Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

২১ উতরোতে মমতার ভরসা কি প্রশান্ত কিশোর? নবান্নে দু’জনের বৈঠক

পেশাদার ‘ভোট-কুশলী’ প্রশান্ত কিশোর কি এ বার তৃণমূলের পরামর্শদাতা হচ্ছেন? বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ বৈঠকের পরে এই জল্পনা এখন তুঙ্গে। অন্য দিকে, বিজেপির কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলনেত্রীর মুখ দিয়ে আর ভোটে জেতা সম্ভব নয় বুঝেই এই উদ্যোগ।’’

পেশাদার ‘ভোট-কুশলী’ প্রশান্ত কিশোর কি এ বার তৃণমূলের পরামর্শদাতা হচ্ছেন?

পেশাদার ‘ভোট-কুশলী’ প্রশান্ত কিশোর কি এ বার তৃণমূলের পরামর্শদাতা হচ্ছেন?

নিজস্ব সংবাদদাতা
  কলকাতা ও পটনা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৯ ০২:৫৯
Share: Save:

পেশাদার ‘ভোট-কুশলী’ প্রশান্ত কিশোর কি এ বার তৃণমূলের পরামর্শদাতা হচ্ছেন? বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ বৈঠকের পরে এই জল্পনা এখন তুঙ্গে। অন্য দিকে, বিজেপির কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলনেত্রীর মুখ দিয়ে আর ভোট জেতা সম্ভব নয় বুঝেই এই উদ্যোগ।’’

কোনও রাজনৈতিক দলের ভোট পরিচালনার কৌশল ঠিক করে দেওয়া এবং প্রচার-পর্বকে সেই ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পেশাদারি দক্ষতা আছে প্রশান্ত কিশোরের। ২০১৪ সালে দেশে নরেন্দ্র মোদী, ২০১৫ সালে বিহারে নীতীশ কুমার, ২০১৭ সালে পঞ্জাবে অমরিন্দর সিংহ এবং সর্বশেষ ২০১৯-এ অন্ধ্রপ্রদেশে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে জগন্মোহন রেড্ডির দলের জয়— প্রতিটির নেপথ্যেই ছিল তাঁর ভূমিকা।

এ বার রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে তৃণমূল ধাক্কা খাওয়ার পরে মমতার সঙ্গে সেই প্রশান্ত কিশোরের বৈঠকের পিছনে ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের ভাবনা কাজ করছে বলে রাজনৈতিক মহলের অনুমান। নবান্নে তাঁদের ঘণ্টাখানেক বৈঠকে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছিলেন। সূত্রের খবর, অভিষেকের মাধ্যমেই প্রশান্ত কিশোর এ দিন মমতার কাছে পৌঁছন।

আরও পড়ুন: কে এই প্রশান্ত কিশোর? সাফল্যের রসায়নই বা কী? চিনে নিন রাজনীতির ‘মেঘনাদ’কে

সব ঠিক থাকলে শুক্রবার থেকেই তিনি রাজ্যে কাজ শুরু করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। যদিও এ দিনের বৈঠকের পর তৃণমূল কিংবা প্রশান্ত— কারও তরফ থেকেই এ বিষয়ে কোনও কথা বলা হয়নি। তবে, ঘনিষ্ঠ মহলে প্রশান্ত জানিয়েছেন, তৃণমূলের দায়িত্ব নিতে তাঁর আপত্তি নেই। সর্বভারতীয় স্তরে তৃণমূলনেত্রীর জনপ্রিয়তা যে আছে, তা তাঁর সংস্থার সমীক্ষাতেই ধরা পড়েছিল।

পেশাদার প্রশান্তের সঙ্গে তৃণমূলের কত টাকার চুক্তি হয়েছে বা হবে, সে সম্পর্কেও এ দিন কিছুই জানা যায়নি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রশান্তকে ডাকার কথা ভেবেছিল তৃণমূলের একাংশ। কিন্তু সে সময় মমতা জানিয়েছিলেন, পেশাদার স্ট্র্যাটেজিস্ট নিয়োগ করার মতো অর্থ তৃণমূলের নেই। তা ছাড়া, এ রাজ্যে কৌশলী এনে ভোট করতে হয় না বলেও দাবি করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। তাঁর বক্তব্য ছিল, রাজ্যের ভোটারদের কাছে তাঁর মুখই যথেষ্ট।

ভোট-কৌশলী

•২০১৪-র লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদীর কোর টিমের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য
•২০১৫-এ বিহারে নীতীশ-লালু জোটের জয়ের কারিগর
•২০১৭-এ পঞ্জাবে কংগ্রেসের ভোট-কৌশল ঠিক করে দেন
•অন্ধ্রে এ বার জগন্মোহনের জয়ের কৌশলও তাঁরই তৈরি

লোকসভা ভোটে বিজেপির উত্থান কি মমতার সেই ‘আত্মবিশ্বাসে’ চিড় ধরিয়েছে? প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘দিদিমণির মুখ যে রাজ্যের মানুষ আর নিচ্ছেন না, সেটা বুঝতে পেরেছেন বলেই হয়তো উনি পেশাদার স্ট্র্যাটেজিস্ট ভাড়া করছেন। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু প্রশান্ত কিশোর কেন, স্বয়ং ভগবানও তাঁকে বাঁচাতে পারবেন না। এ রাজ্যের মানুষ ওঁকে প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করেছেন।’’

সূত্রের খবর, প্রথামিক ভাবে ২০১৯-এ তৃণমূলের ভোট ক্ষয়ের পর্যালোচনা করবেন প্রশান্ত। তার উপর ভিত্তি করেই আগামী বছরে কলকাতা পুরসভা-সহ একাধিক পুরসভার নির্বাচন এবং ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের কৌশল ঠিক করবেন।

প্রচার-বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করে ভোটের ময়দানে বিরোধীকে পরাস্ত করাই প্রশান্তের মুন্সিয়ানা। লোকসভা ভোটের ‘ধাক্কা’ সামলাতে এবং জনসংযোগ বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে তৃণমূলও। নির্বাচনে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রচার বিজ্ঞানকে তারা ব্যবহার করতে চাইছে।

কী ভাবে কাজ করেন প্রশান্ত? ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই মোদীর ‘কোর টিমে’ সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন প্রশান্ত। মোদী কী ভাবে সংবাদমাধ্যমকে সামলাবেন, সোশ্যাল নেটওয়ার্কে বিজেপি কোন বিষয়ে লিখবে— সবটাই ঠিক করতেন তিনি। এক জাতীয় সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিতে দিতে মেজাজ গরম করে উঠে গিয়েছিলেন মোদী। শোনা যায়, সেই সাক্ষাৎকার একাধিকবার মোদীকে দেখিয়ে ‘ত্রুটি’ চিহ্নিত করে দিয়েছিলেন প্রশান্ত।

ইদানীং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা, প্রতিক্রিয়া নিয়েও রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা। পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, তৃণমূলনেত্রী এবং তাঁর দলের নেতাদেরও একই ভাবে পথ দেখানোর চেষ্টা করবেন প্রশান্ত।

তবে তিনি দায়িত্ব নিলে দলের নেতাদের যে তাঁর কথা মেনে চলতে হবে, সে কথাও ঘনিষ্ঠ বৃত্তে জানিয়েছেন প্রশান্ত। উল্টো দিকে, তৃণমূল নেতারাও জানতে চেয়েছেন, প্রশান্ত কী ভাবে দল বা নেতাদের সাহায্য করবেন? প্রশান্ত নেতাদের বলেছেন, রাজনৈতিক দলের প্রচারে সবসময় শৃঙ্খলা থাকে না৷ তাঁর সংস্থা সেটাই নিয়ন্ত্রণ করবে। বলে দেবে, বক্তৃতায় কোন কোন বিষয়ে কথা বলা উচিত৷ কী ভাবে প্রতিক্রিয়া সামলাতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন বিষয় তুলতে হবে। কী ভাবে ফেসবুক-টুইটারে মতামতের স্রোত নিজেদের দিকে ঘোরাতে হবে৷

যদিও প্রশান্ত যে সব সময় সফল, সে কথাও বলা যায় না। বিজেপির দাবি, অসম এবং উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রশান্ত। সেখানে তাঁর কৌশল কাজে আসেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE