জনজোয়ার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
‘পাঁচ বছর আগে লাস্ট দেখেছি, এক বার নামতেই হবে বলে দিচ্ছি!’ চেঁচিয়ে উঠল বাজখাঁই নারীকণ্ঠ। মফস্সলি গলির বাঁকে বাঁকে ঘাটাল লোকসভার প্রার্থীর ছবি হাতেই অবরোধের ভঙ্গি। ধবধবে এসইউভি অগত্যা ব্রেক কষল। শ্যামলা ছিপছিপে বঙ্গযুবার প্রসারিত হাত দুটো যেন খিমচে ধরেছে অজস্র হাত। ডিজ়াইনার রিস্টওয়াচের সাদা ব্যান্ডের ধারে কিংবা ডান হাতে ‘রুক্মিণী’ লেখা ট্যাটুর আশপাশে ভালবাসার চিহ্ন হিসেবে গাদাগুচ্ছের নখের আঁচড়। মুখের হাসিটা তবু টাল খেতে দিচ্ছেন না দেব।
একটু বাদে বাড়ানো হাতটাই বদলে গেল নমস্কারের মুদ্রায়। তাতেও কব্জি ধরে টানাটানি। সুপারস্টারকে আগলাতে গাড়ির পিছনের সিট থেকে শরীর বার করে মরিয়া সাদা পোশাকের পুলিশ। তবু এ উদ্বেল ফ্যানতরঙ্গ রোধিবে কে!
তুমি পাথর না কি প্রাণ
প্রথম ভোটযুদ্ধে প্রধানত রোড শোয়ে দাঁড়িয়ে ধুলো খেয়েই বাজিমাত করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য নায়ক। তিনি যে নিছকই পাথরের মূর্তি নন, এ বার সেটা প্রমাণ করাও চ্যালেঞ্জ। এখনও তিনি সভায় ঢুকতেই শুরু, দেড় মিনিটের ভোট স্পেশ্যাল ঝিনচ্যাক র্যাপ। অতিনাটকীয় ফিল্মি ঢঙেই ভোটের আর্জি তাতে। তবু শনিবার পাঁশকুড়া ব্লকের ধুলিয়াপুর, আমড়াগোহাল, মগরাজহাট বা হাউড়ের পুরুলবাজারে ঘুরে মালুম হল, ঈশ্বরের মুখে কিছু কথাও ইদানীং ফুটছে। নাম না করে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর ব্যক্তিগত আক্রমণের জবাব বা সাংসদ হিসেবে নিজের ভূমিকার কৈফিয়ত তো দেব দিচ্ছেনই! তবু তাঁর ব্রহ্মাস্ত্র, সেই দেবসুলভ সরল হাসি।
নায়কের চিবুকে না কামানো দাড়িতে এ বার গুঁড়ি গুঁড়ি হাল্কা রুপোলি ঝিলিক। তাতে কী? সামার কুল সাদা শার্ট, নীল জিনসধারীকে দেখে মেয়েরা আত্মহারা। তাঁদের চোখের তারা বলছে, পাঁচ বছরেও পাগলু বা চ্যাম্পের ম্যাজিক ফিকে হয়নি।
ঠাকুমা ও নাতি
অঞ্চল বা ওয়ার্ড নেতাদের সৌজন্যে ফুল, উত্তরীয় জনতার মধ্যে ছুড়ে দিয়েছেন অকাতরে।
তবে সেরা পুরস্কারটা পেলেন ধুলিয়াপুরে চড়া রোদে লাঠি ঠুকঠুকিয়ে আসা ‘ঠাকুমা’ই। দেবের জন্য দু’ঘণ্টা মাটিতে ঠায় বসে বৃদ্ধা। মিটিংয়ের বাঁধা চিত্রনাট্য ভেঙেচুরে হঠাৎ লাফ দিয়ে স্টেজ থেকে তাঁর সামনে পড়লেন নায়ক। নিচু হয়ে বসে কপালে চুমু, গালে আদর ঠাকুমাকে! শিহরিত প্রমীলা-বাহিনী।
ঠাকুমার সঙ্গে
কিন্তু প্রভাতী সংঘের সেই মাঠে নাকি গত বার আশপাশের ছাদেও ভিড় উপচে পড়েছিল? দেবের দলীয় সহযোগীদের দাবি, গ্রামে গ্রামে সভা এ বার বেশি হচ্ছে বলেই ভিড়টা ছড়িয়ে পড়েছে। দেখছেন না, তস্য গলিতে দেবকে বাহন পাল্টে ছোট গাড়িতেও উঠতে হল। রোজই ছ’টা-আটটা সভা চলছে। শনিবার বাবা গুরুপদ অধিকারীও দেবের সঙ্গী হলেন।
দেবতার ভোগ
সাউথ সিটির ফ্ল্যাট থেকে কেশপুরের বাড়ির ভোটকালীন ডেরায় সরে তিনি এখন আপাদমস্তক ‘মেদ্নিপুরী’ যুবক। দুপুরে মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের গিন্নি সুমনাবৌদির স্নেহে তাই পুরোপুরি বশীভূত। ‘দেবটা বরাবরই একটু খেতে ভালবাসে’ বলে বৌদি যা রেঁধেছেন, তা এলাহি ভোজ বললে কম বলা হয়! মেদিনীপুরের বুলিতে চিংড়া অর্থাৎ গলদার মালাইকারি, দেশি মুরগি তো আছেই, ঝিঙে দেওয়া ডাল, পোস্তবাটা ঠাসা করলা, গয়না বড়ি, মোচা, থোড় থেকে গেঁড়িপোস্ত, পাবদা, দেশি মাগুর— সব উড়ে গেল। কই মাছটা নিজে হাতে বেছে দিলেন বৌদি।
এলাহি ভোজ
দেব বলেন, ‘‘বছরভর ওয়র্ক আউট, ডায়েটে ছাড় একটা মাস! দিনভর প্রচারের ফাঁকে দুপুরটা ঠেসে এনার্জি ভরে নিচ্ছি।’’ বৌদি বলেন, ‘‘ভাত একটু কম খায়। তবে চিতি কাঁকড়ার তেল-ঝালটাও মুছে খেয়েছে!’’ শেষপাতেও বৌদির স্বরচিত ক্ষীরপুলি। প্রতাপপুরের অতিথিশালায় এসি ঘরটায় এর পরে আধ ঘণ্টাটাক নিভৃতি। পোশাক না পাল্টেই বিছানায় বসে আনন্দ প্লাসের সঙ্গে আলাপচারিতা সারলেন।
বিকেল চারটেয় পরের সভার জন্য ডাকাডাকি! চোখে-মুখে একটু জল দিয়েই তরতাজা মেকআপহীন নায়ক। তখনও চুলের ফাঁকে ভক্তদের ছুড়ে দেওয়া সকালের দু’-একটা ফুল। পায়ে স্নিকার্স গলিয়ে যিনি জনতার দরবারে গেলেন, তিনি ফিল্মি নায়ক হয়েও ঘাটালের ঘরের ছেলে দীপক অধিকারী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy