Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চাঁদের পাহাড় ঘুরে ফিরলেন উজ্জ্বল

প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ উহুরুতে (৫,৮৯৫ মিটার) দেশের পতাকা উড়িয়ে দেন উজ্জ্বল।

স্বদেশে: উজ্জ্বল। নিজস্ব চিত্র

স্বদেশে: উজ্জ্বল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫০
Share: Save:

প্রিয় লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রিয় চরিত্র চাঁদের পাহাড়ের শঙ্কর। শৈশব থেকে যুবক হওয়া পর্যন্ত একটাই স্বপ্ন ছিল, শঙ্কর যা পারেনি তা পারতেই হবে। চাঁদের পাহাড়ের চূড়া ছুঁতে হবে। গত ২৬ জানুয়ারি সেই স্বপ্ন সফল হয়েছে বীরভূমের উজ্জ্বল পালের।

সাতটি মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ বা সেভেন সামিট এবং সাতটি মহাদেশের সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি বা সেভেন ভলক্যানো জয় করে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম উঠেছিল এ রাজ্যের পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্তের। প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ উহুরুতে (৫,৮৯৫ মিটার) দেশের পতাকা উড়িয়ে দেন উজ্জ্বল। সঙ্গে ছিল প্রিয় সাইকেল চেতক আর সবুজায়নের বার্তা। বঙ্গসন্তানের এই সাফল্যে উজ্জ্বল হয়েছে দেশের নাম। দেশে ফেরার পরে বৃহস্পতিবার উজ্জ্বলকে সম্মান জানানো হল মহম্মদবাজার ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

মহম্মদবাজারের বিডিও আশিস মণ্ডল বলেন, ‘‘উজ্জ্বল এমন এক ব্যক্তিত্ব যাঁকে সম্মান জানাতে পেরে মহম্মদবাজার ব্লকের সকলে গর্বিত। দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। এখান থেকেই যাত্রা শুরু করেছিলেন উনি।’’ উজ্জ্বল লাজুক হেসে বলেন, ‘‘কোনও রেকর্ড গড়ার জন্য নয়, ছোটবেলায় বিভূতিভূষণের ‘চাঁদের পাহাড়’ পড়ার পরে স্বপ্ন ছিল সত্যি চাঁদের পাহাড়ের মাথা ছোঁব। পৌঁছোলাম যখন তখন মনে হল স্বপ্ন সার্থক হল। সেই মুহূর্তের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।’’

উজ্জ্বল গ্রীণ অন হুইল এর বার্তা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন ২৭ অক্টোবর। ২৬ জানুয়ারি সকাল ছটায় দুর্গম পথ অতিক্রম করে, মাইনাস ১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পৌঁছোন কিলিমাঞ্জারো পর্বতের উহুরু শৃঙ্গে। ২০১১ সাল থেকে প্রত্যেককে একটি গাছ লাগানোর বার্তা দিতে শুরু করেছিলেন সাইকেল নিয়ে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ। এ পর্যন্ত ১৭টি দেশের ৫০০ স্কুলে, ১০০টি কলেজে এবং ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি সেই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। উজ্জ্বল জানান, এই অভিযানে তাঁর বার্তা ছিল, প্রতিটা মানুষেরই গোটা জীবনে একটা গাছ লাগানো এবং তাকে বড় করা উচিত। নিজেদের স্বার্থে এবং সবার সুস্থ জীবনের স্বার্থে। উজ্জ্বলের এই সাফল্যে শুভেচ্ছা জানিয়ে ইতিমধ্যেই একশোটি গাছ লাগিয়েছেন দমদমের তরুণ বিশ্বাস। তাঁর অভিযাত্রী সংগঠন পুষ্পিতা প্রকল্পের উদ্যোগে এই গাছ লাগানো শুরু হয় ২৬ জানুয়ারি উজ্জ্বলের চাঁদের পাহাড় জয়ের খবর আসার পরেই।

তরুণ বলেন, ‘‘আমরা প্রতিদিন একটি গাছ লাগানোর চেষ্টা করি। গাছ লাগিয়েই উজ্জ্বলকে সম্মান জানালাম।’’ মহম্মদবাজারের গৌরনগর গ্রামে উজ্জ্বলের মামার বাড়ি। আদতে সিউড়ির বাসিন্দা হলেও তিনি সেখানেই থাকেন। দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা পরিবারগুলির ৯০টি শিশুর লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনী। তাদের বইপত্র কিনে দেওয়া থেকে শিক্ষামূলক ভ্রমণ সবই করান নিজের খরচে। খরচ জোগাতে চাকরিও করেছেন দীর্ঘদিন। কিন্তু তাতে অভিযানে বাধা আসায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার গৌরনগরে পৌঁছোতেই তাঁকে ঘিরে ভিড় করে কচিকাঁচা থেকে বড়রাও। তাঁদের প্রিয় উজ্জ্বল যে তাঁদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।

ব্লক প্রশাসন আয়োজিত সভায় সম্মানিত হওয়ার পরে একগাল হেসে উজ্জ্বল বলেন, ‘‘আজ আমাকে চাঁদের পাহাড় বইটাই উপহার দেওয়া হয়েছে। আমি খুব খুশি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kilimanjaro Mountaineering
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE