নতুন নিয়োগের নিশ্চয়তা নেই, অবসরপ্রাপ্তদের দিয়েই তাই স্কুলে শিক্ষকের ঘাটতি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বুধবার বিধানসভায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, স্কুলগুলিতে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর।
এ দিন বিধানসভায় জিরো আওয়ারে কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো একটি প্রশ্ন তোলেন। নেপালবাবু জানান, রাজ্যের বহু বিদ্যালয়কে মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু পরিকাঠামোগত সমস্যা, বিশেষ করে শিক্ষক সমস্যার ফলে সেই সব বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা যাচ্ছে না। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে নানা জটিলতায় ফেঁসে রয়েছে নিয়োগের পরীক্ষাও। স্কুলে স্কুলে শিক্ষকের অভাবের এই দীর্ঘদিনের সমস্যার বিহিত চেয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে উদ্যোগ নিতে বলেন নেপালবাবু।
এ রাজ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু নিয়োগে বাধ সেধেছে বিভিন্ন মামলা। শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলার জেরে বারেবারেই আটকে যাচ্ছে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াটি। দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি চেয়ে পরীক্ষার ফলপ্রকাশের আর্জি জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিচ্ছে রাজ্য সরকার। একই সঙ্গে সমস্যা মেটাতে সরকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অতিথি শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে রাজ্য শিক্ষা দফতর। এই বিষয়ে সরকারি স্কুল শিক্ষক সমিতির প্রাক্তন সভাপতি দীপক দাস বলেন, ‘‘এই বিষয়টি নতুন নয়। ৬১ থেকে ৬৪ বছর বয়সের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ফের স্কুলে নিয়োগ করা শুরু হয়েছিল ২০১০ সাল থেকেই। সেই সময়ে তাঁদের নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্লাস, বেতন কাঠামো সবই ঠিক করা হয়েছিল, নিয়োগও হয়েছিল বেশ।’’ তবে তারপরে অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষকদের নিয়োগেও ভাটার টান আসে। এ রাজ্যে শিক্ষকের ঘাটতির সমস্যা স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ সব স্তরেই। অধিকাংশ কলেজেই অতিথি শিক্ষক দিয়েই বেশিরভাগ ক্লাস নেওয়া হয়। স্কুলেও অতিথি হিসেবে অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ আসলে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের অন্তরায় বলেই মনে করছে শিক্ষাশিবির। শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটাতে গেলে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে। এই পথটি সেই সমস্যা সমাধানের পথ নয়।’’—বলেন প্রধান, শিক্ষক সমিতির সম্পাদক নীহারেন্দু চৌধুরী।
টেট পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের পরিমাণ বাড়ছে হুহু করে। কিন্তু শেষ তিন বছরে কোনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। এই অবস্থায় বেকার যুবক যুবতীদের কর্ম সংস্থানের কথা না ভেবে সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই সরব হয়েছেন শিক্ষাবিদেরাও। ‘‘যাঁরা এত বছর পড়িয়েছেন, তাঁদের সসম্মানে অবসর দেওয়াই ভাল। বহু নতুন ছেলেমেয়ে চাকরির প্রত্যাশী। পার্থবাবুর উচিত্ ছিল তাঁদের কথা আগে মনে আনা।’’—বলছেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার। সেই সময় সরকারের দাবি ছিল, অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ করলে তাঁদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় উপকৃত হবেন স্কুল পড়ুয়ারা। কিন্তু এই সময়ে দাঁড়িয়ে সরকারের এই চিন্তাকে ‘নঞর্থক মানসিকতা’ হিসেবেই দেখছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষায় নতুন নতুন চিন্তার উন্মেষ ঘটাতে হলে নতুন যোগ্য ছেলেমেয়েদের নিয়োগ করতেই হবে। অবসরপ্রাপ্তদের দিয়ে কাজ চালানো যেতে পারে কিন্তু এমন কাজ চালিয়ে নেওয়ার মানসিকতা আসলে শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের পথে বড় কাঁটা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy