Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Lockdown

পড়াশোনা ব্যাহত, শিক্ষাবর্ষ বৃদ্ধির দাবি ডাক্তারিতে

২৪ মার্চ প্রথম পর্যায়ের লকডাউন শুরু হওয়ার আগে থেকেই সংক্রমণের আশঙ্কায় রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে স্নাতক স্তরের পঠনপাঠন অলিখিত ভাবে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল।

সংক্রমণের আশঙ্কায় রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে স্নাতক স্তরের পঠনপাঠন স্থগিত রয়েছে। প্রতীকী ছবি।

সংক্রমণের আশঙ্কায় রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে স্নাতক স্তরের পঠনপাঠন স্থগিত রয়েছে। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২০ ০৫:১৫
Share: Save:

কোভিড পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, কেউ জানে না। সংক্রমণের আশঙ্কায় রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে স্নাতক স্তরের পঠনপাঠন স্থগিত রয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার মতো অনলাইনে ডাক্তারিরও ক্লাস নেওয়া হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, চিকিৎসাবিদ্যার মূল কথা তো রোগ পর্যবেক্ষণ। সে-ক্ষেত্রে অনলাইনে ডাক্তারির পড়াশোনা কি আদৌ সম্ভব? সদুত্তর মিলছে না। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষাবর্ষের মেয়াদ বৃদ্ধির দাবি উঠছে।

২৪ মার্চ প্রথম পর্যায়ের লকডাউন শুরু হওয়ার আগে থেকেই সংক্রমণের আশঙ্কায় রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে স্নাতক স্তরের পঠনপাঠন অলিখিত ভাবে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। লকডাউনের পরে তাতে সরকারি সিলমোহর পড়ে যায়। বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে অনলাইনে ডাক্তারির ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নিচ্ছেন মেডিক্যাল কলেজগুলির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসকেরা। কিন্তু ওই পদ্ধতিতে ডাক্তারির পড়াশোনা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ছে বলে জানাচ্ছেন স্নাতক স্তরের পড়ুয়ারা।

ডাক্তারির পড়ুয়াদের একাংশের কথায়, ‘‘রাজ্যের সর্বত্র ইন্টারনেট পরিষেবা ভাল নয়। ফলে অনেক ছাত্রছাত্রী অনলাইনে ক্লাস করতে পারছেন না। সর্বোপরি ডাক্তারিতে হাতে-কলমে শিক্ষাই আসল। সেটাই তো হচ্ছে না।’’ অন্য এক দল পড়ুয়ার বক্তব্য, এমবিবিএসে ক্লিনিক্যাল পোস্টিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। দু’মাস ধরে সেটা বন্ধ রয়েছে। করোনা সংক্রমণ যে-ভাবে বাড়ছে, তাতে কবে ওই পোস্টিং দেওয়া যাবে, তা-ও স্পষ্ট নয়।

আরও পড়ুন: কোভিড পরীক্ষা বাড়াতে কিছু রাজ্যে ‘ট্রু-ন্যাট’ পাঠাচ্ছে কেন্দ্র

আরও পড়ুন: ঘরবন্দি থেকে করোনা-জয় পরিবারের

এই অবস্থায় শিক্ষাবর্ষের মেয়াদ বাড়ানোর দাবিতে অনলাইনে পড়ুয়াদের সই সংগ্রহ করে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার বোর্ড অব গভর্নর্স, রাজ্য স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিচ্ছেন স্নাতক স্তরের ডাক্তারির ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। এই দাবির সমর্থনে এমসিআই এবং স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েছে রাজ্য হেল্‌থ সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশনও। ওই সংগঠনের তরফে চিকিৎসক-শিক্ষক অর্ণব সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘একে তো অনলাইনে ডাক্তারি পড়ানো খুবই মুশকিল। তার উপরে কী ভাবে ক্লাস হবে, সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা না-থাকায় এক-একটি মেডিক্যাল কলেজ এক-এক ভাবে ক্লাস করছে।’’

শিক্ষাবর্ষ সম্প্রসারণের দাবিতে সরব কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়ারাও। তাঁদের বক্তব্য, এই কলেজ কোভিড হাসপাতাল হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন বিভাগে হাতেকলমে শিক্ষা শিকেয় উঠেছে। সেখানকার মেডিসিনের এক পিজিটি-র কথায়, ‘‘আমরা শিখি মূলত রোগী দেখেই। কিন্তু করোনার জন্য সাধারণ রোগী ভর্তি না-হওয়ায় সেটা হচ্ছে না। সার্জারির পিজিটি অস্ত্রোপচার করতে পারছেন না। কার্ডিয়োলজি, ইউরোলজি-সহ সব বিভাগেরই এক অবস্থা।’’

রাজ্যের এক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের প্রশ্ন, ‘‘অনলাইনে ডাক্তারির পাঠ একটা পর্যায় পর্যন্ত চলতে পারে। কিন্তু রোগী না-দেখলে এমবিবিএসের পড়ুয়ারা শিখবে কী করে?’’ সম্প্রতি রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজের ডিরেক্টর, অধ্যক্ষ এবং বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়। এমবিবিএসের পরীক্ষা হওয়ার কথা সেপ্টেম্বরে। ডাক্তারির পড়ুয়াদের উদ্বেগ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাজেন পাণ্ডে বলেন, ‘‘অ্যাডভাইসরি রুল তো আছে। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ যদি জানান, যথেষ্ট থিয়োরি এবং প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস হয়েছে, তা হলে পরীক্ষা হবে। নইলে এমনিতেই পিছিয়ে যাবে।’’ আর শিক্ষাবর্ষের মেয়াদ সম্প্রসারণের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এমসিআইয়ের বোর্ড অব গভর্নর্স এই বিষয়ে পরামর্শ চাইলে আমাদের মতামত জানাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE