জুনিয়র হাইস্কুলে পড়ান কুমারেশ মোহান্ত নামে হুগলির গোঘাটের এক বাসিন্দা। তিনি ভবিষ্যতে কোনও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষকের পদে যোগ দিতে চান। অথচ তাঁর সেই আশা ও উদ্যোগে বাদ সাধছে রাজ্য সরকারের নতুন একটি বিজ্ঞপ্তি। সেই বিজ্ঞপ্তির সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন বাঁকুড়া জেলার ওই শিক্ষক।
সরকারি চাকরিতে তো বটেই, সরকার বেতন দেয়, এমন বিভিন্ন চাকরিতে উচ্চতর পদে বা বৃহত্তর প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। অথচ মার্চে জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে, এমএ বা অনার্স ডিগ্রিধারী প্রার্থীরা স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর পরীক্ষা দিয়ে এক বার স্কুলশিক্ষকের চাকরি পেয়ে গেলে আরও কোনও দিনই কমিশনের পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। কুমারেশবাবুর প্রশ্ন, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক-পদে যাওয়ার জন্য অথবা প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য তাঁর নতুন করে কমিশনের পরীক্ষায় বসার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে কেন? সরকার কি এ ভাবে কোনও নাগরিকের কর্মজীবনে অগ্রগতির অধিকার কেড়ে নিতে পারে?
আবেদনকারীর কৌঁসুলি এক্রামুল বারি জানান, তাঁর মক্কেল ইংরেজিতে এমএ। এখন তিনি বাঁকুড়ার যাদবপুর জুনিয়র হাইস্কুলে ইংরেজি পড়ান। হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের ওই বিজ্ঞপ্তির সাংবিধানিক বৈধতা নেই। কারণ, সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে চাকরি পাওয়ার, নতুন চাকরিতে যাওয়ার যে-অধিকার দিয়েছে, সরকারি বিজ্ঞপ্তি তা কেড়ে নিয়েছে। মামলার আবেদনে ওই শিক্ষক জানান, জুনিয়র হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে বা কোনও স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদে যাওয়ার জন্য কমিশনের পরীক্ষাই একমাত্র পথ। অথচ সরকারি বিজ্ঞপ্তি তাঁকে দ্বিতীয় বার কমিশনের পরীক্ষায় বসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে। রাজ্য সরকার এমন বিজ্ঞপ্তি আদৌ জারি করতে পারে কি না, আবেদনে সেই প্রশ্ন তুলেছেন ওই শিক্ষক।
আগে নিয়ম ছিল, স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এমএ বা অনার্স ডিগ্রিধারী কোনও ব্যক্তি কোনও স্কুলে চাকরি পাওয়ার পরে অন্তত দু’বছর আর কমিশনের পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। ওই স্কুলে দু’বছর চাকরি করার পরে নিজের পছন্দমতো অঞ্চলের কোনও স্কুলে চাকরি পাওয়ার জন্য তিনি আবার কমিশনের পরীক্ষায় বসতে পারবেন। পরবর্তী কালে রাজ্য সরকার দু’বছরের সেই সময়সীমা বাড়িয়ে তিন বছর করে। অর্থাৎ এক বার পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়ে যাওয়ার তিন বছর পরে আবার কমিশনের পরীক্ষায় বসা যাবে।
কিন্তু গত ৯ মার্চ স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ পরীক্ষার নিয়মে সংশোধনী এনে নতুন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকার সেই সুযোগে ইতি টেনে দিয়েছে বলে জানান কুমারেশবাবুর আইনজীবী এক্রামুল। তিনি জানান, ওই বিজ্ঞপ্তিতে স্কুলে চাকরি পেয়ে যাওয়া শিক্ষকদের নতুন করে কমিশনের পরীক্ষায় বসার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তারই বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের আদালতে। আগামী সপ্তাহে সেই মামলার শুনানি হতে পারে।
এসএসসি, টেট শীঘ্রই
বহু দিন ধরে ঝুলে থাকা স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) পরীক্ষা এবং টেট অচিরেই নেওয়া হবে বলে বিধানসভায় জানালেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিধানসভায় সোমবার স্কুলশিক্ষা দফতরের বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য এসএসসি পরীক্ষা এবং টেট কবে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জবাবি ভাষণে মন্ত্রী পার্থবাবু বলেন, ‘‘এসএসসি পরীক্ষা এবং টেট পিছোনোর কারণ আদালতের মামলা। আদালতে বার বার আবেদন হয়েছে। ফলে পরীক্ষা পিছিয়েছে। তবে এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে বলা আছে। আর কয়েক দিনের মধ্যেই এসএসসি-র নোটিস বেরোবে।’’ পরে নিজের কক্ষে পার্থবাবু ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘আগামী বছর ৩১ মার্চের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষা এবং টেটের প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। চেষ্টা হচ্ছে, যাতে পরীক্ষাটা অগস্ট বা সেপ্টেম্বরে নিয়ে ফেলা যায়।’’ এ দিন বিধানসভা অধিবেশনে এসইউসি বিধায়ক তরুণ নস্কর বাজেট বিতর্কে বলেন, ‘‘এসএসসি পরীক্ষার পার্সোন্যালিটি টেস্টের মান ৫ থেকে বাড়িয়ে ২০ করা হলে দুর্নীতির বন্যা বইবে।’’ এক জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর খাতায় প্রাপ্ত নম্বর কেটে কেটে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তরুণবাবু। সেই খাতাটি স্পিকারের কাছে জমাও দেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy