Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এজলাসে নাস্তানাবুদ

রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বল: (সিবিআই ৪৬১টি মামলা এখনও হাতে নেয়নি, এই প্রসঙ্গে) ১৬ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের ডিজিপি-কে চিঠি লিখে সিবিআই জানিয়েছে, যে সব মামলায় চার্জশিট পেশ হয়ে গিয়েছে, সেগুলি তারা আর তদন্তের প্রয়োজন বোধ করছে না। ওই সব মামলায় রাজ্য পুলিশও তদন্ত করছে না। শুনানি হচ্ছে না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আদালতের নজরদারির সম্ভাবনা খোলা রাখা ছিল। আমরা সেটাই চাইছি।

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৪
Share: Save:

স্থান: সুপ্রিম কোর্ট

এজলাস: বিচারপতি টি এস ঠাকুর ও বিচারপতি সি নাগাপ্পনের বেঞ্চ

সময়: বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো ৩৫ মিনিট

রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বল: (সিবিআই ৪৬১টি মামলা এখনও হাতে নেয়নি, এই প্রসঙ্গে) ১৬ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের ডিজিপি-কে চিঠি লিখে সিবিআই জানিয়েছে, যে সব মামলায় চার্জশিট পেশ হয়ে গিয়েছে, সেগুলি তারা আর তদন্তের প্রয়োজন বোধ করছে না। ওই সব মামলায় রাজ্য পুলিশও তদন্ত করছে না। শুনানি হচ্ছে না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আদালতের নজরদারির সম্ভাবনা খোলা রাখা ছিল। আমরা সেটাই চাইছি।

বিচারপতি ঠাকুর: আপনি কে?

সিব্বল: আমি রাজ্য সরকারের আইনজীবী। আমরা চাই সত্যিটা সামনে আসুক।

বিচারপতি ঠাকুর: আপনারা তো আগে সত্যিটা সামনে আনেননি। এখন চিন্তিত কেন? সিবিআই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই সব মামলার তদন্ত না করার। কেন সিবিআইকে চাপ দিচ্ছেন? আপনারা শুনানি চালান।

সিব্বল: ম্যাজিস্ট্রেট ওই সব মামলা শুনতে চাইছেন না।

বিচারপতি ঠাকুর: আপনারা সেশন কোর্টে যান। আমাদের থেকে কী চাইছেন?

সিব্বল: আনন্দবাজার পত্রিকা লিখছে, মন্ত্রীকে গ্রেফতারের পর কী প্রশ্ন করা হয়েছে। তিনি কী উত্তর দিয়েছেন। (খবরের অনুবাদ পড়ে শুনিয়ে) সিবিআই সূত্রকে উদ্ধৃত করে লেখা হচ্ছে। আগে থেকেই লিখে দিচ্ছে, আরও নেতা-মন্ত্রী গ্রেফতার হবেন। যা খবর বের হচ্ছে, তা-ই মিলে যাচ্ছে।

বিচারপতি ঠাকুর: সিবিআই তদন্ত চেয়ে যে মামলা হয়েছিল, তার নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে। সিবিআই তদন্তে অবহেলা করলে আদালতের নজরদারির সম্ভাবনা খোলা ছিল। এখন সেই তদন্তের রাজনৈতিক ফলাফল কী হচ্ছে, তা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাতে রাজি নই।

সিব্বল: কোনও রাজনীতির কথা বলতে চাইছি না। কিন্তু সিবিআই সব তথ্য ফাঁস করে দিচ্ছে।

বিচারপতি ঠাকুর: আপনি কি চাইছেন যে, সিবিআই কীভাবে মিডিয়াকে খবর দেবে, আমরা তার একটা নকশা তৈরি করে দিই?

সিব্বল: সংবাদমাধ্যমেই সালিশি পর্ব-বিচার প্রক্রিয়া চলছে। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও হয়েছিল।

বিচারপতি ঠাকুর: আপনি তখন সওয়াল করেননি কেন?

সিব্বল: আমি তখন ওকালতি করছিলাম না।

বিচারপতি ঠাকুর: মিডিয়ায় যে সব খবর বেরোয় তার কিছু ঠিক, কিছু নয়। কিছু নির্ভুল, কিছু ভুল।

সিব্বল: আদালত এই বিষয়টি দেখুক। আপনাদের দূরদৃষ্টি রয়েছে।

বিচারপতি ঠাকুর: আপনারা কি সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে বাছাই করা তথ্য ফাঁসের অভিযোগ আনছেন?

সিব্বল: না, তা নয়।

বিচারপতি ঠাকুর: কোনও অভিযুক্ত এ সব নিয়ে চিন্তিত হলে বুঝতে পারি। রাজ্য সরকার কেন মাথা ঘামাচ্ছে? তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদকেরই বা কী বক্তব্য, আপনারা কি এই মামলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

তৃণমূলের আইনজীবী বিবেক টাঙ্খা: আমরা এই মামলায় অংশীদার হতে চাই।

বিচারপতি ঠাকুর: সিবিআই তদন্তে কারও কোনও সুরাহা চাওয়ার থাকলে সেশন কোর্ট বা হাইকোর্টে যান। এটাকে রাজনৈতিক লড়াইয়ের মঞ্চ বানাবেন না।

টাঙ্খা: আমরা আদালতের নজরদারি চাইছি।

বিচারপতি ঠাকুর: সিবিআই যদি ঠিক মতো তদন্ত না করে, তা হলে আদালতের নজরদারির কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ তো ওঠেনি। যদি সিবিআই কোনও বেআইনি কাজ করে, তদন্তে থার্ড ডিগ্রি প্রয়োগ করে, তা হলে সেশন কোর্টে যান।

টাঙ্খা: এক জন সাংসদ সিবিআইয়ের নোটিস পাওয়ার আগেই সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে তদন্তে কী হবে, আনন্দবাজার পত্রিকা সব বলে দিচ্ছে। তৃণমূল দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বিচারপতি ঠাকুর: অভিযোগটা কী? পরিকল্পনামাফিক তথ্য ফাঁস?

টাঙ্খা: কী করে খবর বের হচ্ছে, জানতে চাওয়া হোক।

বিচারপতি ঠাকুর: আপনারা রিপোর্টারদের কাছে জানতে চাননি, ওঁরা কোথা থেকে খবর পান? তদন্ত ফাঁস নিয়ে সিবিআইয়ের বক্তব্য কী?

সলিসিটর জেনারেল (সিবিআইয়ের আইনজীবী) রঞ্জিৎ কুমার: সিবিআইয়ের তদন্তকারী দলে রাজ্য পুলিশের অফিসাররাও আছেন। ১০ জন ইনস্পেক্টরের মধ্যে ৫ জনই রাজ্য পুলিশের। রাজ্য পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টরও রয়েছেন। কে তথ্য ফাঁস করে দিচ্ছেন, আমরা জানি না।

বিচারপতি ঠাকুর: রাজ্য কী চাইছে? মিডিয়ার উপর ‘গ্যাগ অর্ডার’?

সিব্বল: আবেদনে বলেছি। কিন্তু আমরা এটার উপর জোর দিচ্ছি না।

রঞ্জিৎ: রাজ্য সরকার বলছে আমাদের গাফিলতিতে মূল অভিযুক্ত কয়েকটি মামলায় জামিন পেয়ে গিয়েছে। সে জামিন পেয়েছে আমরা তদন্ত শুরুর আগে। তখন কারা তদন্ত করছিল? কারা জামিনের বিরোধিতা করেনি? আদালতের নির্দেশে আমরা বৃহত্তর ষড়যন্ত্র ও সারদা কেলেঙ্কারির অর্থ কোথায় গিয়েছে, তার তদন্ত করছি।

বিচারপতি ঠাকুর: তদন্ত শেষ করার কোনও সময়সীমা রয়েছে?

রঞ্জিৎ: সারদার ৭৬টি মামলা একসঙ্গে করে আমরা ৪টি মামলা দায়ের করেছি। সারদা ছাড়া অন্যান্য সংস্থার বিরুদ্ধে ৬৫টি মামলা একজোট করে ৯টি মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে। কোনও সময়সীমা বলা খুব কঠিন। রোজ নতুন তথ্য সামনে আসছে। কেলেঙ্কারির সঙ্গে যোগাযোগের তালিকা যথেষ্ট দীর্ঘ।

বিচারপতি ঠাকুর: এখন কেলেঙ্কারির আকার সম্পর্কে কিছু জানা গিয়েছে? সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার সময় ১০ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি ছিল। এক লক্ষ বিনিয়োগকারী ছিল।

রঞ্জিৎ: এখন ১৮ লক্ষ বিনিয়োগকারীর সন্ধান মিলেছে। সারদায় ২৪০০ কোটি টাকার তথ্য সামনে এসেছে। কিছু বিদেশি সংস্থার যোগাযোগ মিলেছে।

বিচারপতি ঠাকুর: আপনারা কি তথ্য ফাঁস করছেন? সিবিআই কী বলছে?

সিবিআইয়ের ডিআইজি শঙ্খব্রত বাগচী: আমরা মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলি না। যা তথ্য দেওয়ার, তা দিল্লির সিবিআইয়ের সদর দফতর থেকেই দেওয়া হয়। বিশ্বাসযোগ্যতা আনতে সিবিআইকে উদ্ধৃত করে সংবাদ বের হয়। কোন খবর ঠিক, কোনটা ভুল তা আমরা বলতে যাই না।

বিচারপতি ঠাকুর: সাংবাদিকদের তো অনুমান ক্ষমতাও রয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী-তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলার আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য: সিবিআইয়ের তদন্তে আসলে রাজ্য সরকারের গাত্রদাহ হচ্ছে।

বিচারপতি ঠাকুর: আমরা মিডিয়াকে বাধা দিতে পারি না। মিডিয়া তাদের কাজ করছে। সিবিআই তাদের কাজ করছে। আমরা আমাদের কাজ করি। আদালত অবমাননার মামলা কেন?

বিকাশ: রাজ্যের আইনমন্ত্রী ধর্নায় বসেছেন। মুখ্যমন্ত্রী রাস্তায় নেমেছেন। মানুষকে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার ডাক দিচ্ছেন।

বিচারপতি ঠাকুর: সিবিআই তা হলে বলুক যে তাদের তদন্তে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সিবিআই, আপনারা কোনও বাধা পাচ্ছেন?

রঞ্জিৎ: ডিআইজি আমাকে জানালেন, অভিযুক্তদের আদালতে পেশের সময় সিবিআইকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। টাঙ্খা যাদের হয়ে সওয়াল করছেন (তৃণমূল), তারাই এই কাজ করছে।

বিচারপতি ঠাকুর: আপনারা আইনি পথ নিন। ধর্নার বিষয়টি আমরা বিচার প্রক্রিয়ার অন্তর্গত করতে চাইছি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saradha scam supreme court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE