Advertisement
০২ মে ২০২৪

কাউন্সেলিং বন্ধ, এ বার টাকা জমাও অনলাইনে

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেধা তালিকার ভিত্তিতে ভর্তি নির্দিষ্ট হওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট কলেজ যে ব্যাঙ্কে টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেবে সেখানে টাকা জমা দিলেই ভর্তি হওয়া যাবে।

পুলিশি পাহারা: ভর্তি চলছে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

পুলিশি পাহারা: ভর্তি চলছে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৮ ০৪:২৩
Share: Save:

ভর্তি-চক্র ‌ভাঙতে এ বার পড়ুয়াদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য কলেজে না গিয়ে অনলাইনেই টাকা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করে দিল রাজ্য সরকার। ভর্তি নেওয়া হবে মেধা তালিকার ভিত্তিতে। ভর্তির চলতি মরসুমেই অর্থাৎ অবিলম্বে এই পদ্ধতিতে ভর্তি হওয়া যাবে বলে মঙ্গলবার শিক্ষা দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেধা তালিকার ভিত্তিতে ভর্তি নির্দিষ্ট হওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট কলেজ যে ব্যাঙ্কে টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেবে সেখানে টাকা জমা দিলেই ভর্তি হওয়া যাবে। ক্লাস চালু হওয়ার পরে নথি যাচাই করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য আগেই বলেছেন, নথি যাচাইয়ের সময় বড় কোনও গরমিল পেলে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়ার ভর্তি বাতিলও হয়ে যেতে পারে।

এ বার ভর্তি প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই বিভিন্ন কলেজে পড়ুয়ারা ভর্তি-চক্রের জুলুম ও তোলাবাজির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ। বহু কলেজে আবেদনের পরে কাউন্সেলিংয়ের জন্য ডাক পেয়েও অনেককে কাউন্সেলিংয়ে ‘হাজির’ হতেই দেওয়া হয়নি। সে সব জায়গায় কলেজের গেটে হাজির তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ‘দাদা-দিদিরা’ মোটা টাকা ঘুষ চেয়েছেন বলে অভিযোগ।

আরও পড়ুন: ছাত্রদশা পার, তবু তাঁদেরই হাতে সংগঠন

পরিস্থিতি সামলাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার পুলিশকে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। পুলিশ অভিযোগ নেওয়ার জন্য হোয়াটস্‌অ্যাপ নম্বর এবং ই-মেল চালু করে। মমতা নিজে ভর্তি-চক্রের খোঁজ নিতে আশুতোষ কলেজে যান। শিক্ষামন্ত্রীও ঘোরেন একাধিক কলেজে। পাঠানো হয় যুবকল্যাণমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকেও। কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় ভর্তি-মাফিয়াদের গ্রেফতার করাও শুরু হয়েছে। তবুও ফাঁক থেকে যাচ্ছে বুঝে মঙ্গলবার অনলাইনে টাকা জমার ব্যবস্থাও চালু করে দেয় সরকার।

এ দিনই অভিযোগের তালিকার উপরে থাকা কলকাতার গুরুদাস, বিদ্যাসাগর, আনন্দমোহন, সুরেন্দ্রনাথ, সিটি কলেজে তৃণমূলের ছাত্র ইউনিট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পার্থবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমরা সব নজর রেখেই করছি। নতুনদের ছোঁয়া আসুক।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন ব্যবস্থায় কলেজে ভর্তির দাবি উঠেছে অনেক দিন আগেই। ব্রাত্য বসু শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন বিষয়টি কিছুটা এগোয়। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি চালুও হয়। তবে পার্থবাবু শিক্ষামন্ত্রী হয়ে ওই প্রথা খারিজ করে দেন। ফলে অনলাইনে নাম ওঠার পরেও ভর্তির কাউন্সেলিংয়ের জন্য পড়ুয়াদের কলেজে হাজির হতেই হয়। আর সেখানেই জুলুমের সূচনা।

এ বার সেই পদ্ধতি বন্ধ করে দিয়ে সরকার কি ক্রমশ কেন্দ্রীয় অনলাইনের দিকেই ফিরে যেতে চান? পার্থবাবু বলেন, ‘‘এটা হলে নীতিগত কোনও আপত্তি নেই। তবে সেই পরিকাঠামো রাতারাতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আগে যে চেষ্টা হয়েছিল, তাতে কিছু ত্রুটিও ছিল। যাতে ভবিষ্যতে ত্রুটিমুক্ত ভাবে বিষয়টি করা যায়, তার ভাবনাচিন্তা চলছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো যে সব জায়গায় এই পদ্ধতি আছে, সেগুলি খতিয়ে দেখা হবে। ততদিন সবই হবে কলেজ ভিত্তিতে।’’

শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তির এই সংশোধিত ব্যবস্থা আরও গুছিয়ে নেওয়া হবে। সেখানে পড়ুয়াদের প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী পছন্দের একাধিক বিষয় বেছে নিয়ে আবেদনের সুযোগ থাকবে। পাশাপাশি, কলেজগুলিও একই দিনে সব বিষয়ের মেধাতালিকা প্রকাশ করবে। যাতে কোনও পড়ুয়াকে তাঁর প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে পছন্দের বিষয় বাছতে অপেক্ষা করতে না হয়। পার্থবাবু আরও বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে মার্কশিট যাচাই করার ক্ষেত্রেও একটি অ্যাপ চালুর পরিকল্পনা আছে। যাতে কলেজগুলি নিজেরাই আবেদনকারীর নথি যাচাই করে নিতে পারে।’’

এ দিকে, ভর্তি নিয়ে অনিয়মের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন শিক্ষাবিদ ও বিদ্বজ্জনেদের একাংশ। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘‘উচ্চশিক্ষার বাতাবরণ মর্মান্তিক ভাবে দূষিত হচ্ছে।’’ রাজ্যের যুব সমাজ ‘হতাশ, বিভ্রান্ত ও বিপথগামী’ হয়ে পড়ছে বলেও তাঁরা মনে করেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন শঙ্খ ঘোষ, সুকান্ত চৌধুরী, নবনীতা দেবসেন, সৌরীন ভট্টাচার্য, সু্প্রিয়া চৌধুরী প্রমুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE