Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

লেডিজ় স্পেশ্যাল

সংখ্যায় কম হতে পারেন। দৃঢ়তায় কম নন! নতুন প্রজন্মের মহিলা পরিচালকদের উপরে আনন্দ প্লাস-এর স্পটলাইট সংখ্যায় কম হতে পারেন। দৃঢ়তায় কম নন! নতুন প্রজন্মের মহিলা পরিচালকদের উপরে আনন্দ প্লাস-এর স্পটলাইট

যশকে ছবির দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন শগুফতা

যশকে ছবির দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন শগুফতা

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯ ০১:১১
Share: Save:

মুম্বই ইন্ডাস্ট্রির তুলনায় অনুপাত হিসেবে খুবই কম। কিন্তু বাংলায় মহিলা পরিচালকের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। অপর্ণা সেনের পরে অনেক দিন কেউ সে ভাবে আসেননি। তার পরে এলেন সুদেষ্ণা রায়, নন্দিতা রায়। যদিও তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন এক জন করে পুরুষ পরিচালক। লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও তাই। আর রয়েছেন চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়। প্রথম ছবিতেই যিনি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। এঁদের উত্তরসূরিরাও তৈরি হচ্ছেন...

পৃথা চক্রবর্তী

পরিবারের সঙ্গে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কোনও যোগাযোগ তো ছিলই না, রানাঘাটের একটি মেয়ে কলকাতা শহরে এসে গোটা একটা বাংলা ছবি বানিয়ে ফেলবেন, এটাও অলীক ছিল! ‘মুখার্জিদার বউ’-এর পরিচালক পৃথা চক্রবর্তীর কাছে এটা স্বপ্নের মতো, ‘‘বিজ্ঞাপনের ছবি, কর্পোরেট ফিল্ম এসব করতাম ঠিকই। কিন্তু সেখান থেকে ফিচার ফিল্ম বানিয়ে ফেলব, এটা বছর তিনেক আগেও ভাবিনি!’’

একটা সময়ে ওয়ার্ল্ড ফিল্ম বলতে বুঝতেন ‘বেবিজ় ডে আউট’, ‘টাইটানিক’। মজা করে সে সব দিনের গল্প বলছিলেন পৃথা। ‘‘চোখ খুলল জার্নালিজ়ম-মাস কমিউনিকেশন পড়তে গিয়ে। এসআরএফটিআই-তে ফিল্ম এডিটিং পড়ার সময়ে তো দিগন্ত খুলে গেল।’’ মীরের সঙ্গে একটি শর্ট ফিল্ম করেছিলেন। সেটিই তাঁকে অনেকটা এগিয়ে দেয়। ডাক আসে নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। পৃথা ভালবাসেন সম্পর্কের গল্প বলতে। তাঁর ছবির গল্পে রয়েছে নিজের মায়ের জীবন থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণা।

মহিলাদের লড়াইয়ের গল্প বলছেন, কাজ করতে গিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি? ‘‘নারী-পুরুষ ভেদ না করে নন্দিতাদি-শিবুদা আমাকে এক জন পরিচালক হিসেবেই দেখেছেন,’’ মন্তব্য পৃথার।

বিদুলা ভট্টাচার্য

কিছু দিন আগে মুক্তি পেয়েছে তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ‘প্রেম আমার টু’। ছোট থেকেই কী করতে চান, তা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন বিদুলা ভট্টাচার্য। পরিবার থেকেও সমর্থন পেয়েছিলেন। ‘‘জার্নালিজ়ম-মাস কমিউনিকেশন পড়ার পরে চ্যানেলে কাজ করতে শুরু করি। প্রোগ্রাম ডিরেক্ট করতাম। তার পরে রাজদাকে (রাজ চক্রবর্তী) অ্যাসিস্ট করতেও শুরু করি।’’ বিদুলা ডকুমেন্টারি-শর্ট ফিল্মও পরিচালনা করেছেন আগে। তার পরে একটি চ্যানেলের জন্য ‘লাভ লেটার’ ছবিটি করেন। রোম্যান্টিক এবং ক্রাইম, এই দুটো ঘরানাই তাঁর বেশি পছন্দের।

ইন্ডাস্ট্রিতে ঠোঁটকাটা বলে সুখ্যাতি আছে বিদুলার। একটা সময়ে পকেটে ছুরি নিয়ে ঘুরতেন। প্রশ্ন করতে হেসে বললেন, ‘‘কেউ ঠিকমতো কাজ না করলে আমি বলবই। পরে মিটমাটও করে নিই। আর এখন গাড়িতে যাতায়াত করি বলে ছুরি রাখতে হয় না। দরকার পড়লে হাত আছে তো!’’ জানালেন, কাজ করতে এসে মহিলা হিসেবে তাঁর কোনও সমস্যা হয়নি। ‘‘আগে রোগা ছিলাম বলে অনেকে বাচ্চা ভাবত। এর বেশি কেউ সাহস পায়নি,’’ সপাট জবাব পরিচালকের।

দেবারতি গুপ্ত

ফিল্ম স্টাডিজ় নিয়ে পড়াশোনা করবেন শুনে তাঁর বাবা বলেছিলেন, ‘‘ফিল্ম আর স্টাডিজ় একসঙ্গে হয় না।’’

‘হইচই’, ‘কল্কিযুগ’, ‘কুহেলি’র পরিচালক দেবারতি গুপ্তের কথায়, ‘‘বাবা বলতেন এই পেশায় এক সময়ে হতাশা আসে। সেটা হয়তো ঠিক। কিন্তু সৃষ্টির আনন্দকেও উপেক্ষা করা যায় না।’’ মুক্তির অপেক্ষায় তাঁর পরের ছবি ‘অনেকদিন পরে’। বিভিন্ন ঘরানার ছবি নিয়েই কাজ করেছেন দেবারতি। কেরিয়ারের শুরুর দিকে বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়কে অ্যাসিস্ট করতেন। জানালেন, কাজ করতে তাঁর সে ভাবে সমস্যা না হলেও মহিলা পরিচালককে অনেকেই সিরিয়াসলি নেন না। ‘‘প্রযোজকের কাছে থ্রিলার গল্প নিয়ে গিয়েছি। তাঁর ভাবখানা এমন যে, এক জন মহিলা কী করে থ্রিলার বানাবেন! এই রকম অভিজ্ঞতাও হয়েছে,’’ বক্তব্য দেবারতির।

শগুফতা রফিক

ইনি বাকিদের চেয়ে একটু আলাদা। এমন একটা ভাষায় ছবি বানিয়ে ফেললেন, যাতে তিনি সড়গড় নন। শগুফতা রফিক নামটা মুম্বইয়ে পরিচিত হলেও বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন। মিমি-যশকে নিয়ে ‘মন জানে না’ তাঁর প্রথম ছবি। ‘উয়ো লমহে’, ‘রাজ়’, ‘মার্ডার টু’, ‘জিসম টু’-সহ ভট্ট ক্যাম্পের অনেক ছবির তিনি চিত্রনাট্যকার। রোম্যান্টিক-থ্রিলার ধরনের গল্প বলতেই বেশি পছন্দ করেন।

বাংলা ভাষা না জেনে ছবি বানিয়ে ফেললেন কী করে? ‘‘গল্প-সংলাপ যে ভাবে লিখেছি, ঠিক সে ভাবেই জিনিসটা বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। ভাষার তারতম্যে তো আর আবেগ বদলে যায় না,’’ বললেন তিনি।

শগুফতার সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ তাঁর বাবার সূত্রে। ‘‘আমি দত্তক সন্তান। আমার পালকপিতা আমাকে তাঁর পদবি ব্যবহার করতে দিয়েছেন। উনি আগে কলকাতায় থাকতেন।’’

অনেক বছর ধরে কাজ করলেও পরিচালনা এই প্রথম। মহিলা হিসেবে কাজ করতে কোনও সমস্যা হয়নি? ‘‘সে রকম কিছু নয়। তবে কোনও মহিলা নির্দেশ দিচ্ছেন, এটা মানতে হয়তো এখনও সমস্যা হয় অনেকের,’’ বললেন শগুফতা।

পুরুষশাসিত ইন্ডাস্ট্রিতে যতই বাধা আসুক, নিজেদের জায়গা ঠিকই তৈরি করে নেন মহিলারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cinema Tollywood Female Director
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE