কেওড়াতলা শ্মশান সংলগ্ন উদ্যানে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তিতে কালি লাগিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল সেটির একাংশ (১,২)। গত বছর সেখানেই বসেছে নতুন মূর্তি (৩)। ছবি: ফাইল চিত্র ও সুদীপ্ত ভৌমিক
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে মূর্তি ভাঙার রেওয়াজ থেমে নেই। মূর্তি ভাঙার পাল্টা হিসেবে মূর্তিকেই ‘টার্গেট’ করা হয়েছে।
বছরখানেক আগে ত্রিপুরায় লেনিনের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে কলকাতার কেওড়াতলা শ্মশান সংলগ্ন চিত্তরঞ্জন স্মৃতি উদ্যানে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তিতে কালি লাগিয়ে সেটির একাংশ ভেঙেও দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের মার্চের সেই ঘটনায় সাত জন ‘নকশালপন্থী’ পড়ুয়াকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ধৃতেরা সকলেই জামিনে ছাড়া পেয়ে যান। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা, গন্ডগোল পাকানো এবং সম্প্রীতি ভঙ্গের মতো একাধিক অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছিল পুলিশ। ওই মামলায় আদালতে চার্জশিটও জমা দেওয়া হয়েছে। ওই সাত জনকে এখন আলিপুর আদালতে মামলার শুনানিতে হাজিরা দিতে হয়।
ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোটে হেরে গিয়ে বামফ্রন্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে লেনিনের মূর্তি ভাঙার অভিযোগ উঠেছিল বিজেপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে। তারই পাল্টা হিসেবে কেওড়াতলা শ্মশানে শ্যামাপ্রসাদের মূর্তি ভাঙা হয়। ওই ভাঙচুরে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের প্রাক্তন পড়ুয়া তথা নকশালপন্থী সংগঠন ‘র্যাডিক্যাল’-এর আহ্বায়ক অভিষেক মুখোপাধ্যায়। অভিষেক অবশ্য শ্যামাপ্রসাদের মূর্তি ভাঙার ঘটনার সঙ্গে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙাকে এক আসনে বসাতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘গত বছর বিজেপি-আরএসএস সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে ত্রিপুরায় লেনিন, উত্তরপ্রদেশে অম্বেডকর এবং দক্ষিণ ভারতে পেরিয়ারের মূর্তি ভেঙেছিল। পরপর তিন জন মনীষীর মূর্তি ভাঙার পরেও সেই সময়ে বামপন্থীদের তরফে কোনও জোরালো প্রতিবাদ উঠে আসেনি। আমরা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি ভাঙাকেই পাল্টা হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম।’’
শ্যামাপ্রসাদের মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনায় আর এক অভিযুক্ত সুরজিৎ দাসের কথায়, ‘‘আমরা মূর্তি ভাঙাকে কোনও ভাবেই সমর্থন করি না। কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে আমরা শ্যামাপ্রসাদের মূর্তি ভেঙেছিলাম, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। মূর্তি কার, সেটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যাসাগর বাংলার নবজাগরণের রূপকার। তাঁর মূর্তি ভাঙা মানে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যাওয়া।’’ তাঁর কথায়, ‘‘শ্যামাপ্রসাদের মূর্তি ভাঙার পরে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে আমরা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলাম। কিন্তু মঙ্গলবার বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার পরে দুষ্কৃতীরা কেন এখনও লুকিয়ে রয়েছে?’’
সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের পর্যবেক্ষণ, ‘‘মূর্তি ভাঙার পরেও অপরাধীরা হেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে মূর্তি ভাঙার ঘটনাটিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যে ভাবে ‘ইস্যু’ করছে, তা হাস্যকর। মূর্তি থাকলেও তা দিনের পর দিন বিষ্ঠায় ভরে থাকে। এর দায় কি কেউ নেবেন না? প্রায়শ্চিত্ত কে করবে?’’
কলকাতা পুরসভা নিয়ন্ত্রিত কেওড়াতলা শ্মশান সংলগ্ন চিত্তরঞ্জন স্মৃতি উদ্যানে অন্তত ২০ জন বিভিন্ন মনীষীর মূর্তি রয়েছে। মঙ্গলবার বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার পরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে ওই জায়গার নিরাপত্তা নিয়ে।
পুরসভার উদ্যান দফতরের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘ওই উদ্যানে নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন। উদ্যানের গেটও বন্ধ রাখা হয়।’’ গত বছরই শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুদিনে ওই উদ্যানে পুর কর্তৃপক্ষ তাঁর একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি তৈরি করে নতুন করে স্থাপন করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy