উৎপাদন পর্যাপ্ত বলেই আলু রফতানির কথা ভাবা হয়েছে। কিন্তু অন্য রাষ্ট্র যেমন-তেমন আলু তো নেবে না। মান উঁচু হওয়া চাই। আর রফতানিযোগ্য সেই উচ্চ মানের আলু চাষের জন্য চাই আলাদা জমি। পাকাপাকি ভাবে এ বার সেই জমি চিহ্নিতকরণে নামল রাজ্য সরকার।
নবান্ন সূত্রের খবর, প্রথম ধাপে পাঁচটি জেলায় এক হাজার একর করে মোট পাঁচ হাজার একর জমি চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই জেলাগুলি হল হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম আর পশ্চিম মেদিনীপুর। প্রথম থেকেই সব দিক থেকে গুণমান বজায় রেখে যাতে সুস্বাদু ও জীবাণুমুক্ত রফতানিযোগ্য আলু উৎপাদন করা যায়, তার জন্য কৃষিবিজ্ঞানী থেকে সরকারের বিভিন্ন দফতরের পদস্থ কর্তাদের নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
উদ্বৃত্ত আলু বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে কয়েক বছর ধরে ভাবনাচিন্তা চলছে। মূল উদ্দেশ্য, আলুচাষিদের আয় বাড়ানো এবং বেশ কিছু ব্লকে রফতানিযোগ্য আলু চাষের পরিবেশ তৈরি করা। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় আলু গবেষণা কেন্দ্র পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবে। রফতানির ব্যাপারে রাজ্যের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সংস্থা কৃষিপণ্য রফতানি উন্নয়ন পর্ষদ (অ্যাপিডা)-কে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।
রাজ্যের কৃষি দফতরের পদস্থ কর্তা, দুই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী, জীবাণুবিজ্ঞানী এবং সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দফতরের প্রতিনিধিরা সম্প্রতি কেন্দ্রীয় আলু গবেষণা কেন্দ্রের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে নবান্নে বৈঠক করেন। তাতে নেতৃত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার। সেখানে ঠিক হয়, জমি বাছাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে চিহ্নিত করা হবে কৃষকদেরও। তার পরে মাটি পরীক্ষা। রফতানিযোগ্য আলু চাষের ক্ষেত্রে সব কিছুর আগে দরকার জীবাণুমুক্ত মাটি আর উচ্চ মানের বীজ। তাই রাজ্য নিজেদের উদ্যোগে মাটি, বীজ, জল পরীক্ষা করে সবুজ সঙ্কেত দিলে তবেই শুরু হবে সেই আলুর চাষ।
প্রথম ধাপে আলু রফতানির জন্য রাশিয়া ও শ্রীলঙ্কাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার মতো দেশে রফতানি করতে গেলে রাজ্যের আলুকে সে-দেশের নিয়ম অনুযায়ী কিছু কঠিন পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। তাই প্রথম থেকেই কড়া নজরদারিতে চাষ শুরুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। রাজ্য আগামী মরসুমে রফতানিযোগ্য আলুর চাষ শুরু করে দিতে চাইছে।
রাজ্যে আলু চাষের সমস্যা হল, বেশি উৎপাদন হলে অনেক সময় চাষিরা ন্যায্য দাম পান না। গত বছর বেশি উৎপাদন হওয়ায় শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী আইসিডিএস এবং মি়ড-ডে মিলের জন্য আলু কেনার পাশাপাশি চাষিদের ভর্তুকি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এই মরসুমে আবার আলু উৎপাদন কিছুটা কম হওয়ায় চাষিরা ভালই দাম পাচ্ছেন। সরকারও খুশি। উৎপাদন আর চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য রেখেই রফতানির নতুন বাজার তৈরি করতে চাইছে রাজ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy