Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

নাগপুর স্টেশনে ট্রেনে বসে চা খেতে-খেতে সঞ্চয়িতা থেকে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কে ‘হঠাৎ দেখা’ কবিতাটি পড়ে শোনাচ্ছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়— এ দৃশ্য ক’দিন পরেই বড় পর্দায় দেখা যাবে।

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০১:২০
Share: Save:

ট্রেন যেন বহতা জীবন, কবি কথাকার

নাগপুর স্টেশনে ট্রেনে বসে চা খেতে-খেতে সঞ্চয়িতা থেকে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কে ‘হঠাৎ দেখা’ কবিতাটি পড়ে শোনাচ্ছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়— এ দৃশ্য ক’দিন পরেই বড় পর্দায় দেখা যাবে। প্রবীণ দম্পতি সৌমিত্র-সাবিত্রী, পুত্রকে বিদেশযাত্রায় পাঠিয়ে মুম্বই থেকে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে কলকাতায় ফিরছেন। এহেন সৌমিত্র সেই ‘হঠাৎ দেখা’ই পড়তে শুরু করেন, যার প্রথম লাইনেই ট্রেনের অনুষঙ্গ: ‘রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা,/ ভাবিনি সম্ভব হবে কোনোদিন।’ এই যে হারানো সম্পর্কের মানুষটাকে ক্ষণিকের সহযাত্রী হিসেবে পাওয়া, এমন কবিতা পড়তে কেমন লাগে— প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলেন সৌমিত্র, ‘না না, কবিতাটা পড়তে গিয়ে আজ আর নতুন করে কোনও শিহরন হয় না, কত কাল ধরেই তো বসবাস করছি রবীন্দ্রনাথের কবিতার সঙ্গে, আর এ-কবিতা তো আবৃত্তি করেছি কত বার। কিন্তু যখন একটা ছবির মুখ্য ভাবনা হয়ে ওঠে এ-কবিতা, কিংবা আমি যখন সে-ছবির একজন চরিত্র হয়ে উঠি, তখন ফের নতুন করে আবিষ্কার করি কবিতাটাকে, অভিনয়ের শর্তেই।’ শ্যামলী কাব্যগ্রন্থের এ-কবিতা বর্ষার প্রারম্ভে শান্তিনিকেতনে বসে লিখেছিলেন কবি, ২৪ জুন ১৯৩৬-এ। গত শতকের কবিতা, অথচ এই মুহূর্তের অনুভূতিতে যেন ছেয়ে আছে: ‘থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা;/ চেনা লোককে দেখলাম অচেনার গাম্ভীর্যে।... সে রইল জানালার বাইরের দিকে চেয়ে/ যেন কাছের-দিনের-ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে।’ পদ্যের ভিতর গদ্যের এমন ব্যবহার আবিষ্ট করে রাখে সৌমিত্রকে, ‘পড়তে-পড়তে খেয়ালই থাকে না কী পড়ছি, ছোটগল্প, আখ্যান, না অন্য কিছু। ট্রেনটা যেন বহতা জীবন, কবি হয়ে ওঠেন কথাকার, মানব জীবনের নিপুণ পর্যবেক্ষক।’ ছবিতে সৌমিত্রের কণ্ঠে সেই সব পঙ্িক্ত ‘আমাদের গেছে যে দিন/ একেবারেই কি গেছে—/ কিছুই কি নেই বাকি?’ ‘এখান থেকে কবিতাটাকে এক লহমায় কী অসম্ভব দার্শনিক উচ্চতায় তুলে নিয়ে যান কবি’— বলেন সৌমিত্র: ‘রাতের সব তারাই আছে/ দিনের আলোর গভীরে’। এ-কবিতার আশ্রয়েই নতুন ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন নন্দিতা রায় আর সংলাপ শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, তাঁদের যুগ্ম পরিচালনায় ২৭ মে মুক্তি পাচ্ছে ‘প্রাক্তন’। সঙ্গে তারই একটি দৃশ্য।

লক্ষ্যে অবিচল

লক্ষ্যে তিনি অবিচল। সেটা তিরন্দাজি হোক বা রবীন্দ্রনাথের গান। ছেলেবেলায় গুনগুনিয়ে গাইতে গাইতেই তিনি চাঁদমারিতে একটার পর একটা তির বিঁধিয়েছেন। জন্ম ১৯৭১ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের ঝিনুকপলাশিয়া গ্রামে। বাবার চাকরিসূত্রে কলকাতায় বেড়ে ওঠা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পঞ্চায়েত দফতরের কর্মী, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী জয়ন্তী সরেন ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তিরন্দাজির জাতীয় স্তরে খেলেছেন। পাশাপাশি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক জয়ন্তী নিশানা করেন রবীন্দ্রসংগীতকেও। ক্লাসিক্যাল ও রবীন্দ্রসংগীতে তালিম মঞ্জু মুখোপাধ্যায়ের কাছে। স্বপন পাকড়াশির কাছে নজরুলগীতি এবং লোকগান শেখেন শুভেন্দু মাইতির কাছে। শিল্পীর কথায়, ‘শুভেন্দুবাবুর অনুপ্রেরণায় আজ আমি আর্চার থেকে সিঙ্গার’! ইতিমধ্যে, রবীন্দ্রনাথের গানসমৃদ্ধ তাঁর দুটো অ্যালবাম প্রকাশিত। এ ছাড়া তামিল, অসমিয়া, ওড়িয়া, সাঁওতালি ভাষায় রবিঠাকুরের গান গেয়ে চলেছেন। ‘প্রবাহিনী’ ছায়াছবিতে রবীন্দ্রনাথের গান সাঁওতালি ভাষায় প্লে-ব্যাকও করেছেন।

সেই রতন

এখন মুখোপাধ্যায়, তখন ছিলেন চন্দনা বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যজিৎ তাঁকে একটি নাচের স্কুল থেকে খুঁজে বের করেন। ‘তিনকন্যা’র প্রথম ছবি ‘পোস্টমাস্টার’-এ রতন চরিত্রটির (সঙ্গের ছবি) জন্যে। এত স্বাভাবিক ছিল তাঁর অভিনয় যে মনেই হয়নি তিনি অভিনয় করছেন, ‘ফ্যানটাসটিক অ্যাকট্রেস’— বলেছিলেন সত্যজিৎ। তাঁকেই এ বার সম্মাননা জ্ঞাপন করবেন সন্দীপ রায়, আর তাঁকে নিয়ে বলবেন বিভাস চক্রবর্তী। ‘এখন সত্যজিৎ’ পত্রিকার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নন্দন। ১৪ মে বিকেল ৫টায়। ‘সীমাবদ্ধ’র নায়ক বরুণ চন্দের সঙ্গে কথোপকথনে ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’র নায়িকা অলকনন্দা রায়। ‘নায়ক’-এর (১৯৬৬) পঞ্চাশ বছর উদ্‌যাপনও সে সন্ধ্যায়। শেষে প্রতি বারের মতো এ বারেও শুভ্রজিৎ দত্তের পরিচালনায় রে-কুইজ।

নাট্যকথা

চার বছরে পা দিল বেহালা ব্রাত্যজন। বাদল সরকারের ‘বিচিত্রানুষ্ঠান’ দিয়ে প্রথম মঞ্চ প্রযোজনা শুরু। ইতিমধ্যে তারা একাধিক প্রযোজনাভিত্তিক ওয়ার্কশপ করে নতুন প্রতিভা তুলে এনেছে নাট্যমঞ্চে। এ বার তাদের নতুন প্রযোজনা শেক্সপিয়রের ‘দ্য মার্চেন্ট অব ভেনিস’ অবলম্বনে ‘সওদা’ মঞ্চস্থ (৮ মে) হল আকাদেমিতে। অভিনয়ে দেবশঙ্কর হালদার, সেঁজুতি মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। দেবশঙ্করের এটিই প্রথম শেক্সপিয়র অভিনয়। অন্য দিকে, রবিশংকর বলের গল্প ‘তৈমুরের শাসনের পরবর্তী অধ্যায়’ থেকে সুদীপ্ত চৌধুরী ‘নেমেসিস’ নাটকটি রচনা করেছিলেন। অশোকনগর নাট্যমুখ প্রযোজিত ওই নাটকটিই কুড়িটি অভিনয় সম্পন্ন করল সম্প্রতি। এ বার ওই নাট্যটির নির্মাণ পর্বের সমস্ত ইতিহাস এবং মূল গল্প নেমেসিস (অভিযান) নামেই বই আকারে প্রকাশ পেতে চলেছে মিনার্ভা-য়, ১৩ মে সন্ধে সাড়ে ৬টায়। ভূমিকা লিখেছেন ব্রাত্য বসু। আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করবেন অশোক মুখোপাধ্যায়। ওই দিনই মিনার্ভায় অশোকনগর ব্রাত্যজন প্রযোজিত, অভি চক্রবর্তী নির্দেশিত, ব্রাত্য বসুর নাটক ‘মৃত্যু ঈশ্বর যৌনতা’র অষ্টম মঞ্চাভিনয় হবে। রূপম ইসলাম তাঁর সংগীত জীবনে এই নাটকটিতেই প্রথম সংগীত পরিচালনার কাজ করেন।

উষ্ণিক

অচেনা মোড়কে চিরন্তন ত্রিকোণ সম্পর্ক। মূলত দুই নারী এবং এক পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্কের অভিঘাতেই এগিয়েছে উষ্ণিক-এর নতুন নাটক ‘ওরা তিনজন’। এই নাটকই ওরা বত্রিশ বছরের জন্মদিন উপলক্ষে ১৩ মে অ্যাকাডেমিতে সন্ধে সাড়ে ৬টায় মঞ্চস্থ করতে চলেছে। অভিনয়ে ঈশিতা মুখোপাধ্যায়, বিন্দিয়া ঘোষ এবং গম্ভীরা ভট্টাচার্য। নাটক-নির্দেশনাও ঈশিতার, বত্রিশ বছর ধরেই। এই নাট্যগোষ্ঠীরই প্রযোজনা ‘কমলকামিনী’তে অভিনয় করে প্রয়াত কেতকী দত্ত পেয়েছিলেন নাট্য অ্যাকাডেমির শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার। এ ছাড়াও উষ্ণিকের ‘ঘর’, ‘গ্বহরজান’, ‘হা কৃষ্ণ’, ‘খেলা ভাঙার খেলা’, ‘কাল্লুমামা’ ইত্যাদি নাটক উল্লেখযোগ্য।

সত্যজিৎ এবং

এই শহরের নানাবিধ দৃশ্য কখনও সুনীল দাসের ক্যামেরার লেন্স এড়ায়নি। এর আগেও কলকাতার ছবি নিয়ে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর বই। শহরের কৃতী মানুষদেরও তিনি ক্যামেরায় ধরেছেন সযত্নে। তেমনই একজন সত্যজিৎ রায়। সেই সব ছবির সঙ্গে কলকাতার কিছু প্রাসঙ্গিক ছবিসহ মোট ৪৭টি সাদাকালো আলোকচিত্র (সঙ্গে তারই একটি) নিয়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের পোর্ট্রেট গ্যালারিতে আজ বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হচ্ছে প্রদর্শনী রে অ্যান্ড দি সিটি শীর্ষকে। উদ্বোধন করবেন সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান পার্থ ঘোষ, থাকবেন সুনীল দত্ত। সত্যজিতের ৯৬তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য এই প্রদর্শনী দেখা যাবে ৫ জুন পর্যন্ত, ১০-৫টা প্রতিদিন।

প্রবাসী

বাবার অনুপ্রেরণায় দিল্লির গন্ধর্ব মহাবিদ্যালয় থেকে ভারতীয় মার্গসংগীতে তালিম। তার পর সংগীতবিশারদ। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথাগত শিক্ষাও চালিয়ে যান গীতাঞ্জলি তালুকদার। বাবার বদলির কারণে কলকাতায় এসে মায়া সেন ও ধীরেন বসুর কাছে তালিম। আকাশবাণীতে সংগীতশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। এই সময়েই মায়া সেনের তত্ত্বাবধানে তাঁর প্রথম রবীন্দ্রসংগীত অ্যালবাম প্রকাশ। তার পরে বিবাহসূত্রে আমেরিকায়। ওখানে তিনি ইন্টারন্যাশনাল মিউজিক সার্কল ও ইন্দো-আমেরিকান কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি এসেছেন কলকাতায়। ১৩ মে সন্ধ্যায় আই সি সি আর-এ অনিন্দিতা কাজীর বেঁধে দেওয়া লেখনী নিয়ে গান শোনাবেন গীতাঞ্জলি, সঙ্গে শিলাদিত্য গঙ্গোপাধ্যায় ও অর্ণব ভট্টাচার্য।

গীতবিতান ৭৫

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণবর্ষেই শান্তিনিকেতনের প্রাক্তন ছাত্র সুজিতরঞ্জন রায় ও শুভ গুহঠাকুরতার উদ্যোগে ১১৮ রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে ‘গীতবিতান’-এর জন্ম হয়। আশীর্বাণী পাঠান রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ইন্দিরা দেবীচৌধুরানির পৌরোহিত্যে সদ্যোজাত শিক্ষায়তন মগ্ন হল শান্তিনিকেতনের ধারায় রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষাদানে। যোগ দিলেন নীহারবিন্দু সেন, কনক বিশ্বাস, রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাস, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, সুবিনয় রায়, অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়, দীপালি নাগ, ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো গুণী শিক্ষক ও শিল্পী। এ বছর প্রতিষ্ঠানটি পঁচাত্তর বছরে পা দিল। প্রাক্তনীরা ৭-৮ মে দুদিনের এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ১২ প্রিয়নাথ মল্লিক রোডের ভবনে। প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের গানের সঙ্গে প্রথম বছরের একমাত্র জীবিত পরীক্ষার্থী ফুল্লরা রায়কে সংবর্ধনা দেওয়া হল। সঙ্গের ছবি ওদেরই প্রথম দিকের একটি সমাবর্তন অনুষ্ঠানের: (ডান দিক থেকে) কনক বিশ্বাস, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রদীপ প্রজ্জ্বলনে শৈলজারঞ্জন মজুমদার, নীহারবিন্দু সেন।

স্মারক বক্তৃতা

ফ্রান্সে উনিশ শতকের শেষে ‘দ্রেফ্যুস কেলেঙ্কারি’র সময় ফরাসি সমাজকে বিভাজিত করে দেওয়া এক ভয়ঙ্কর বিতর্কের সূত্র ধরে জাতীয়তাবাদের উগ্রতা নিয়ে যে ভাবে প্রশ্ন তুলেছিলেন রম্যাঁ রলাঁ, তা তাঁর মনস্বিতাকেই উদ্ভাসিত করে। সেই চিন্তক রলাঁকে নিয়ে বলতে-বলতে তাঁর মননশীলতার প্রাসঙ্গিকতা চিনিয়ে দিচ্ছিলেন চিন্ময় গুহ, এই মুহূর্তে এ-দেশ সহ সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নিয়ে চণ্ড উগ্রতার সূত্রে। ৫ মে বাংলা আকাদেমি সভাঘরে ‘সার্ধশতবর্ষে রম্যাঁ রলাঁ ও আমরা’ বিষয়ে তৃতীয় ‘সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত স্মারক বক্তৃতা’ দিলেন চিন্ময় গুহ। শিল্পসাহিত্যের বিশিষ্ট পত্রিকা বিভাব-এর প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক প্রয়াত সমরেন্দ্রর ৮২তম জন্মদিন ও পত্রিকাটির একচল্লিশতম বছরে পদার্পণ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন। সমরেন্দ্রর স্বকণ্ঠে কবিতাপাঠও শোনা গেল আকাশবাণী আর্কাইভের সৌজন্যে।

স্মরণীয়

একাধারে সুচিকিৎসক, সংগীতশাস্ত্রে পারঙ্গম, অন্য দিকে বাস্তুকার হিসেবেও বিশিষ্ট। শিলানাথ চট্টোপাধ্যায় ও অম্বিকাদেবীর মধ্যমপুত্র মন্মথনাথের জন্ম ১৮৬৬-র ৭ ফেব্রুয়ারি গিরিশ বিদ্যারত্ন লেনে। মেডিক্যাল কলেজের সব পরীক্ষায় প্রথম, ফাইনাল এম বি-র সব বিষয়ে শুধু প্রথমই হননি, রেকর্ড নম্বরও পান। ভারতীয় হিসেবে তিনিই সর্বপ্রথম মেয়ো হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ও রেসিডেন্ট সার্জন হন। সতেরো বছর কাজ করার পর অবসর নিয়ে প্র্যাকটিস ও গৃহনির্মাণ শিল্পে মন দেন। তাঁর নকশায় ও তত্ত্বাবধানে কলকাতায় কয়েকটি প্রাসাদোপম ভবন নির্মিত হয়। কিন্তু ফের তিনি কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজে চক্ষুবিভাগে নিযুক্ত হন। এই পদে ছিলেন আমৃত্যু (২৫ এপ্রিল ১৯৩৯)। পাশাপাশি নিজে নিয়মিত বাজাতেন সেতার, বীণার মতো তারযন্ত্র। রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামী কি বেনারসের মৌজুদ্দিন খাঁ তাঁর বাড়ির সংগীত আসরে উপস্থিত থাকতেন। গ্রামোফোন কোম্পানির প্রথম যুগের রেকর্ডিংয়ে অপেশাদার শিল্পী হিসাবে তিনি নিজের জায়গা করে নেন। তাঁরই দানের অর্থে তাঁর বসতবাড়িতে ‘ডা. মন্মথনাথ চ্যাটার্জি মেমোরিয়াল আই হসপিটাল’ প্রতিষ্ঠিত হয় যা আজও সক্রিয়। তাঁর জন্মসার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে সূত্রধর ও ডা. মন্মথনাথ চট্টোপাধ্যায় স্মৃতিরক্ষা সমিতির যৌথ উদ্যোগে ১৪ মে সন্ধে সাড়ে ৬টায় উত্তর কলকাতার রোটারি হলে (৫৫/১ ভূপেন বোস অ্যাভিনিউ, স্টারলিঙ্ক হাসপাতালের ৬ তলায়) এক অনুষ্ঠানে তাঁর নামাঙ্কিত স্মারক সম্মাননা দেওয়া হবে চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সংগীত সংরক্ষক ডা. পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকারকে, ‘বাঙালির গান-বাজনা’ নিয়ে বলবেন সর্বানন্দ চৌধুরী এবং ‘গ্রামোফোন রেকর্ডে বাঙালির গান বাজনা’ শোনাবেন মন্মথনাথেরই পৌত্র তথা রেকর্ড সংগ্রাহক সুশান্তকুমার চট্টোপাধ্যায়।

নিজের পথে

চল্‌তি হাওয়ার পরিপন্থী তিনি বরাবরই। অপ্রচলিতের উদ্ভাসে সাজান নিজের ছবিকে। ছবি-করিয়ে আর ছবি-আঁকিয়ে দু’টি মানুষেরই বসবাস নীতীশ মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে। রবীন্দ্রনাথ অবলম্বনে তাঁর ফিল্ম ‘চার অধ্যায়’ মুক্তি পেয়েছে নন্দন-সহ সারা কলকাতায়, উপলক্ষ পঁচিশে বৈশাখ— কবির জন্মদিন। এ-ছবিতে নীতীশ ফের স্বমহিমায়, সাড়ে তিন দশক আগে রবীন্দ্রনাথের ‘রবিবার’ গল্পটি নিয়ে যখন ছবি করেছিলেন, সঙ্কীর্ণ বিশ্বাসের বিরুদ্ধ স্বর শোনা গিয়েছিল সে-ছবিতে। এ বারে ‘চার অধ্যায়’, কবির ১৯৩৪-এ লেখা বিতর্কিত উপন্যাস, যেখানে প্রশ্ন তুলেছেন কবি সেই বিপ্লব-প্রচেষ্টা নিয়ে যার ভিতর অসত্য অন্যায় আর নিজেদের গোপন লোভ চরিতার্থ করা ছাড়া আর কিছু নেই। ‘চার অধ্যায়-এ সমকালীনতার ঘ্রাণ লেগে আছে, তাই এ-উপন্যাস এখনও আধুনিক।’ মনে করেন নীতীশ। সত্তর দশকের মাঝামাঝি ‘একদিন সূর্য’-র মতো নিরীক্ষাময় ছবি করে চলার শুরু, বইয়ের মলাট আঁকা থেকে শিল্পকলা ও শিল্পীদের নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি, কিছুই বাদ পড়েনি নীতীশের পরিক্রমায়। ছবি করেছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘নয়ন শ্যামা’ আর মনোজ মিত্রের নাটক ‘নরক গুলজার’ থেকেও। সম্প্রতি রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ নাটকের আশ্রয়ে ছবি এঁকেছেন ছত্রিশটি। সেই চিত্রাবলি নিয়ে আগামী কাল নন্দনে শুরু হচ্ছে তাঁর প্রদর্শনী ‘রক্তকরবীর রঙ’, বিকেল সাড়ে ৫টায় উদ্বোধন করবেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (১৬ মে অবধি, রোজ ২-৮টা।)। প্রকাশিত হবে তাঁর ছবি সহ নানা রচনা সংবলিত একটি গ্রন্থও: রবীন্দ্রনাথ/ রক্তকরবী এবং রক্তকরবীর রঙ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE