Advertisement
০৬ মে ২০২৪

আশ্বিন হিমের বাংলাদেশে

মহাষ্টমীর দিন হঠাৎ করেই সুযোগ এসে গেল বাংলাদেশ যাওয়ার। গেদে সীমান্তে ভিসা-পাসপোর্টের কাজ মিটিয়ে ওপার বাংলার দর্শনায় পৌঁছলাম বেলা বারোটায়।

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৭ ০১:৪৯
Share: Save:

মহাষ্টমীর দিন হঠাৎ করেই সুযোগ এসে গেল বাংলাদেশ যাওয়ার। গেদে সীমান্তে ভিসা-পাসপোর্টের কাজ মিটিয়ে ওপার বাংলার দর্শনায় পৌঁছলাম বেলা বারোটায়। প্রথম গন্তব্য চুয়াডাঙা মেহেরপুরের কাছে রুইথনপুর গ্রাম। সেখানে আমার পূর্বপুরুষের জন্মভিটে। বাসস্ট্যান্ডের টিকিট কাউন্টারে সহৃদয় মানুষটি এ ব্যাপারে খুবই সাহায্য করলেন।

চুয়াডাঙায় এসে মেহেরপুরের বাসে উঠে কুলপানা নেমে দেখি, এক ভদ্রলোক আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। পরিচয়পর্ব শেষে আমরা মোটরভ্যানে রুইথনপুর গেলাম। ‘ইন্ডিয়া’ থেকে মেহমান এসেছেন শুনে গ্রামের লোকজনও হাজির। তাঁদের আন্তরিকতায় মু্গ্ধ হয়ে গেলাম। গাছের তলায় বাঁশের মাচা। বেশ কয়েকটি ছবিও তুললাম।

সেখানেই আলাপ হল এক ভদ্রলোকের সঙ্গে। তিনিই বিনিময় করা আমাদের বসতবাড়ির বর্তমান মালিক। তিনি খুব আন্তরিক ভাবে বাড়ির ভিতর নিয়ে গেলেন, জলখাবার খাওয়ালেন। তাঁর বাড়িতেই রাতে থেকে যাওয়ার অনুরোধ করলেন। কিন্তু থাকার উপায় নেই। দর্শনা থেকে বিকেলে বাসের টিকিট কাটা ছিল। অগত্যা রওনা দিতেই হল।

রাতভর বাসে, তারপর পদ্মার বুকে চার তলা ফেরিতে রোমাঞ্চকর যাত্রা শেষে ভোরের নবমীতে নারায়ণগঞ্জের নয়াপুর পৌঁছলাম। বাংলাদেশে আমার প্রথম আসা এবং দুর্গাপুজো দেখা। মাইকের দাপাদাপি নেই, আড়ম্বরের চটকদারি নেই। কিন্তু আন্তরিকতায় ও আতিথেয়তার কোনও তুলনা হয় না।

বিজয়াদশমীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের চিত্রটা কিন্তু আলাদা। সাংস্কৃতিক মঞ্চে রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়ে শুরু হল। শাসক ও বিরোধী দুই দলই তাদের বক্তব্য রাখল। তারপর প্রবল বাজনা-সহ নাচ, গান হাস্যকৌতুক চলল সারা রাত।

একাদশীর দিন স্থানীয় কলেজের অধ্যাপক নকুল মিত্র আমাকে বারদিতে শ্রীশ্রীলোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রমে নিয়ে গেলেন। সেখানে মন্দিরে পুজো দিলাম। লোকনাথ ব্রহ্মচারীর সমাধি মন্দির দেখলাম। বিশাল আশ্রম চত্বর ঘুরে
ঘুরে দেখলাম।

এরপর গেলাম আমাদের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বাড়ি দেখতে। বাড়িটির বাইরের দেওয়ালে লেখা —‘বিশ্ববরেণ্য জননেতা জ্যোতি বসুর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য, কিশোর বাহিনী পশ্চিমবঙ্গ ২০১০’।

পরের দিন ঢাকা গিয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দির, রমনা কালীমন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রম, রামকৃষ্ণ মিশন, ইস্কন মন্দির দেখতে দেখতেই বেলা ফুরিয়ে এল। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্গাপুজো হয় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ও রামকৃষ্ণ মিশনে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ও তত্ত্বাবধায়ক রতন চক্রবর্তীর ব্যবস্থাপনায় দুপুরের মহাভোজ প্রসাদ পেলাম। ঘণ্টাখানেক প্রবল বৃষ্টিতে আটকে গিয়ে তাঁর সঙ্গেই গল্প করে সময় কাটালাম।

এ বার ফেরার পালা। ঢাকা শহরে তিনটি বড় বড় বাস টার্মিনাস আছে। দর্শনা ফেরার বাস টার্মিনাস খুঁজতেই প্রাণান্তকর অবস্থা। অবশেষে নির্দিষ্ট বাসের টিকিট কেটে বাসে উঠে বসলাম। সারা দিনের ধকলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কন্ডাক্টরের চেঁচামেচিতে তাড়াহুড়ো করে রাত তিনটেয় দর্শনা নেমে পড়লাম। ওই যাঃ, আমার পাসপোর্ট ব্যাগ সবই বাসের মধ্যে ফেলে এসেছি। বাসের টিকিটে লেখা নম্বরে ফোন করে জানালাম আমার এমন অবস্থার কথা। তাঁরা জানালেন, সকাল সাতটায় ওই বাসটাই ফিরবে। এ বার নির্জন রাতে চার ঘণ্টা কী করে কাটাই! ভয়ে ভয়ে ভোর হল। দেখলাম, অনেকেই প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছেন। দূরে দর্শনা স্টেশনও দেখতে পেলাম। এখানকারই কোনও রেলের আবাসনে আমার বাবা-মায়ের বিয়ে হয়েছিল। ইচ্ছে হচ্ছিল, একবার রেলের আবাসনগুলো ছুঁয়ে দেখে আসি। সকাল সাতটার আগেই বাস এসে গেল। ফেরত পেলাম আমার ব্যাগ, ভিসা-পাসপোর্ট। কথায় বলে, সব ভাল যার শেষ ভাল। আমার ক্ষেত্রেও তাই হল। আমিও এ পার বাংলায় ফিরে এলাম।

সাগরময় অধিকারী, নতুন বুঁইচা, ফুলিয়া, নদিয়া

নিজের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর-সহ লেখা পাঠান এই ঠিকানায়:

ই-মেল: abpnm15@gmail.com

(* সম্পাদকের নির্বাচনই চূড়ান্ত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cold Breeze
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE