Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Mount Everest

পাহাড় চুড়োয় আতঙ্ক

কোনটা পর্বত, কোনটা আকাশ বোঝার উপায় নেই। ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে নাকেমুখে উড়ে আসছে ছুঁচলো বরফ। দুই পর্বতারোহণ সংস্থার প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলে এভারেস্টের পথে প্রাণহীন, নিথর পড়ে থাকলেন আট অভিযাত্রী।কোনটা পর্বত, কোনটা আকাশ বোঝার উপায় নেই। ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে নাকেমুখে উড়ে আসছে ছুঁচলো বরফ। দুই পর্বতারোহণ সংস্থার প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলে এভারেস্টের পথে প্রাণহীন, নিথর পড়ে থাকলেন আট অভিযাত্রী।

শিশির রায়
শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৮ ১৯:৪৫
Share: Save:

সেই ১৯৫৩ সালে এডমন্ড হিলারি আর তেনজিং নোরগে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার পর, এই ৬৪ বছরে মোট কত জন এভারেস্টে উঠেছে বলে আপনার ধারণা? পাঁচশো? আটশো? হাজার? হিসেব বলছে, শুধু গত বছরেই ‘সামিট’ করেছেন ৪৪৫ জন! আর ৬৪ বছরে মোট এভারেস্ট-জয়ীর সংখ্যা ৫৩২৪! এ বছর ‘স্প্রিং সিজন’-এ নেপাল সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের দেওয়া ‘ক্লাইম্বিং পারমিট’-এর সংখ্যা ৩৭৫। পর্বতারোহী-পিছু এক জন গাইড থাকলেই তো সংখ্যাটা লাফিয়ে আটশোর কাছে। আর সরকারি আধিকারিক, গাইড, সহকারী শেরপা, রান্নার লোক, সবাইকে ধরলে বেস ক্যাম্পের জনসংখ্যা ২০০০ হতেই পারে! বিশেষজ্ঞরা খুব শঙ্কিত, এভারেস্টে এত ভিড়, ট্র্যাফিক জ্যাম হওয়ার জোগাড়!

এত মানুষ কেন? শুধুই কি পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে নিজেকে দেখার, পা রাখার অদম্য ইচ্ছে? অনেকে আগেও একাধিক বার এভারেস্টে উঠেছেন, তবু যাবেন আবারও। এভারেস্টে নারী-অভিযাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে, এ বছর আছেন ৬০ জন। গত ডিসেম্বরে নেপাল সরকার ঘোষণা করেছিল: দৃষ্টিহীন, অথবা একটি বা দুটি হাত বা পা বাদ গিয়েছে এমন অভিযাত্রীদের এভারেস্টে চড়তে দেওয়া হবে না। জোর বিতর্ক হয় সেই নিয়ে, মার্চে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট সেই নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে। সরকার এ বছর কঠোর: অভিযাত্রীদের সবার হেলথ সার্টিফিকেট যাচাই করা হবে খুঁটিয়ে। বলে দেওয়া হয়েছে, বিতর্ক বা গুজব ছড়াতে পারে, এমন বার্তা দেওয়া যাবে না, ব্রডকাস্ট করা চলবে না।

অন্য ব্যাপারও আছে। ২০১৪ আর ’১৫, দু’বছরেই ভয়ংকর দুর্যোগের থাবার দাগ এখনও দগদগে এভারেস্ট-যাত্রার ইতিহাসে। ২০১৪-তে হিমবাহ ধসে বেস ক্যাম্পে ১৬ জন নেপালি গাইড, পরের বছর ভয়ংকর ভূমিকম্পে বেস ক্যাম্প আর কুখ্যাত খুম্বু আইসফল-এ ১৯ জন গাইড ও সহকারী মারা গিয়েছেন। দুর্যোগ আর প্রাণহানির জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল শৃঙ্গজয়ের অভিযান। গত বছর তাই ‘বকেয়া’ অভিযাত্রীর সংখ্যা ছিল আরও বেশি। পেশাদার পর্বতারোহীরা তো আসেনই, এভারেস্টে দিন দিন বাড়ছে ‘কমার্শিয়াল এক্সপিডিশন’-এ আসা অভিযাত্রীর সংখ্যাও। বিদেশি অভিজ্ঞ পর্বতারোহী, যাঁরা নিজেরা এক বা একাধিক বার এভারেস্টে উঠেছেন, তাঁদের তৈরি সংস্থা প্রচুর ডলারের বিনিময়ে এভারেস্টে নিয়ে যায় ‘ক্লায়েন্ট’ পর্বতারোহীদের। অবশ্যই প্রশিক্ষণ নিতে হয় তার আগে, আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে, নিজেদের তৈরি করতে হয়। বিশেষজ্ঞদের অনুযোগ, এখন ব্যাপার এমন, রেস্ত আছে তো বেশ তো, চল এভারেস্ট।

এভারেস্ট-অভিযানের নামে বাণিজ্যের দিকে আঙুল উঠছে। পেশাদাররা জানেন কোন বিপদের মুখে অন্তত কী করতে হয়, বিপন্ন মুহূর্তে নেওয়া কোন সিদ্ধান্ত নিজের বা সহ-অভিযাত্রীর জীবন বাঁচাতে পারে। ‘ক্লায়েন্ট’ অভিযাত্রীরা সবাই তেমন জানবেন, আশা করাটা বাতুলতা। শৃঙ্গজয়ের পথে বা নামার সময় দুর্যোগে বহু কমার্শিয়াল এক্সপিডিশন-এর অভিযাত্রীর প্রাণ গিয়েছে।

২২ বছর আগের এভারেস্ট-অভিযান যেমন। ১৯৯৬-এর ১০ মে এভারেস্টে সামিট করার পথে এবং নামার সময় ভয়ঙ্কর তুষারঝড়ে মারা যান আট জন। একই দিনে সামিট করেছিলেন জন ক্রাকার। মার্কিন লেখক-সাংবাদিক জন এভারেস্টে গিয়েছিলেন ‘আউটসাইড’ ম্যাগাজিনের হয়ে। বিশ্ববিখ্যাত এভারেস্ট-জয়ী, নিউজিল্যান্ডের রব হল-এর টিমের সদস্য ছিলেন তিনি। সেই রব হল, ৩৫ বছর বয়সেই যাঁর সাত বার এভারেস্ট-অভিযান হয়ে গিয়েছে, সে বছরটা ধরলে আট বার। সেই রব হল, যাঁর ‘অ্যাডভেঞ্চার কনসালট্যান্টস’ ১৯৯০ থেকে ’৯৫ এই পাঁচ বছরে ৩৯ জনকে এভারেস্ট জয় করিয়েছে (এডমন্ড হিলারির শৃঙ্গজয়ের পরের কুড়ি বছরে মোট যত জন এভারেস্টে উঠেছেন, তার থেকেও ৩ বেশি)। রব হল-এর টিমে ছিলেন জন-সহ মোট ১৫ জন: রব-সহ ৩ জন গাইড, ৪ জন শেরপা, আর ৮ জন ‘ক্লায়েন্ট’। ক্লায়েন্টরা কেউ বিখ্যাত ডাক্তার, বড় উকিল, নামজাদা প্রকাশক। নানা দেশের মানুষ, একত্র হয়েছেন পৃথিবীর চুড়োয় ওঠার স্বপ্ন সার্থক করতে। একুশ বছর আগে রব হল ক্লায়েন্ট প্রতি ৬৫০০০ মার্কিন ডলার ফি নিয়েছিলেন এভারেস্টে ওঠানোর জন্য! বিমান-খরচ আলাদা।

আর এক বিখ্যাত এভারেস্টজয়ী আর তাঁর টিমও ওই দিন এভারেস্টে উঠেছিলেন। আমেরিকান পর্বতারোহী স্কট ফিশার-এর হাতে গড়া সংস্থা ‘মাউন্টেন ম্যাডনেস’ সে বার এভারেস্টে এনেছিল ১৪ জনের দল। তার মধ্যে ফিশার-সহ ৩ জন গাইড, শেরপা ৫ জন, বাকি ৬ ক্লায়েন্ট। এই ক্লায়েন্টদের মধ্যেও অনেকেই হাই-প্রোফাইল, সবচেয়ে বিখ্যাত ম্যানহাটানের লেখিকা স্যান্ডি পিটম্যান, যিনি আবার বিখ্যাত এক মিডিয়া সংস্থার হয়ে রোজ ‘এভারেস্টের ডায়রি’ লিখে পাঠাচ্ছিলেন অকুস্থল থেকে।

রব আর ফিশার— দুই সুদক্ষ গাইডের মধ্যে স্বভাবতই জোরদার প্রতিযোগিতা ছিল। বন্ধুতাও ছিল। এ তো এভারেস্ট, রিলে রেসের মাঠ নয়। হাত বাড়াতে হবেই একে অন্যের সাহায্যে। ধারেভারে এগিয়ে রব-ই, কারণ ফিশার নিজে আগে এভারেস্টে উঠলেও কোনও টিমকে গাইড করে নিয়ে যাচ্ছেন সেই প্রথম বার। বেস ক্যাম্পে দুটো টিমের সার সার তাঁবুও কাছাকাছিই ছিল। দুই গাইডই আবহাওয়ার হাল-হকিকত জেনে, নিজেদের এতদিনকার অভিজ্ঞতা ছেনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সামিট-এর দিন হবে ১০ মে। তার আগে ঠিক দিনক্ষণসময় মতো বেস ক্যাম্প থেকে দুই আর তিন নম্বর ক্যাম্প হয়ে এসে পৌঁছতে হবে শৃঙ্গজয়ের চূড়ান্ত যাত্রাশুরু যেখান থেকে, সেই চার নম্বর ক্যাম্পে। রব-এর নিয়ম ছিল, টিম স্পিরিট তুঙ্গে রাখার জন্য সবাইকে চলতে হবে একসঙ্গে, গাইডদের নজরদারিতে। আর ফিশারের মত— ক্লায়েন্টদের তো সব শেখানোই আছে, তাঁরা নিজেদের ইচ্ছেমতো, স্বাধীন ভাবে এগিয়ে যেতে পারেন শৃঙ্গের পথে।

রাত সাড়ে এগারোটায় দুটো টিমই বেরিয়ে পড়ল ‘সাউথইস্ট রিজ’-এর (অভিযাত্রীদের চলতি ভাষায় ‘সাউথ কল’, ২৫৯০০ ফুট উঁচু) ৪ নম্বর ক্যাম্প থেকে। এভারেস্টের আকাশ সে রাতে তারায় তারায় খচিত। সুন্দর আবহাওয়া। মাকালু শৃঙ্গের ওপর চাঁদ উঠেছে, আলো ভিজিয়ে দিচ্ছে বরফ। ভোরে সূর্য দেখা দিল, অভিযাত্রীরা তখন আপার সাউথ কল-এ। দেখা গেল, বরফের গায়ে যে দড়ি গাঁথার প্রয়োজন হয়, তা করা হয়নি। শেরপাদের আগে থেকে এগিয়ে গিয়ে করে রাখার কথা, কিন্তু তারা আগে রওনাই দেয়নি। নষ্ট হল এক ঘণ্টা। কুখ্যাত ‘হিলারি স্টেপস’-এ (গত বছর মরশুম-শুরুতে খবর এসেছিল, ভূমিকম্পের জেরে ‘হিলারি স্টেপ’ ভেঙে গিয়েছে, পরে জানা যায় তা ছিল নেহাতই গুজব) পৌঁছে ‘ফিক্সড লাইন’ গাঁথতে ফের দেরি। রব পইপই করে বলে দিয়েছিলেন, যে যার মতো সামিট করুক, কিন্তু ফেরার সময়টা নির্দিষ্ট, দুপুর একটা। কারণ নামাটাও সমান বিপদের, ঝুঁকির। প্রাণসংশয় হতে পারে নিমেষের স্খলনে বা অসতর্কতায়। প্রত্যেকের কাছে যে সাত পাউন্ডের দুটো অক্সিজেন-ভরা বোতল আছে, তা ফুরিয়ে যাবে বিকেল চারটে-পাঁচটার মধ্যেই— মাথায় রাখতে হবে তা-ও। এর পর অক্সিজেন রাখা আছে সেই নীচে, ‘সাউথ সামিট’-এ। বিপদ এড়াতে তাই নীচে নামতে হবে জলদি।

সে দিন এভারেস্টে প্রথম পৌঁছন ফিশারের টিমের অন্যতম গাইড আনাতোলি বোকরিয়েভ, তার পর জন ক্রাকার নিজে। একটু পরে পৌঁছন তাঁর টিমেরই অন্যতম গাইড অ্যান্ড্রু হ্যারিস। রব-সহ তাঁর টিমের বাকিরা পিছনে, তারও পিছনে ফিশারের টিমের ক্লায়েন্টরা, আরও পিছনে ফিশার। হল-এর টিমের অন্য চার সদস্য একটা সময়ের পর আর ওঠেননি, খুব দেরি হয়ে যাওয়ায় বুঝতে পেরেছিলেন, সঙ্গের অক্সিজেন শেষ হয়ে গিয়ে বিপদে পড়বেন। অনেকটা উঠেও নীচে ফিরে যান তাঁরা। জন-এরও অক্সিজেন শেষ হয়ে যায় এভারেস্ট থেকে নামার পথে হিলারি স্টেপস-এ। তখন মাথা ঘুরছে, পা পাহাড়ের মতো ভারী, ফুসফুস মরিয়া। সাউথ সামিটে পৌঁছে দেখলেন, হ্যারিসও সেখানে পৌঁছেছেন আগেই, কিন্তু কথা বলতে গিয়ে বুঝলেন, তাঁরও অসংলগ্ন অবস্থা। নতুন অক্সিজেন ভরে, ফের শুরু নীচে ক্যাম্পের দিকে নামা। ঘড়িতে তখন দুপুর তিনটে।

আর তার পর থেকেই, আবহাওয়াটা বিলকুল বদলে গেল। ঘন তুষারপাত শুরু হল, আলো কমে এল নিমেষে। কোনটা যে পর্বত-পথ আর কোনটা আকাশ, বোঝার উপায় থাকল না। যত নীচে নামা, তত খারাপ হতে থাকল চারপাশটা। ক্যাম্পে পৌঁছনোর আগেই চার দিক ভরে গেল ছ’ইঞ্চি পুরু বরফের আস্তরণে। তুষারপাত তখন নিজের রূপ বদলে হয়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর তুষারঝড়। ৭০ কিলোমিটার বেগে উড়ে আসা বরফের টুকরো মুখে এসে বিঁধছে ছুঁচের মতো, শরীরের আ-ঢাকা চামড়া যেটুকু, জমে যাচ্ছে তৎক্ষণাৎ। ক্যাম্পের তাঁবুর বাইরে কয়েক জন ল্যাম্প নাড়িয়ে সংকেত দিচ্ছিলেন ক্রমাগত, সেই দেখে কোনও মতে পৌঁছলেন জন। একটু আগেই হ্যারিসকে দেখেছেন ক্যাম্পের কাছাকাছি, ভাবলেন, সেও নিশ্চয়ই পৌঁছেছে তা হলে। ক্লান্ত, ধ্বস্ত জন ডুবে গেলেন ঘুমে।

ঘুম ভেঙে জানলেন, কী ট্র্যাজেডি ঘটে গিয়েছে বাকি অভিযাত্রীদের। বাকি সবার এত দেরি হয়ে গিয়েছিল এভারেস্টে পৌঁছতে যে নামার মুখে সবাই পড়েন সেই তুষারঝড়ের কবলে। দুই টিমের দুই সুদক্ষ গাইড— রব হল আর স্কট ফিশার— মারা গিয়েছিলেন সে দিন। প্রথম জন সাউথ সামিটে, অন্য জন সাউথ সামিটের ৩৫০ ফুট নীচে। ঝড়ের মধ্যে হল-এর সঙ্গেই নামছিলেন ডুগ হানসেন, সাউথ সামিটের কাছে হারিয়ে যান তিনি। সাউথ কল-এ মারা যান আর এক টিমমেট, জাপানি পর্বতারোহী ইয়াসুকো নাম্বা-ও। ফিশারের টিমের কোনও ক্লায়েন্ট মারা যাননি, তার অনেকটাই কৃতিত্ব অন্যতম গাইড বোকরিয়েভের। ক্যাম্পে ফিরে, ফের টিমমেটদের সাহায্যে এগিয়ে যান তিনি, একা হাতে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় বাঁচিয়ে, কোনও মতে নিয়ে আসেন ক্যাম্পে। মারা গিয়েছিলেন ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশের তিন কর্মী— সুবেদার সেওয়াং সামাংলা, ল্যান্সনায়েক দোর্জে মোরুপ, হেড কনস্টেবল সেওয়াং পালজোর।

১৯৯৬ সালের এভারেস্ট ট্র্যাজেডির কথা প্রথমে নিজের ম্যাগাজিনে, পরে বই আকারে লিখেছিলেন জন। ১৯৯৭-এ প্রকাশিত ‘ইনটু থিন এয়ার’ নামের সেই বই বেস্টসেলার হয়েছিল, পরে তা থেকে হয়েছে একই নামের টিভি-ছবিও। তিন বছর আগে একই ঘটনা থেকে হলিউড বানিয়েছে ‘এভারেস্ট’। হয়তো আগামীতে ছবি তৈরি হবে এভারেস্টে ২০১৫-র ভয়ংকর ভূমিকম্প নিয়েও। ২৯,০২৯ ফুট চড়ার স্বপ্নে যে দুঃস্বপ্ন লুকিয়ে থাকে, সমতলের ছাপোষা আমরা সে সব পরদায় দেখতে ভালবাসি কিনা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mount Everest Disaster 1996 Mount Everest disaster
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE