শিখা গোমস্তা।
চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে মঙ্গলবার রাতে একের পর এক হাসপাতাল ঘুরেও কোথাও ভর্তি করা যায়নি তাঁকে। বুধবার কার্যত বিনা চিকিৎসায় শিখা গোমস্তা (৪০) নামের ওই মহিলার মৃত্যু হল।
শুধু শিখাই নন, বিনা চিকিৎসায় রোগীমৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে মেদিনীপুর ও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও। মেদিনীপুরে মারা গিয়েছেন অশোক হাজরা এবং ব্রজেন দণ্ডপাট। বর্ধমানে মৃত্যু হয়েছে উডির মোল্লা নামের এক ব্যক্তির।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘুটিয়ারি শরিফ এলাকার লক্ষ্মীনারায়ণপুরের বাসিন্দা শিখা মঙ্গলবার সকালে জ্বর ও খিঁচুনি নিয়ে ঘুটিয়ারি শরিফ ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালে আসেন। সেখান থেকে তাঁকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকায় চিকিৎসকেরা তাঁকে কলকাতার চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ শিখাকে নিয়ে কলকাতায় রওনা হন আত্মীয়েরা। তাঁদের অভিযোগ, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁদের ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। তার পরে এনআরএস, শম্ভুনাথ পণ্ডিত-সহ কলকাতার কয়েকটি সরকারি হাসপাতাল ঘুরে রাত ৩টে নাগাদ ফের ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে শিখাকে ফেরত আনা হয়। সেখানেই বুধবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার বিমান সরকার বলেন, “হৃদপিণ্ডে সংক্রমণ ও একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ না করার কারণেই মৃত্যু হয়েছে ওই মহিলার।’’
মৃতার ভাইপো শ্যামল গোমস্তা বলেন, “কলকাতায় একের পর এক সরকারি হাসপাতালে গিয়েছি আমরা। আমরা গরিব, কোনও বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে ভর্তি করাতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়েই ভোরে ক্যানিংয়ে ফিরে আসি। কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পেলে, এমন ঘটনা ঘটত না।’’
চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে রোগীমৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও। অশোক হাজরা নামে এক যুবক মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে মারা যান। তাঁর দাদা নবকুমারের দাবি, ‘‘মঙ্গলবার দিনভর ভাইয়ের চিকিৎসা হয়নি। ডায়ালিসিস হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। স্যালাইন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।’’ বুধবার ভোরে মারা যান বছর ষাটের ব্রজেন দণ্ডপাট। তাঁর ছেলে মানিকের দাবি, ‘‘বাবা শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। অথচ ডাক্তার দেখলই না।’’ মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, ‘‘বুধবার হাসপাতালে কয়েকজন মারা গিয়েছেন। তবে কোনও লিখিত অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।’’
বুধবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রাধারানি ওয়ার্ডে কিডনি সমস্যা নিয়ে ভর্তি থাকা বাঁকুড়ার কোতলপুরের উজির মোল্লা (৫০) মারা গিয়েছেন। তাঁর পরিজনদের অভিযোগ, দু’দিন ধরে ওষুধ, ইঞ্জেকশন কিছুই দেওয়া হয়নি তাঁকে। বিনা চিকিৎসাতেই মারা গিয়েছেন উনি। যদিও অভিযোগ মানেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, শিক্ষক-চিকিৎসকেরা দায়িত্ব সামলে পরিষেবা দিয়েছেন।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy