের ফাঁক গলে রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকায় ট্রলারের জালে ধরা পড়ে যাচ্ছে ইলিশ। আর জলের রানি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে জলের দরে।
মৎস্যবিজ্ঞানী বিজয়কালী মহাপাত্রের কথায়, ‘‘প্রজননের সময় বাধা পড়লে ইলিশের বংশবৃদ্ধির সমস্যা হয়। তাই তা আটকাতেই আইন তৈরি হয়েছে। ছোট ইলিশ ধরা মানে বিপুল সংখ্যক ইলিশ প্রজননের সুযোগ থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে।’’
রাজ্যের মাছ আমদানিকারক সংস্থাগুলির সভাপতি অতুল দাস জানাচ্ছেন, এখন ইলিশ ধরা না হলে নভেম্বর-ডিসেম্বরে ওজন দাঁড়াত ৫০০-৬০০ গ্রাম। কাকদ্বীপ পাইকারি মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বিজন মাইতির মতে, ‘‘প্রশাসন আইন সংশোধন করে কড়া না হলে এ জিনিস বন্ধ হবে না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘প্রশাসনকে বলেছি বাংলাদেশের মতো এখানেও একই নিয়ম-নীতি চালু হোক।’’
জোগানের অভাবে এই সময়টায় অধিকাংশ মাছের দাম বেশ চড়া থাকে। অথচ বাজারে ইলিশের ঢল নেমেছে। রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বললেন, ‘‘পুজোর ছুটির ফাঁকে নজরদারির অভাবে কিছু মৎস্যজীবী প্রচুর ছোট ইলিশ ধরেছেন। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি জানান, ছোট মাছ ধরা বন্ধের আইন আরও কঠোর করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy