Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মন্ত্রীর আশ্বাস, ছাত্রভোট নিয়ে তবু ধোঁয়াশাই

ছাত্রভোট করা যাবে কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই গেল বলে মনে করছে শিক্ষা মহল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:৫৪
Share: Save:

রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে ছাত্র নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কুয়াশা কাটাতে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজেই উদ্যোগী হলেন। বুধবার তিনি আশ্বাসও দিলেন, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পরেই সব কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দিন জানানো হবে। কিন্তু ওই সময়ে আদৌ ছাত্রভোট করা যাবে কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই গেল বলে মনে করছে শিক্ষা মহল।

সংশয়ের মূলে আছে পরের পর পরীক্ষা আর পঞ্চায়েতের আসন্ন নির্বাচন। রাজনৈতিক শিক্ষা শিবির মনে করছে, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ভোট না-হলে চলতি শিক্ষাবর্ষে ছাত্র নির্বাচন আর করাই সম্ভব নয়। কারণ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য শাখার স্নাতক স্তরের সেমেস্টার পরীক্ষা আছে জানুয়ারিতে। মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চলবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। তার পরেই পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। সর্বোপরি এরই মধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই এর মধ্যে ছাত্রভোটের সুযোগ কোথায়, থেকে যাচ্ছে প্রশ্ন।

রাজনৈতিক ছাত্র সংসদের বদলে এ বার অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল গড়া হবে বলে নিয়ম হয়েছে। বছর শেষ হতে চলল। তবু ছাত্রভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা না-করায় ওই নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। তিন বছর ধরে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হচ্ছে, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ছাত্রভোট করতে হবে। মঙ্গলবার পার্থবাবু জানান, বিজ্ঞপ্তির মানে এই নয় যে, ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই তা করাতে হবে। তাতেই অনিশ্চয়তার মেঘ ঘনায়।

সংশয় কাটাতে এ দিন বারাসতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনে পার্থবাবু বলেন, ‘‘গত বার ৩১ জানুয়ারির মধ্যে কলেজ নির্বাচন শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই এ বার ভোট কবে হবে, অনেকেই তা জানতে চাইছেন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পরেই নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হবে।’’ কিন্তু পরীক্ষা আর পঞ্চায়েত নির্বাচনের মধ্যে ছাত্রভোটের সুযোগ-সম্ভাবনা দেখছে না শিক্ষাজগৎ।

উত্তর ২৪ পরগনায়, বিশেষত বারাসতের বিভিন্ন কলেজে ছাত্র-সংঘর্ষ চলছে। কলেজে বহিরাগতদের আনাগোনা নিয়েও অভিযোগ বিস্তর। মুখ্যমন্ত্রীও কলেজ-কর্তৃপক্ষ এবং ছাত্রনেতাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন। পার্থবাবু এ দিন বলেন, ‘‘কলেজের ভিতরে বহিরাগতদের বন্দুকবাজি চলবে না। ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপার ছাত্রছাত্রীরাই বুঝে নেবে।’’

বিভিন্ন কলেজে অনলাইনে ভর্তি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ভর্তির জন্য ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি থেকে শুরু করে কলেজপড়ুয়াদের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। ভর্তিতে সংসদের যে কোনও ভূমিকা নেই, তা মনে করিয়ে দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘কলেজের সার্বিক উন্নয়ন ও পঠনপাঠনে জোর দিন। ভর্তি হবে শুধু মেধার ভিত্তিতেই। অনলাইন নিয়ে আরও কড়াকড়ি করছি। ছাত্র ভর্তিতে সংসদের কেউ হস্তক্ষেপ করবেন না। যদি তেমন খবর পাই, অভিযুক্তের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেবো।’’

মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে প্রশ্ন ফাঁস প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা শিক্ষকদের সম্মান করি। তাঁদের প্রতি সরকারের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। কিন্তু সব পেশাতেই কিছু লোক পুরো পেশাটাকেই কলুষিত করেন, নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করতে যান। তাঁদের প্রতি আমাদের অনাস্থা রয়েছে।’’ পার্থবাবুর দাবি, পরীক্ষা শুরুর পরেই কারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে, সেটা তাঁরা ধরে ফেলেছেন। ‘‘এ বার আরও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে বলে আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্ষদকে জানিয়েছি,’’ বলেন মন্ত্রী।

কলেজে গোলমাল থামানো যাচ্ছে না কেন? টিএমসিপি-র রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত এ দিন বলেন, ‘‘কলেজের অধ্যক্ষেরা সম্মাননীয় ব্যক্তি। তাঁদের ঘেরাও করে নয়, সম্মান দিয়ে রাজনীতি করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE