Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

জেলে নজর কাড়ছেন শিক্ষিকা-সেবিকা দেবযানী

গলায় সংক্রমণের জন্য কিছু দিন আগে আরজি কর হাসপাতালে দু’-এক দিনের জন্য চিকিৎসাধীন ছিলেন দেবযানী।

দেবযানী মুখোপাধ্যায়

দেবযানী মুখোপাধ্যায়

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৯:০০
Share: Save:

সপ্রতিভ। দায়িত্বশীল। বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা রয়েছে। দ্রুত যে-কোনও কাজেই যে তিনি পারদর্শী হয়ে উঠতে পারেন, সাড়ে ছ’বছরেরও বেশি সময়ের বন্দিজীবনে বার বার তা প্রমাণ করে দিয়েছেন সারদা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত দেবযানী মুখোপাধ্যায়। ২০১৩-র এপ্রিলের শেষ লগ্নে সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে গ্রেফতার হন তিনি।

গলায় সংক্রমণের জন্য কিছু দিন আগে আরজি কর হাসপাতালে দু’-এক দিনের জন্য চিকিৎসাধীন ছিলেন দেবযানী। এখন আছেন দমদম সেন্ট্রাল জেলে। হাসপাতাল থেকে জেলে ফিরেই সেবিকার ভূমিকা পালন করতে থাকেন একদা সারদার ‘সেকেন্ড-ইন-কমান্ড’। দমদম জেল হাসপাতালে নার্স হিসেবে দিনের বেশির ভাগ সময় এক করে দিচ্ছেন দেবযানী। সময়মতো বন্দি-রোগীদের খাওয়াদাওয়া, ওষুধ দেওয়া, ডায়েট চার্ট, তাঁদের পরিচর্যা ও প্রয়োজন— সব দিকেই কড়া নজর তাঁর। এমনকি, ব্যান্ডেজ বাঁধতেও যথেষ্ট পারদর্শিতার পরিচয় দিচ্ছেন দ্রুত ‘নার্স’ হিসেবে মানিয়ে নেওয়া দেবযানী। সেবিকার ভূমিকার পাশাপাশি শিক্ষিকা হিসেবেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও রকম ফাঁকির অভিযোগ ওঠার সুযোগ নেই। ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর দেবযানীর ছাত্রীদের মধ্যে আছেন মায়ানমারের বন্দি মহিলা-শিশুরাও।

২০০৮ সালের জানুয়ারিতে সারদার টুর অ্যান্ড ট্রাভেলস শাখার যোগ দেন দেবযানী। মাস সাতেকের মধ্যেই সারদা রিয়েলটির ডিরেক্টর হিসেবে কর্মীদের ‘ম্যাডাম’ হয়ে ওঠেন তিনি। কর্মদক্ষতা এবং একাগ্রতার জোরেই তিনি ওই পদ পেয়েছিলেন বলে একদা একটি লিখিত বিবৃতিতে দাবি করেছিলেন দেবযানী। রাশভারী কর্ত্রী হিসেবে সারদার কর্মীদের কাছে একদা পরিচিত দেবযানীকে এখন নার্স বা শিক্ষিকা হিসেবে সামান্য বিরক্ত হতেও দেখেন না তাঁর রোগী বা ছাত্রছাত্রীরা। বরং কেউ কিছু জানতে চাইলে তিনি ধৈর্য ধরে বার বার তা বুঝিয়ে দেন বলেই বন্দিশালার খবর।

আরও পড়ুন: গাফিলতির তির বিরোধীদের, রেলের দায় মানলেন বাবুল

আলিপুর মহিলা জেলে থাকাকালীন বিউটি পার্লারের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন দেবযানী। পরে তাঁকে দমদম জেলে পাঠানো হয়। সেখানে সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেই সামনের সারিতে থাকেন দেবযানী। কখনও সঞ্চালকের ভূমিকায় তো কখনও দেশাত্মবোধক গানে বা অন্য বন্দিদের সঙ্গে কোরাসে গলা মেলাতে দেখা যায় তাঁকে। তুলি হাতেও নজর কাড়েন বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা সারদার এক কালের কর্ত্রী। জেলে মহিলা ক্রিকেট লিগেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে দেবযানীর। বিভিন্ন কাজের মধ্যে অন্য বন্দি বা জেলকর্মীদের সঙ্গে তিনি যে খুব বেশি কথা বলেন, তা নয়। বরং মধ্যবিত্তের পরিবারের সন্তান হিসেবে যোগ্যতা প্রমাণ করে কাজে উন্নতি করা এবং সামাজিক মর্যাদায় উপরে ওঠার তাগিদ থেকে সারা ক্ষণই ব্যস্ত থাকেন নিজের কাজ নিয়ে। সারদায় তাঁর পদোন্নতি প্রসঙ্গে এই তাগিদের কথাই লিখেছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন: এর পরে এনআরসি, বলছে বিজেপির বই

অনেক কাজের ফাঁকে অনেকে তো ফুরসত খোঁজেন, দেবযানী এ ভাবে কাজে ডুবে থাকেন কেন? এই প্রসঙ্গে অনেকে জানাচ্ছেন যে, কর্পোরেট জগতের অন্যতম শাস্তি হল, কাজের মানুষকে কাজ থেকে দূরে রাখা। তাই একদা কর্পোরেট জগতে থাকা দেবযানী এখন কাজের মধ্যে থাকার সামান্যতম সুযোগও হাতছাড়া করতে চান না। দুর্নীতির মাপকাঠিতে এ দশকে বঙ্গের শিরোনামে থাকা লগ্নি সংস্থার এক কালের অন্যতম প্রধান কর্ত্রী হয়তো নিজের ভাল লাগাকেও খুঁজে পান এই সব কাজের মধ্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Debjani Mukherjee Saradha Scam Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE