Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Presents

কুবের উবাচ

মাসখানেক ধরে উৎসবে-আনন্দে সমস্ত আর্থিক পরিকল্পনার দফারফা হয়েছে অনেকেরই। বেহিসেবি খরচের ফলে তৈরি হওয়া ঘাটতি এ বার পূরণ করার পালা। শুভঙ্করের ঝুলিতে অবশ্য এখনও সঞ্চয় তেমন নেই। তবে দু’চোখে স্বপ্ন আছে। পূরণ হবে কী করে?

শৈবাল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৫ ০১:০০
Share: Save:

শুভঙ্কর (২৬) • বাবা (৫২) • মা (৪৬) • ভাই (২০)

বহুজাতিক সংস্থার কর্মী • মা-বাবার মেডিক্লেম করাতে চান • সঞ্চয় বাড়াতে মরিয়া
• দোতলা বাড়াবেন • তার পর বিয়ে • স্বপ্ন গাড়ির

নিট আয় (মাসে) ৩৭,০০০ • খরচ (মাসে) সংসার ১৮,০০০ • শিক্ষাঋণ ৩,০০০
• সঞ্চয় (মাসে) পিএফ ৩,০০০ • সম্পদ সেভিংস অ্যাকাউন্ট ৪৫,০০০

মাসখানেক ধরে উৎসবে-আনন্দে সমস্ত আর্থিক পরিকল্পনার দফারফা হয়েছে অনেকেরই। বেহিসেবি খরচের ফলে তৈরি হওয়া ঘাটতি এ বার পূরণ করার পালা। শুভঙ্করের ঝুলিতে অবশ্য এখনও সঞ্চয় তেমন নেই। তবে দু’চোখে স্বপ্ন আছে। পূরণ হবে কী করে?

আশার কথা এটাই যে, সমস্যার জায়গাটা সময় থাকতে বুঝেছেন তিনি। তাই শুরুতেই খোঁজ করেছেন রেকারিং ডিপোজিট, করসাশ্রয়কারী জীবনবিমা প্রকল্প ও পিপিএফের মতো সঞ্চয়ের বিভিন্ন পথের। তবে তাঁর লগ্নির বাদবাকি লক্ষ্যগুলির বেশির ভাগই স্বল্প মেয়াদি প্রয়োজনের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। চলুন কী করা যায় দেখি।

কর বাঁচাতে

শুভঙ্করের সর্বোচ্চ ১.৫ লক্ষ টাকা সঞ্চয়ে করছাড়ের লক্ষ্য পূরণ হতে পারে যে-সব লগ্নি থেকে, সেগুলি হল—

• টার্ম পলিসি: জীবনবিমা করতে হবে। তবে সঞ্চয়ের জন্য নয়, শুভঙ্করের আচমকা অনুপস্থিতিতে পরিবারের ভেসে যাওয়া ঠেকাতে। তাই আমার মতে অন্তত ৫০ লক্ষ টাকার টার্ম পলিসি করা উচিত। বয়স অল্প বলে প্রিমিয়াম কম পড়বে।

• পিএফ, পিপিএফ, ভিপিএফ: এর পর পালা প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ), পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ) ও ভলান্টারি প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ভিপিএফ)। প্রিমিয়ামের টাকা বাদ যাওয়ার পরে করসাশ্রয়কারী সঞ্চয়ের অন্তত ৫০% এগুলিতে ঢালা জরুরি।

• ইএলএসএস: কর সাশ্রয়ের বাকি অংশটা যেতে পারে ইকুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিমে (ইএলএসএস)। এটি শেয়ার বাজার নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ড। তিন বছর টাকা তোলা যায় না। তবে শেয়ার নির্ভর লগ্নি হওয়ায় লম্বা মেয়াদে ফান্ডের তহবিল বেশি বাড়ার সুযোগ থাকে। ফলে ভাল ফান্ড বাছার পরে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলে চোখে পড়ার মতো রিটার্ন মিলতে পারে।

শুভঙ্করের কর সাশ্রয়ের উপায় সহজে বুঝতে উদাহরণ হিসেবে পরিসংখ্যান দিয়ে ব্যাখ্যা করছি। ধরুন—

• আয়করের ৮০সি ধারার আওতায় কর বাঁচাতে লগ্নির অঙ্ক: ১,৫০,০০০

• ৫০ লক্ষ টাকার টার্ম পলিসিতে প্রিমিয়াম: ৮,০০০

• রইল বাকি: (১,৫০,০০০-৮,০০০)= ১,৪২,০০০

• ১,৪২,০০০ টাকার ৫০% পিএফ, পিপিএফ এবং ভিপিএফ খাতে জমার পরে: ৭১,০০০

• ১,৪২,০০০ টাকার বাকি ৫০% এসআইপি হবে ইএলএসএসে: ৭১,০০০ (প্রতি মাসে প্রায় ৬,০০০)

বাড়তি লাভ

এত দিন ৮০সি ধারায় বছরে শুধুমাত্র ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়ে আয়কর বাঁচানোর সুবিধা ছিল। এর মধ্যে জাতীয় পেনশন ব্যবস্থায় (এনপিএস) এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত লগ্নি করা যেত। কেন্দ্র এখন ৫০,০০০ টাকা বাড়তি ঢাললেও করছাড়ের সুযোগ দিচ্ছে ওই প্রকল্পে। এবং তা মিলবে আয়কর আইনের ৮০সিসিডি ধারা অনুযায়ী। অর্থাৎ, জীবনবিমা, পিএফ, পিপিএফ ইত্যাদিতে দেড় লক্ষ টাকা সঞ্চয়ের পরে আরও ৫০ হাজার টাকা লগ্নিতে করছাড়ের সুবিধা থাকছে।

এমনিতে আমি পেনশন প্রকল্পে টাকা জমানোর পক্ষপাতী নই। কারণ আমার মতে, নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগোলে নিজেই কম খরচে অবসরের জন্য অনেক বড় তহবিল গড়ে তোলা যায়। তবে শুভঙ্করকে এনপিএসের কথা বলছি কর সাশ্রয়ের জন্য। চাইলে এতে লগ্নি না-ও করতে পারেন।

স্বাস্থ্যবিমা

শুভঙ্করের বাবা ইতিমধ্যেই কিডনির রোগে ভুগছেন। তাঁর স্বাস্থ্যবিমা করানোর পথে এটা বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল সমাধান রেকারিং ডিপোজিট (আরডি)। শুভঙ্কর প্রতি মাসে ৩,০০০ টাকা করে রাখার জন্য একটি আরডি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। মনে করতে হবে যেন স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম দিচ্ছেন। এই রাস্তায় হাঁটলে আগামী দিনে বাবার চিকিৎসা খাতে বড়সড় একটা তহবিল তৈরি হতে পারে।

তবে কোনও ভাল সংস্থা থেকে মায়ের জন্য যেন অবশ্যই স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প কেনা হয়। আলাদা ভাবে একটি পলিসি শুভঙ্করের নিজের জন্যও কেনা উচিত। কারণ, অফিসের মেডিক্লেমের উপর নির্ভর করে জীবন কাটানো অযৌক্তিক ও বোকামি। সেখানে বিমার পরিমাণ ও শর্ত যত আকর্ষণীয়ই হোক না কেন, চাকরি ছাড়লে সেই সুবিধা আর মিলবে না। আবার নতুন চাকরিতে যে পছন্দমতো মেডিক্লেম পাবেন তা নয়। সুতরাং ওই জটিলতায় না-জড়ানোই ভাল।

কেনার আগে দেখে নিন—

• বিমা সংস্থাটির যেন সুনাম থাকে।

• গ্রাহকদের ক্লেম দেওয়ার ইতিহাস যেন ভাল হয়।

• সব মেডিক্লেম পলিসিতেই কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়, যার মধ্যে সেগুলির চিকিৎসার জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করা যায় না। যে বিমা প্রকল্পটি বাছছেন সেটিতে ওই মেয়াদ কম থাকলে ভাল।

• প্রিমিয়াম যেন মাত্রাতিরিক্ত না-হয়।

• পলিসির শর্ত হিসেবে চিকিৎসার বিভিন্ন খাতে খরচের ঊর্ধ্বসীমার কড়াকড়ি কম হলে ভাল। কিংবা তা না-থাকলে আরও ভাল। যেমন ধরুন, বহু বিমা প্রকল্পে শর্ত থাকে, হাসপাতালে যে- ঘরে রোগী থাকবেন, তার জন্য মোট বিমামূল্যের ১ শতাংশের বেশি খরচ পাওয়া যাবে না। এতে সমস্যা তৈরি হতে পারে। নিজের পকেট থেকে বার করতে হতে পারে মোটা টাকা।

বাড়ি সংস্কার

বিয়ের আগে বাড়িতে জায়গা বাড়ানো সত্যিই জরুরি। এর জন্য শুভঙ্কর কত টাকা খরচ ধরেছেন জানি না। তবে বোঝা হাল্কা করতে কয়েকটা কৌশল বাতলাতে পারি আমি।

• লিখে ফেলুন বাড়ি সংস্কারের জন্য বরাদ্দ তহবিল।

• আরও ১৫% বাড়তি রাখুন খরচ বেড়ে গেলে সামলানোর জন্য।

• মাত্র ২-৩ বছরের মধ্যেই টাকাটা দরকার। তাই আরডি বা ডেট মিউচুয়াল ফান্ডের (ঋণপত্রে তহবিল খাটায় যে- ফান্ড) মতো জায়গায় লগ্নি করে সেই খরচ জোগাড়ের ব্যবস্থা করতে পারেন। ফান্ডে লগ্নি করা যায় এসআইপি করে। অর্থাৎ একলপ্তে টাকা বার না-করে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট কিস্তিতে একটু একটু করে দিয়ে। আরডি-ও তাই। মাসে মাসে টাকা রাখুন ওই অ্যাকাউন্টে।

• এ ধরনের স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনার টাকা জোগাড়ের জন্য শেয়ার বাজার নির্ভর কোনও লগ্নির উপর নির্ভর না-করাই ভাল।

• শেষ পর্যন্ত তহবিলে কিছুটা ঘাটতি পড়লে বাকিটা গৃহঋণ নেওয়া যায়। ব্যক্তিগত ঋণ বা ক্রেডিট কার্ডের উপর ঋণ কিন্তু কখনওই নেওয়া উচিত না। এগুলিতে সুদ অনেক চড়া হয়। শোধ দিতে প্রাণ বেরিয়ে যাবে।

• সবচেয়ে ভাল হবে আংশিক ভাবে একটু একটু করে দোতলা বাড়ানোর কাজ এগিয়ে নিয়ে গেলে।

বিয়ের পুঁজি

২০১৮ সালের মধ্যে বিয়ে করতে চান শুভঙ্কর। কাজেই সময় বেশি নেই। এ জন্যও ঋণপত্রে তহবিল খাটায় এমন মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি শুরু করা যায়। চাইলে এখন লগ্নি করা কিছু ইএলএসএস প্রকল্পের টাকাও ব্যবহার করতে পারেন। এমনিতে ইএলএসএস দীর্ঘ মেয়াদে ধরে রাখাই ভাল। রিটার্ন ভাল হওয়ার সুযোগ থাকে। তবে খুব দরকার পড়লে এ পথও খোলা রইল।

গাড়ি কেনা

জীবনের সব ইচ্ছে একসঙ্গে তাড়াহুড়ো করে পূরণ করতে যাওয়া মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। স্বাস্থ্যবিমা অত্যন্ত জরুরি। বাড়ি ঠিকঠাক করা ও বিয়ের টাকা জোগাড়ের জন্যও হাতে বেশি সময় নেই। তার উপর চলছে শিক্ষাঋণের কিস্তি। তাই গাড়ি কেনার ভাবনাটা আপাতত তোলা থাক না! শিক্ষাঋণ শোধ হোক। ততদিন
ধৈর্য ধরুন। আর একনিষ্ঠ ভাবে নিজের সঞ্চয় গড়ে তুলুন। আমি বরং পরামর্শ দেব, পারলে চেষ্টা-চরিত্র করে ধারটা সময়ের আগেই চুকিয়ে দেওয়া ভাল। এতে কিছুটা হাল্কা হওয়া যাবে।

অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE