অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়।
প্র: এখন তো আর ধারাবাহিক করছেন না?
উ: না। পরে যদি ভাল প্রস্তাব পাই, তা হলে দেখব। ছ’-সাতটা ধারাবাহিক তো হয়ে গেল। এখন সিনেমাতে মনোযোগ দিতে চাই। কমলেশ্বরদা’র ‘ককপিট’ করলাম। সামনে আরও কথাবার্তা চলছে।
প্র: হিন্দিতে ‘ভুতু’ করার প্রস্তাব এসেছিল তো?
উ: হ্যাঁ। তবে এখন মুম্বই যাওয়া সম্ভব নয়।
প্র: সর্বভারতীয় পরিচিতির লোভ ছেড়েদিলেন?
উ: সেপ্টেম্বর থেকে নতুন কয়েকটা কাজ শুরু হওয়ার কথা। সেগুলো বাতিল করতে পারব না। কপালে থাকলে ফের মুম্বইয়ে কাজের প্রস্তাব আসবে।
প্র: আপনি কপালে বিশ্বাসী?
উ: কিছুটা তো বটেই। নইলে আমি আজ যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখানে থাকার তো কথা নয় আমার। একটা সময় বেঁচে থাকব কি না সেটাই তো বড় প্রশ্ন ছিল।
প্র: সেই ড্রাগস নেওয়ার সময়ের কথা বলছেন?
উ: একেবারেই। সব কিছু থেকে বেরিয়ে এসে এখন কাজ করছি। দর্শক আমাকে ভালবাসছেন, এটাও কম পাওয়া নাকি!
প্র: এই ধরনের বিষয়গুলো সাধারণত লোকজন চেপে যেতে চান। অথচ আপনার মধ্যে লুকোছাপা নেই।
উ: সমস্যাটা বরাবরই চেপে এসেছে সমাজ। আর তা থেকেই বেড়েছে জিনিসটা। চিকিৎসা করালে ড্রাগসের কবল থেকেও বেরিয়ে আসা যায়। আধুনিক প্রজন্মের অনেকেই নেশার অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। আর আমরা সব কিছু চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছি। অনেকে আমাকে ফোন করে সাহায্য চান। তাঁদের ছেলে বা স্বামী ড্রাগস নিচ্ছেন। এঁদের সাহায্য করব না? তাই কলকাতা পুলিশ থেকে অ্যান্টি ড্রাগ ক্যাম্পেনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের প্রস্তাব দেওয়া হলে, এক কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।
প্র: এই অতীতের জন্য কখনও কাজের সমস্যা হয়নি?
উ: ইন্ডাস্ট্রির লোকে তো সবটা জানত। নেশাড়ুদের সমাজ অচ্ছুৎ মনে করে। কিন্তু আমাদেরও তো বাঁচার সুযোগ দরকার।
প্র: বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে একাধিক অনিন্দ্য। আপনাকে ‘বেলাশেষে’ বা ‘ট্যাটু’-অনিন্দ্য বলে উল্লেখ করা হতো। এখন সেটা দাঁড়িয়েছে ‘যে বিক্রমকে ধরিয়ে দিয়েছে’....
উ: এত জন সফল অনিন্দ্যর মাঝে যে আমিও আছি, এটা কম পাওনা নয়। তবে আমি বিক্রমকে ধরিয়ে দিইনি। চোখের সামনে ঘটা সত্যিটা বলেছি। ইচ্ছে করে বিক্রমকে ধরিয়ে দেওয়ার কোনও অভিপ্রায় ছিল না। শুধু চেয়েছিলাম, ও সত্যি কথা বলুক। এ নিয়ে বেশি কথা বলতে চাই না। বিষয়টা বিচারাধীন আর আমি একজন সাক্ষীও।
প্র: বিক্রম জেলে গেলেন। আবার ছাড়াও পেয়ে গেলেন।
উ: জানি না, ঘটনাটা ঠিক কোন দিকে গড়াবে। তবে আমার মতে, সমাজের কাছে বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমি ধরিয়ে না দিলেও বিক্রম ধরা পড়ত। ঘটনা থেকে বেরিয়ে আসার কোনও জায়গা ছিল না। সে রাতের পার্টিতে আমিও ছিলাম। সেটা অনেকে জানত। বিক্রমকে বাঁচাতে হলে পুলিশকে মিথ্যে কথা বলতে হতো। পরে সত্যিটা জানাজানি হলে আমি মিথ্যেবাদী হতাম। বিক্রমের সঙ্গে আমারও জেল হতে পারত।
প্র: এর মধ্যে বিক্রমের সঙ্গে কথা হয়েছে?
উ: অ্যাক্সিডেন্টের পর পরই হয়েছিল। তার পর আর হয়নি।
প্র: এর পর কি বিক্রমের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ হবে?
উ: ইন্ডাস্ট্রি খুব ছোট জায়গা। বেশি দিন কারও সঙ্গেই শত্রুতা থাকে না। সকলকেই কাজ করে খেতে হবে। বিক্রম কিন্তু মন থেকে জানে, অনিন্দ্য কোনও ভুল করেনি। আমি ওকে বন্ধু বলেই মনে করি। আচ্ছা, প্রসঙ্গটা এখানেই শেষ করি, প্লিজ।
প্র: ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আপনার তো এমনিতে কোনও যোগসূত্র নেই।
উ: চট্টোপাধ্যায় পদবি ছাড়া আর কিছু নেই (হাসি)! তবে অবশ্য কোনও সমস্যা হয়নি। বিরাট বড় কোনও চরিত্র হয়তো এখনও পাইনি। ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই পাব। আউটসাইডার হওয়া সত্ত্বেও রানাদা-সুদেষ্ণাদি, সৃজিতদা, কমলদা আমাকে দিয়ে ছবি করিয়েছেন। আমার বে়ডরুমে পরিচালকদের একটা সিক্রেট লিস্ট আছে। যাঁদের সঙ্গে আমি কাজ করতে চাই। তার মধ্যে ১০টায় টিক পড়ে গিয়েছে। বাকি পাঁচজনের সঙ্গে কাজ হবে আশা করি।
প্র: কেরিয়ার নিয়ে খুশি আপনি?
উ: অখুশি বলব না। তবে একটা জিনিস আমার খুব মনে হয়। ইন্ডাস্ট্রি এখনও আমাকে সে ভাবে সিরিয়াসলি নেয়নি।
প্র: কেন বলছেন?
উ: ঠিকঠাক ব্যাখ্যা দিতে পারব না। আসলে শুধু আমাকেই নয়, আমাদের প্রজন্মটাকে সিরিয়াসলি নেওয়া শুরু হয়নি। এই প্রজন্ম বলতে গৌরব, অর্জুন, ইন্দ্রাশিস, সাহেব, বিক্রমের কথা বলছি।
প্র: আবির, পরমব্রতদের পরবর্তী প্রজন্ম বলছেন তো?
উ: হ্যাঁ। আমার লোভ, চাওয়া-পাওয়া কম। কোনও মামা-কাকা না থেকেও যদি এতটা আসতে পারি, তা হলে নিশ্চয়ই আরও অনেক দূর যেতে পারব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy