দীর্ঘ আট মাসের দম বন্ধ করা অবস্থার পরে নিউ নর্মালে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। এ বার বাইরে যেতেই হবে। ঠিক করলাম, থাকব অক্সিজেনে ভরপুর সবুজ ও বন্যপ্রাণের মাঝে। সেই অর্থে কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই চেপে পড়লাম ট্রেনে।
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে গাড়িতে লাটাগুড়ি। ততক্ষণে ঠিক করে ফেলেছি গরুমারা জাতীয় উদ্যানে থাকব। যোগাযোগ করলাম নেওড়া মোড়ের কাছে ফরেস্ট অফিসে। ঘরও পেয়ে গেলাম। আমাদের থাকার জায়গা হল গরুমারা অরণ্যের মধ্যে প্রায় দেড় কিলোমিটার ভিতরে। তখন বিকেল, জঙ্গলে আবার তাড়াতাড়ি সন্ধে নামে। ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে চলতে চলতে বাঁ দিক নিল গাড়ি। সামনেই নেওড়া জঙ্গল ক্যাম্প। এগিয়ে চলতে লাগলাম। মেঠো পথে ঘাসের মধ্য দিয়ে শুধু চাকা যাওয়ার দাগ। ইতিউতি তাকাচ্ছিলাম, যদি কারও দেখা মেলে। হঠাৎ ব্রেক কষল গাড়ি, সামনে পথ আগলে এক ময়ূর। পেখমের ছটায় গোটা জায়গাটা ঝলমল করে উঠল! ক্যামেরা বার করতে না করতেই সে ধাঁ।
অবশেষে পৌঁছলাম নেওড়া পর্যটক আবাসে। অরণ্য প্রকৃতির মাঝে এমন মনোরম থাকার জায়গা দেখে সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে গেলাম। চারদিকে রকমারি সবুজ। পাখিদের বাসায় ফেরার কলতানের মধ্য দিয়ে জঙ্গলে সন্ধে নেমে গেল। প্রথম দিকে খুব একটা ঠান্ডা ছিল না, যত রাত বাড়তে লাগল শীতের কামড় ততই তীব্র হতে লাগল। আমরা অরণ্যের নীরবতা অনুভব করতে লাগলাম। মাঝে মাঝে সেই নীরবতা ভেঙে নিজেকে জানান দেওয়ার হুঙ্কারও অবশ্য কানে আসছিল। আবাসেই ছিল খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা। রাত ন’টার মধ্যেই ডিনার সেরে নিলাম।