Advertisement
E-Paper

চেনা ডুয়ার্সের অচেনা ঠিকানা, পুজোর গন্তব্য হোক এমনই তিন স্থান, কী ভাবে যাবেন?

পুজোর ছুটিতে সফরের জন্য ট্রেন, বাস, বিমানের টিকিট কাটা হয়নি? বেড়ানোর সঙ্গী হতে পারে চারচাকাই। আনন্দবাজার ডট কম-এ থাকছে সড়কপথে ভ্রমণের চেনা-অচেনা গন্তব্যের হদিস।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:১৩
ডুয়ার্সের কোন নতুন জায়গার সন্ধান চান? তিন জায়গা হতে পারে পুজোর গন্তব্য।

ডুয়ার্সের কোন নতুন জায়গার সন্ধান চান? তিন জায়গা হতে পারে পুজোর গন্তব্য। ছবি: সংগৃহীত।

ডুয়ার্স বললেই মনশ্চক্ষে ভেসে ওঠে মন ভাল করা দৃশ্য। কোথাও চা-বাগিচা, কোথাও অরণ্য। সেই ঘন সবুজের বুক চিরে চলে গিয়েছে পিচ ঢালা রাস্তা। সেই রাস্তা ছাড়িয়ে ডাইনে-বাঁয়ে ঢুকলে পৌঁছোনো যায় কোনও অজানা বনবস্তিতে। পৌঁছোনো যায় কোনও নদীর পারে। এ পথে সঙ্গ দেয় পাখির কিচির-মিচির। কখনও আবার রঙিন প্রজাপতি।

সেই ডুয়ার্সই হতে পুজোর গন্তব্য। শরতের আকাশ ডুয়ার্সের মেজাজটাই বদলে দেয়। বর্ষা শেষে ঘন সবুজে মোড়া অরণ্যও হাতছানি দেয় পর্যটকদের।

এমন পথে নিজেদের মতো গাড়ি চালানো, থমকানো, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ক্যামেরাবন্দি করার ইচ্ছা যদি থাকে, তা হলে বেড়িয়ে পড়ুন। গরুমারা, বক্সা-জয়ন্তী, মূর্তির হাতছানি থাকে সব সময়েই। তবে চেনা ছকের বাইরেও হতে পারে ভ্রমণ।

ভাট্টি

ভাট্টিতে বয়ে গিয়েছে মূর্তি নদী। অরণ্য-পাহাড়- নদীর শোভা অপূর্ব।

ভাট্টিতে বয়ে গিয়েছে মূর্তি নদী। অরণ্য-পাহাড়- নদীর শোভা অপূর্ব। ছবি: সংগৃহীত।

ডুয়ার্সের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে মূর্তি নদী। পাহাড়ি খরস্রোতা নদীটির বয়ে চলা দেখেই কাটিয়ে দেওয়া যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এমনই এক স্থানের নাম ভাট্টি। দু’একটি হোম স্টে রয়েছে সেখানে, তা-ও একেবারে নদীর পাশে। শহুরে জীবনে যা কল্পনা, এখানে সেটাই বাস্তব। পাখির ডাক, প্রজাপতির ওড়াওড়ি, মেঘ-কুয়াশালার হাতছানি— আর তারই মাঝে নদীর পাড়ে জমিয়ে খাওয়া। জীবন থেকে ‘চড়ুইভাতি’ শব্দটি হারিয়ে গেলে মনে করিয়ে দেবে ভাট্টি। তবে ভাট্টিতে পৌঁছোনোর পথ মোটেই মসৃণ নয়। ডুয়ার্সের জনপ্রিয় স্থান রকি আইল্যান্ডের অদূরে এই জায়গা পর্যন্ত গাড়ি চালাতে হলে পাকা হাতের চালক হওয়া দরকার। কলকাতা থেকে গাড়ি নিয়ে এলে যদি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস থাকে, তবেই ভাট্টি পর্যন্ত নিজের গাড়িতে আসুন। না হলে সন্তলেখোলা বা রকি আইল্যান্ড পর্যন্ত গাড়িতে এসে, বাকি পথটি হোম-স্টের জিপ ভাড়া করে নিন।

ভাট্টি থেকে ঘুরে নেওয়া যায় সন্তলেখোলা, বিন্দু ভিউ পয়েন্ট, ঝালং, সামসিং ভিউ পয়েন্ট, চা-বাগান। চালসা থেকে একটি রাস্তা চলে গিয়েছে চাপড়ামারির দিকে। সেই দিকেও ঘুরে আসতে পারেন। ভাট্টি জায়গাটিতে এক রাত থেকে পরের দিনটি শুধুই পায়ে হেঁটে আশপাশ উপভোগ করতে পারেন। পরের দিন চলে যেতে পারেন চাপড়ামারি হয়ে পারেনের দিকে। চাইলে লাটাগুড়ি থেকে গরুমারার জঙ্গলে সাফারিও করা যায়।

কী ভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে বর্ধমান বা নদিয়া হয়ে বহরমপুর, ফরাক্কা, মালদহ, রায়গঞ্জ হয়ে শিলিগুড়ি থেকে রকি আইল্যান্ডের দূরত্ব ৯৫ কিলোমিটার। শালুগাড়া-সেবক হয়ে রাস্তা এগিয়েছে। পথের সৌন্দর্য কাটিয়ে দেবে ক্লান্তি। চা-বাগান, অরণ্যপথ কোথাও মসৃণ, কোথাও এবড়ো-খেবড়ো।চালসা, মেটেলি হয়ে পৌঁছতে হবে সামসিং। এখান থেকে রকি আইল্যান্ড বা ভাট্টি পৌঁছোতে স্থানীয়দের কাছে পথ জেনে নেওয়াই ভাল।কলকাতা থেকে সামসিংয়ের দূরত্ব প্রায় ৬৪৫ কিলোমিটার। লম্বা পথ একবারে পাড়ি দিতে না চাইলে মালদহে রাত্রিবাস করতে পারেন।

কোথায় থাকবেন?

ভাট্টিতে হাতেগোনা হোম স্টে রয়েছে। ভাট্টিতে থাকতে না চাইলে সন্তলেখোলা বা সামসিং-এ থাকতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গ বনোন্নয়ন নিগমের অতিথি নিবাস রয়েছে। আছে একাধিক হোম-স্টেও।

বুড়িখোলা

বুড়িখোলার প্রকৃতি ভুলিয়ে দেবে শহুরে ক্লান্তি।

বুড়িখোলার প্রকৃতি ভুলিয়ে দেবে শহুরে ক্লান্তি। ছবি: সংগৃহীত।

বর্ষায় বুড়িখোলা ঘন সবুজ। তবে বর্ষার শেষে গেলে প্রবেশ করা যায় ঘন জঙ্গলে। বুড়িখোলার সৌন্দর্য শুরু হয়ে যায় মালবাজার পার করে গরুবাথানের দিকে খানিক এগোলেই। মসৃণ পিচের রাস্তার দু’পাশে সবুজের আহ্বান। ডামডিম-গরুবাথানের রাস্তা ধরে এগোলেই হাতছানি দেয় পাহাড়। তবে গন্তব্যে পৌঁছতে গেলে বেঁকে যেতে হবে গরুবাথান ঢোকার আগেই ডান হাতে।

এ পথে মসৃণ পিচের প্রলেপ নেই। এবড়ো-খেবড়ো রাস্তার দু’পাশে জঙ্গলের শোভা। ৪-৫ কিলোমিটার ঘন জঙ্গলের পথ পেরিয়ে পৌঁছনো যায় বুড়িখোলায়। এই পথেই সাক্ষাৎ হবে বুড়ি নদীর সঙ্গে। স্থানীয় ভাষায় নদীকে বলা হয় ‘খোলা’। তা থেকেই নাম বুড়িখোলা। নদী পার হলেই এসে পড়ে ছোট্ট জনপদ, বুড়িখোলা গ্রাম। দু’দিন বুড়িখোলার গ্রাম্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। শাকামের জঙ্গল, চাপড়ামারি, জলদাপাড়া-সহ যে কোনও জঙ্গলই ঘুরতে পারবেন। আর জঙ্গলে না যেতে চাইলে পাপড়ক্ষেতি, মইরুনগাঁও, লাভা বেড়িয়ে আসতে পারেন।

কী ভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে বহরমপুর, ফরাক্কা, মালদহ, রায়গঞ্জ হয়ে শিলিগুড়ি। সেখান থেকে মালবাজার ৫৬ কিলোমিটার। শালুগাড়া, সেবক হয়ে ওদলাবাড়ি-ডামডিম হয়ে রাস্তা গিয়েছে। ডামডিম-গরুবাথানের রাস্তা ধরে এগোতে হবে। গন্তব্যে পৌঁছতে গেলে বেঁকে যেতে হবে গরুবাথান ঢোকার আগেই ডান হাতে।

কোথায় থাকবেন?

বুড়িখোলাতে হাতেগোনা হোম স্টে রয়েছে। যেহেতু অচেনা ঠিকানা, সবচেয়ে ভাল হয় যদি হোম স্টে-র কর্মীদের কাছে একেবারে শেষধাপের পথ নির্দেশিকা জেনে নেওয়া যায়।

সিসামারা

সিসামারা থেকে ঘুরে নিতে পারেন জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান, নজরমিনার।

সিসামারা থেকে ঘুরে নিতে পারেন জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান, নজরমিনার। ছবি: সংগৃহীত।

জলদাপাড়ার অরণ্য, বয়ে যাওয়া সিসামারা নদী, তারই পাশে সিসামারা। ডুয়ার্সকে একটু অন্য ভাবে উপভোগ করতে চাইলে এই স্থানও হতে পারে দু’টি দিন থেকে যাওয়ার ঠিকানা। সিসামারা পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। শিলিগুড়ি বা জলপাইগুড়ি থেকে ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, ফালাকাটা হয়ে আসতে হবে এখানে। গন্তব্যস্থল কেমন, তার ট্রেলার দেখাবে রাস্তা।অরণ্যের বুক চিরে এগিয়েছে পথ। সিসামারায় শুধু পাখির ডাক নয়, দিনভর শোনা যায় ঝিঁঝির ডাকও। এখান থেকে ঘুরে নেওয়া যায় জলদাপাড়া ওয়াচ টাওয়ার, হলং বাংলো। শালকুমার প্রবেশদ্বার থেকে হাতি এবং জঙ্গল সাফারি করা যায়। এ জন্য সঙ্গে পরিচয়পত্র থাকা জরুরি। এই গেটটি সিসামারার বেশ কাছে। ময়ূর, হরিণ, ইন্ডিয়ান বাইসন, বরাত ভাল থাকলে হাতিরও দেখা মিলতে পারে। জলদাপাড়া ছাড়াও ঘুরে নিতে পারেন কোচবিহার। দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। রাজবাড়ি-সহ অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে সেখানেও।

কী ভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে জলদাপাড়ার দূরত্ব প্রায় ৬৭২ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে বহরমপুর, ফরাক্কা, মালদহ, রায়গঞ্জ হয়ে শিলিগুড়ি। সেখান থেকে ধূপগুড়ি, ফালাকাটা হয়ে সিসামারা। শিলিগুড়ি থেকে দূরত্ব ১২৫ কিলোমিটার। যেতে সাড়ে তিন ঘণ্টার মতো সময় লাগবে।

কোথায় থাকবেন?

সিসামারা নদীর পাশেই রয়েছে কয়েকটি হোম স্টে।

সফরের জরুরি কথা

কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি টানা এলেও ১২ ঘণ্টার মতো সময় লেগেই যায়। ধকল নিতে না পারলে ঘুরতে ঘুরতেও আসতে পারেন। মালদহ অথবা রায়গঞ্জ— কোনও একটি স্থানে এক রাত থেকে যেতে পারেন। পরের দিন সেই জায়গাগুলি ঘুরেও নিতে পারেন। মালদহে দর্শনীয় স্থান দুটি— গৌড় ও পাণ্ডুয়া। রায়গঞ্জে দেখে নিতে পারেন কুলিক পক্ষীনিবাস। উল্লেখ্য, ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ডুয়ার্সের অভয়ারণ্য ওবং জাতীয় উদ্যানগুলি পর্যটকদের জন্য খোলা থাকছে।

Offbeat Doors Puja Special 2025 Travel Tips
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy