Advertisement
০৫ মে ২০২৪

হৃদ্‌যন্ত্র বদলে মাইলফলক, দাবি রাজ্যের

শুধু তা-ই নয়, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে চলতি বছরে এই নিয়ে ষষ্ঠ হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের পরে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, হৃদ্‌যন্ত্র বদলে মাইলফলক ছুঁল পশ্চিমবঙ্গ।

প্রতিস্থাপনের জন্য হৃৎপিণ্ড আনা হচ্ছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

প্রতিস্থাপনের জন্য হৃৎপিণ্ড আনা হচ্ছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৫৩
Share: Save:

সরকারি হাসপাতাল হিসেবে রাজ্যে প্রথম কৃতিত্ব কলকাতা মেডিক্যালের। এবং আবার সফল ভাবে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপিত হল সেখানে। এ বছর হৃদ্‌যন্ত্র বদলের সূচনা করে কলকাতা মেডিক্যালের এটি দ্বিতীয় সাফল্য। শুধু তা-ই নয়, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে চলতি বছরে এই নিয়ে ষষ্ঠ হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের পরে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, হৃদ্‌যন্ত্র বদলে মাইলফলক ছুঁল পশ্চিমবঙ্গ।

সোমবার কোলাঘাটের মেশাড়া গ্রামের কৃষক সুমিত করের ছেলে সজল মোটরবাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে ভর্তি হন তমলুক জেলা হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু সেখানেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাই ছেলেকে ‘বাঁচিয়ে’ রাখতে অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেয় কর পরিবার। তাদের অনুমতি নিয়ে বুধবার রাতে সজলের ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য দফতর। রিজিওনাল অরগ্যান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অথরিটি কলকাতা মেডিক্যালে হৃৎপিণ্ড, এসএসকেএমে যকৃৎ এবং দু’টি বেসরকারি হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এসএসকেএমের স্কিন ব্যাঙ্কে সজলের ত্বক রাখা হয়েছে। কর্নিয়া রাখা হয়েছে একটি বেসরকারি চক্ষু হাসপাতালে।

বৃহস্পতিবার গ্রিন করিডর তৈরি করে কলকাতার চারটি হাসপাতালের সমন্বয়ে সজলের অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হল চার জনের দেহে। মেডিক্যাল কলেজে মুর্শিদাবাদের ৪৮ বছর বয়সি হবিবর রহমানের দেহে বসল তাঁর হৃদ্‌যন্ত্র। সকালে গ্রিন করিডরের মাধ্যমে আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে কয়েক মিনিটের মধ্যেই হৃৎপিণ্ড পৌঁছয় কলকাতা মেডিক্যালে। শুরু হয় অস্ত্রোপচার। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। রোগী আপাতত সুস্থ। তবে দু’দিন তাঁকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হবে।’’

মে মাসে পূর্ব ভারতে প্রথম হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপিত হয় আনন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। তার পরে অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন শুরু হয়। গত মাসে রাজ্যের প্রথম সরকারি হাসপাতাল হিসেবে সেই কাজ শুরু করে কলকাতা মেডিক্যাল।

এসএসকেএম সূত্রের খবর, এ দিন বারুইপুরের জয়প্রতিম ঘোষের দেহে প্রতিস্থাপিত হয় সজলের যকৃৎ। এসএসকেএমের গ্যাস্ট্রো-এন্টেরোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরী জানান, জয়প্রতিম সিরোসিস অব লিভারে আক্রান্ত ছিলেন। প্রতিস্থাপন পরে বছর আটত্রিশের ওই যুবক ফের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেন।

দুই বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সজলের কিডনি দু’জনের দেহে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। গ্রহীতারা আপাতত সুস্থ। তবে তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

কুড়ি বছরের সজলকে তাঁরা এ ভাবেই অন্যদের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে চান বলে জানান তাঁর বাবা সুমিতবাবু। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তাঁর পরিবার। তিনি বলেন, ‘‘অন্যের শরীরে এ ভাবেই বেঁচে থাকবে আমার ছেলে।’’ আর সজলের জেঠু অমিতবাবুর কথায়, ‘‘যাকে হারিয়েছি, তাকে তো আর পাব না। তবে ওর বিভিন্ন অঙ্গ দিয়ে আমরা কয়েকটি প্রাণ রক্ষা করতে পারব। এটাই বড় কথা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medical Health Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE