Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

চৈতালি চাঁদের মায়ায়, দু’জনে

পারমিতা মুখোপাধ্যায়চৈত্রমাস মধুমাস। মলয়সমীরণে মিশে রয়েছে বাসন্তি নির্যাস। বসন্তের কোকিল কার ছলনায় ভুলে এই শেষ রাতেও ডেকে উঠল। কুহু কুহু... ঘুমিয়ে ছিল চরাচর। সারা দিনের ক্লান্তি থেকে নির্ভার মুক্তি এই ঘুম। কেউ দেখল না গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা চাঁদকে। পাতার ফাঁক দিয়ে চাঁদের চাঁদনি স্পর্শ করে ফিরছিল রাত্রিকে। পাতারা ফিসফিস করে বলে উঠল, ‘ওঠ রাত্রি ওঠ আর ঘুমিও না...।

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৫ ০১:০২
Share: Save:

চৈত্রমাস মধুমাস। মলয়সমীরণে মিশে রয়েছে বাসন্তি নির্যাস। বসন্তের কোকিল কার ছলনায় ভুলে এই শেষ রাতেও ডেকে উঠল। কুহু কুহু... ঘুমিয়ে ছিল চরাচর। সারা দিনের ক্লান্তি থেকে নির্ভার মুক্তি এই ঘুম। কেউ দেখল না গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা চাঁদকে। পাতার ফাঁক দিয়ে চাঁদের চাঁদনি স্পর্শ করে ফিরছিল রাত্রিকে। পাতারা ফিসফিস করে বলে উঠল, ‘ওঠ রাত্রি ওঠ আর ঘুমিও না...।

রাত্রি-মোহময়ী রাত্রি-চাঁদের মোমজোছনার আলো তার চোখ ছুঁতেই ভ্রমণকালো আঁখি মেলে তাকাল সে। চাঁদকে দেখে বিস্ময়ে নির্বাক হল।

‘তুমি? তাই তো বলি চাঁদ, কী এক স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙল আমার। যেন এক আকাশ তারার মাঝে আমি তোমাকেই খুঁজে চলি।

‘আমি তো প্রতিদিনই অপেক্ষায় থাকি শুধু তোমারই জন্য। কত দিন, কত কাল, কত যুগযুগান্ত কেটে গেছে। আমি শুধু তোমারই প্রতীক্ষায় থেকেছি রাত্রি। তোমার মধ্যেই যে আমি মূর্ত হয়ে উঠি।’

‘আমিও যে প্রাণ পাই তোমাকে পেলে চাঁদ। তোমার মায়াবি আলো আমাকে ভরিয়ে দেয় কানায় কানায়। আমি পূর্ণ হই। আমি যে আমি সকলের কাছে রহস্যময়ী—সে কথা ওঠে, প্রগলভ হয় শুধু তোমার স্পর্শে।

‘রাত্রি, এই মধুঋতুতে তোমার সোন্দর্য উপমাবিহীন যেন কবিতার মত। তোমার আঁচল জুড়ে অজস্র হিরের কুঁচির ঝিকিমিকি। তোমার কালো চোখে ছলকে ওঠে দুষ্টুমির হাসি। দখিনা বাতাস তোমার অঙ্গে বুলিয়ে দেয় বাসন্তি গন্ধ। সুবাসিত মোহে তুমি আমাকে আকর্ষণ করো। রাত্রি, সে আকর্ষণের তীব্রতা বড় প্রবল। আমি নিজেকে কিছুতেই প্রতিহত করতে পারি না। তোমার প্রতি আমার এ এক অদ্ভুত দুর্বলতা। ভীষণ ভাবে স্বীকৃত এ সত্য।’

‘চাঁদ...’ অজস্র তারার চুমকি বসানো মেখলা দুলিয়ে রাত্রি তার পাতলা মেঘের ওড়নায় ঢেকে দেয় চাঁদের মুখ। সেই মেঘের আড়াল থেকে রাত্রি প্রাণভরে দেখে চাঁদকে।

জানি চাঁদ জানি, তোমার হৃদয়ের কোনও কথাই আমার অজানা নয়। তুমি যে আমার চেতন অবচেতনে মিশে আছ। রাত্রি বিনা চাঁদ বা চাঁদ বিনা রাত্রি যে অসম্পূর্ণ।

‘তা হলে এসো রাত্রি, এই আকাশে আমরা আসন পাতি। তুমি বাজাও তোমার বীণা। সে বীণার সুর ঢেউ তুলুক জোছনায়। নরম চামোলি-আলোয় স্নান করিয়ে দিই তোমায়।’

‘তাই হোক চাঁদ, তার আগে এসো ঘুমের দেশের স্বপ্নতরীগুলোকে ভাসিয়ে দিই আলোর বন্যায়। ওরা স্বপ্ন ছড়িয়ে দিক দিকে দিগন্তরে। এই চরাচরের বুকে স্বপ্নরা আকাশপ্রদীপের মতো জ্বলতে থাকুক।’

‘আর সেই মায়াপ্রদীপের আলোয় পরিপূর্ণ হয়ে উঠুক আমাদের মিলন!’

রাত্রি আর চাঁদের পাতা আসন দুলতে থাকে হাওয়ায়। আকাশ জুড়ে বিছানো আসনের নীচে তারাদের অতন্দ্র প্রহরা। এই গোপন প্রণয়ে জাগতিক কোনও কিছুই যেন সাক্ষী না থাকে। তারাদের চাঁদোয়া ভেদ করে রাত্রি ও চাঁদকে ছুঁতে পারবে না কেউ।

চৈতালি রাতে মোহময়ী রাত্রিকে দেখে চঞ্চল হয়ে ওঠে চাঁদ।

‘আজ শুধু তোমাকে প্রাণভরে দেখব রাত্রি। তুমি এত সুন্দর!!’

চাঁদের মুখে এ কথা শুনে রাত্রির চোখেও ঘনিয়ে আসে ঘোর। আবেশে বিহ্বল হয় সে। রাত্রির বীণার তারে বেজে ওঠে সুর, যে সুর চাঁদের হৃদয়ে ঝড় তোলে। কী এক অস্থির আবেগ ছটফট করে ওঠে সে। গাঢ় হয়ে ওঠে দু’চোখের দৃষ্টি। শিরায় শিরায় রক্তস্রোতের দুরন্ত প্রবাহ। এই রাত্রিকেই তো সে বার বার স্বপ্নে দেখেছে। স্বপ্ন শুধু স্বপ্নেই দেখেছে ছুঁতে তো পারেনি কখনও। আজ রাত্রি এত কাছে এত। এই বিশাল আকাশের নীচে শুধু সে আর রাত্রিআর রাত্রি আর সে। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না চাঁদ।

কে দেবে চাঁদ, তোমায় দোলা।

আপন আলোর স্বপন-মাঝে বিভোল ভোলা।

কেবল তোমার চোখের চাওয়ায়

দোলা দিলে হাওয়ায় হাওয়ায়

বনে বনে দোলা জাগালো ওই চাহনি তুফান তোলা।

‘চাই চাই তোমাকে চাই রাত্রি, আমি তোমাকে চাই। তোমাকেই চেয়েছি যুগযুগান্ত ধরে। কত কাল তোমার প্রতীক্ষায় দিন গুণেছি। তোমার মধ্যেই আমি বারবার আশ্রয় চেয়েছি রাত্রি। তুমি এসো।’

রাত্রি হাত বাড়ায়, চাঁদ স্পর্শ করে তাপ কোমল করতল কিন্তু...।

এ কী! রাত্রির মুখমণ্ডল বিবর্ণ হয়ে আসে।

পুব আকাশে আলো ফুটছে ধীরে ধীরে। এ বার চলে যেতে হবে রাত্রিকে। চারিদিকে নেমে আসে এক প্রগাঢ় বিষণ্ণতা। স্তিমিত করে দেয় আবেগের প্রবল উচ্ছ্বাস। সামুদ্রিক ঢেউয়ের জলোচ্ছ্বাস কান্না হয়ে ভাঙতে থাকে বুকের ভিতর।

‘চাঁদ আমার চাঁদ তোমাকে যে পেলাম না সম্পূর্ণ করে। দেখো আলো ফুটছে আকাশে। এ বার যেতে হবে। সময় নেই আর সময় নেই।’

রাত্রি...’ হাহাকার করে ওঠে চাঁদ। ‘তুমি যেও না। যেও না...। তোমাকে সকল সময়ের জন্য আমার কাছে ধরে রাখতে চাই রাত্রি।’

রাত্রি আলোর উদ্ভাসে ক্রমে নিরবয়ব হতে থাকে। হাওয়ায় হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে থাকে তার বীণার সুর। মিলিয়ে যেতে যেতেও সে সুর যেন তার আভাস রেখে যায় এই পৃথিবীর গহন অন্তরে।

সূর্যের আলোয় সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাওয়ার আগে রাত্রি চাঁদের উদ্দেশ্যে বলে যায়,

‘বিদায় আমার প্রিয়তম। দুঃখ করো না। রাত্রিকে যে ফিরে যেতেই হবে দিনের অন্তরালে। আবার দেখা হবে। আমাদের এই মিলন আর বিরহের খেলা চলতেই থাকবে চিরকাল। বিদায় বন্ধু, আবার হয়তো কোনও দিন চৈতালি চাঁদনি রাতে।

চাঁদ সে একলা রইল অপেক্ষায় আকাশের এক প্রান্তে। সূর্যের আলো ঠিকরে পড়ছে সারা আকাশ জুড়ে। সে আলোর জৌলুসে চাঁদ ম্লান, বিবর্ণ।

রাত্রির ছড়িয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো তারার ফুল হয়ে ঝরে পড়ছে মাটিতে। সকালের হাওয়ায় কেঁদে কেঁদে উঠছে এক সুর—

‘আমার প্রাণের’ পরে চলে গেল কে,

বসন্তের বাতাসটুকুর মতো।

সে যে ছুঁয়ে গেল, নুয়ে গেল রে

ফুল ফুটিয়ে গেল শত শত।’

সুধীজন, এই বসন্তের মতো ঝকঝকে সকালে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই দূরে দূরে যেখানে সুনীল আকাশ আর পাহাড়ের সারি আমায় ডাকে।

সুধীজন, এই বসন্তে আয়নার মত ঝকঝকে সকালে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই দূরে দূরে যেখানে সুনীল আকাশ আর পাহাড়ের সারি আমায় ডাকে। ঢেউ খেলানো পাহাড় ঘেরা সে জায়গাটা আমার নিজের সঙ্গে কথা বলার বড় গোপন স্থান। সূর্যের ঝলমলে আলো পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসে মধ্যের উপত্যকায় যে উপত্যকার এক পাশে ছোট্ট এক জলাশয়। বর্ষায় এই ছোট্ট জলাশয়ই হয়ে উঠবে বড় জলাধার। এখান সেখানে নানা পাখির ভিড়। সাদা বা ছাই রঙা বক আর সারসেরা ডানা ভাসিয়ে দেয় আকাশে। চার পাশে অজস্র গাছগুলোয় খুনসুটি করে টিয়া বা শালিকের ঝাঁক। বুলবুলি আর কোকিলের মিঠে সুর ছড়িয়ে পড়ে সকলের মৃদুমধুর বাতাসে। আমি এক নিঃসঙ্গ পথিকের মতো দাঁড়িয়ে থাকি প্রকৃতির এই ফিসফিসানি অনুভব করব বলে। এই সকালে মানুষ জন সবাই ব্যস্ত কর্মচঞ্চল। দূরের গাঁও থেকে দলে দলে নারী পুরুষ চলেছে কাজে। শিশুরা চলেছে স্কুলে। একটু নীচ দিয়ে তাদের চলার পথ। কিন্তু এই জায়গাটায় সে ব্যস্ততা বা কোলাহলের কোনও টানাপোড়েন নেই। আমারই মত একাকী মানুষের জন্য এই প্রকৃতি রূপের পশরা সাজিয়ে বসে আছে।

আমার অনুভবে এই স্থান তার কাল বদল করে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল চৈতালি চাঁদের মায়ায়। মনে হয়েছিল যদি ‘চৈতালি চাঁদিনী রাতে’ দেখতে পেতাম রাত্রির অবগুণ্ঠনে ঢেকে থাকা এই পাহাড় জঙ্গলের নিসর্গদৃশ্য। যদি শুনতে পেতাম রাত্রি আর চাঁদের প্রণয়ালাপ। কিন্তু না, অপ্রাকৃত এই অনুভব প্রত্যক্ষ করা যায় না, তাই মনের পর্দায় চলমান ছবি হয়ে ফুটে উঠল ওই বিচিত্র কল্পনা, যে কল্পনারই প্রতিভাস ব্যক্ত করলাম কলমে। এখানে ধরা পড়ল আমাদেরই জীবনের পাওয়া না পাওয়ার বসন্ত-বিলাপ।

সুধীজন, অনেক কথা লিখে ফেললাম তার থেকেও বেশি রয়ে গেল না-বলা। এ বার আসুন, আমরা দেখে নিই, আমাদের জন্য মুম্বইয়ে কী উত্‌সব অপেক্ষা করে আছে।

আজ তিরিশে ফাল্গুন। আমাদের বাংলা দেওয়াল পঞ্জিকার হিসেব মতো আগামী কাল থেকে শুরু হচ্ছে চৈত্রমাস। এই সেই চৈত্র ‘প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সে দিন চৈত্রমাস তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।’ সর্বনাশের নেশারা কী চৈত্রেই ভর করে?

না, আমি আপনাদের আজ কোনও সর্বনাশের কাহিনি শোনাব না। চৈত্রমাস কোনও কোনও ক্ষেত্রে পৌষমাস হয়েও আসে। মরাঠি কালনির্ণয় অনুযায়ী চৈত্রেই মরাঠি নববর্ষ বা গুঢ়ি পড়ওয়া। মরাঠি মতে চৈত্রের শুক্ল প্রতিপদ থেকে নতুন বছরের শুরু। এই গণনা মূলত চান্দ্র-সৌর মত অনুযায়ী হয়ে থাকে। মরাঠি মতে গুঢ়ির একটি তাত্‌পর্য আছে। নববর্ষের দিন একটি লাঠির আগায় সবুজ বা হলুদ রঙের নতুন কাপড়ের টুকরো বেঁধে তার ওপর একটি তামা বা রূপোর কলস উপুড় করে আমপাতা, নিমপাতা, ফুল এবং গাঠির (মঠ বা বাতাসা সদৃশ) মালা ঝুলিয়ে গৃহের প্রবেশদ্বারের সামনে স্থাপন করা হয়। অনেকটা ধ্বজা বা পতাকার মতো দেখতে হয় সেটি। এটিকে জয়ধ্বজ মনে করা হয়। ছত্রপতি রাজা শিবাজি মরাঠা নববর্ষে এই গুঢ়ি উত্তোলন শুরু করেছিলেন চোদ্দো বছর বনবাস শেষে অযোধ্যায় ফেরার জয়ধ্বজা রূপেও কল্পনা করা হয়। রাবণকে অর্থাত্‌ অশুভশক্তিকে হারিয়ে শুভশক্তির স্থাপনা—এটিই গুটির বার্তাবাহী। এই গুটি অবশ্য শকদের বিরুদ্ধে রাজা শালিবাহনের যুদ্ধে শালিবাহনের জয়কেও সূচিত করে। আবার মরাঠিদের গুটিকে পুজোর অন্তর্নিহিত অর্থ হল ব্রহ্মপুজো কারণ ব্রহ্মাই সৃষ্টি করেছিলেন এই মহাবিশ্ব। পড়ওয়ার অর্থ হল শুক্ল প্রতিপদ। এই গুঢ়ি পড়ওয়া মহারাষ্ট্র এবং কোঙ্কন উপকূলে একটি অত্যন্ত শুভ দিন হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। ভারতীয় চান্দ্র কালনির্ণয় অনুযায়ী যে সাড়ে তিন মুহূর্তের কথা বলা হয় তার মধ্যে গুঢ়ি পড়ওয়া অন্যতম। বাকি দিনগুলি হল অক্ষয় তৃতীয়া, বিজয়া দশমী এবং বলি প্রতিপদ। কর্নাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশে এই চৈত্রে শুক্ল প্রতিপদ পালিত হয় উগাদী রূপে। এটি গুঢ়ি পড়ওয়ারই অনুরূপ শুধু নামভেদ। এই দিন থেকেই আবার উত্তর ভারতে শুরু হয় চৈত্র নবরাত্রি উত্‌সব।

গ্রামদেশে বা কৃষিকাজের সঙ্গে গুঢ়ি পড়ওয়ার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কৃষকদের ঘরে এই সময় ওঠে নতুন রবিশস্য। বসন্তের সূচনায় গাছে গাছে পাতা, ফুলের সমাহার। প্রকৃতি যেন দু’হাত ভরে উজাড় করে দেয় তার সম্পদ। গাঁওগুলোতে কৃষকরা খুশিতে মেতে ওঠেন। গ্রামে গ্রামে যেন আনন্দের উচ্ছ্বাস। তাই তো গুঢ়ি পড়ওয়া পালিত হয় প্রতিটি মরাঠা ঘরেই। এই দিন মানুষ কিছু না কিছু নতুন ক্রয় করেন সামর্থ অনুযায়ী। জমি, বাড়ি, সম্পত্তি বা বাহন ক্রয়ের জন্যও এই দিনটিকে শুভ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। মহারাষ্ট্রে যখন বসত তখন গুঢ়ি পড়ওয়া আমাদের মধ্যেও এক মরাঠা উন্মাদনা নিয়ে আসে। এটি ভাবতে খুবই আশ্চর্য লাগে যে মুম্বইয়ে কত ভাষা, কত রীতিনীতি, কত রাজ্য বা ভিনদেশ থেকে আগত মানুষ জন—কিন্তু কোনও উত্‌সবের মুহূর্তে থাকে না কোনও বিভেদ সকল মানুষকে এক সূত্রে গেঁথে নেওয়ার এক সমন্বয় শক্তি আছে মায়ানগরীর। আর মরাঠি সংস্কৃতি সেও যে ধীরে ধীরে মিশে যাচ্ছে আমাদের আচার ব্যবহারে। তাই তো মকর সংক্রান্তির সময় হলদি কুমকুমে মরাঠিদের ঘরে ঘরে আমরাও পাই আমন্ত্রণ আবার নিজেদের ঘরেও ডেকে নিই সবাইকে। গুঢ়ি পড়ওয়ার দিন প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে ভেট আসে গরম পূরণপোলি। আসলে সেই চিরায়ত সুর আমাদের সকলের বুকের মধ্যেই বাজতে থাকে অবিরত। বিবিধের মাঝে হের মিলন মহান বৈচিত্রের মাঝে ঐক্য ভারতে যে সেই আদিকাল থেকে এই শিক্ষাই দিয়ে এসেছে বার বার। তাই আমার উত্‌সব তোমার উত্‌সব আর তোমার উত্‌সব আমার উত্‌সব। আগামী একুশে মার্চ গুঢ়ি পড়ওয়ায় সকলের জীবন আনন্দময় হয়ে ওঠুক।

ভারতীয় সঙ্গীতের বিশ্ব সম্মানের দরবারে রবীন্দ্রসঙ্গীতের অবস্থান আরও এক বার প্রমাণ করলেন তিনি। গুজরাতে সেন্ট্রাল এক্সাইজ অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স দফতরের চিফ কমিশনার পদে থেকেও ইন্দ্রজিত্‌ দাশগুপ্তের গান তাঁকে পৌঁছে দিল দেশের ঘরে ঘরে। ২৪ ফেব্রুয়ারি মুম্বইয়ের এক তারকাখচিত সন্ধেয় প্রসারভারতীর বি-হাই গ্রেডেশন-প্রাপ্ত এই গায়কের হাতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম ‘মোর বীণা’র জন্য তুলে দেওয়া হল গ্লোবাল ইন্ডিয়ান মিউজিক অ্যাওয়ার্ড (গিমা)। ভারতীয় সঙ্গীতের চিত্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দেওয়া এ সম্মান নিতে অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন জাকির হুসেন, আনন্দজি, এ আর রহমান, হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া প্রমুখ।

আইফা অ্যাওয়ার্ডের আয়োজক সংস্থা উইজক্র্যাফট ইন্টারন্যাশনাল এই প্রথম সর্বভারতীয় স্তরে রবীন্দ্রসঙ্গীতের কোনও অ্যালবামকে এ সম্মান দিল। তবে ইন্দ্রজিত্‌বাবুর এটি প্রথম প্রয়াস নয়। বাংলার বাইরে রবীন্দ্রসঙ্গীতকে জনপ্রিয় করতে ২০০৩ সালে তাঁর প্রথম মিউজিক ভিডিও ‘আনন্দধারা’য় রাজেশ খন্না অভিনয় করেন। ২০০৭ সালে তিনি হিন্দি রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম প্রকাশ করেন। সমস্ত গানগুলি অনুবাদ করেছিলেন জাভেদ আখতার এবং শাহিন ইকবাল, পাঠ করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। সর্ব ভারতীয় গানের চ্যানেলে সে সব গানের প্রচার ছাড়াও ২০০৮ সালে এই প্রচেষ্টা তাঁকে এনে দেয় ‘কলাকার’ এবং ‘টেলি সিনে’ সম্মান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mumbai paromita mukhopadhay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE