Advertisement
E-Paper

হিল্লিদিল্লি অনেক হল, এই বর্ষায় ঘরের কাছে মাসানজোর ঘুরে আসুন, রূপে মুগ্ধ হবেনই

বর্ষার শ্যামল প্রকৃতি উপভোগে লম্বা সফর করে দূর-দূরান্তে যাচ্ছেন? হাতের কাছেই রয়েছে মাসানজ়োর। পাহাড়, জলাধার, অরণ্যের শোভা মুগ্ধ করবেই।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৫ ১২:০৮
বর্ষার শ্যামলিমা উপভোগে ঘুরে আসতে পারেন ঝাড়খণ্ডের মাসানজোর থেকে।

বর্ষার শ্যামলিমা উপভোগে ঘুরে আসতে পারেন ঝাড়খণ্ডের মাসানজোর থেকে। —নিজস্ব চিত্র।

বর্ষা মানেই কেউ ছোটেন পাহাড়ে। কেউ আবার সমুদ্রে। এমন মরসুমে পূর্বঘাট-পশ্চিমঘাট পর্বতমালার রূপ হয় দেখার মতোই। ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, ছত্তিসগঢ়-সহ অনেক রাজ্যের বেশ কিছু জায়গার নান্দিনক সৌন্দর্য উপভোগের এটিই যথার্থ সময়। সে কারণেই মালেসজ ঘাট, দেওমালি, মইনপাটের মতো জায়গায় পর্যটকদের যাওয়ার ঝোঁক থাকে।

তবে যদি লম্বা ছুটি, বড় খরচ, সময় নিয়ে সফর পরিকল্পনা করার অভাব থাকে, তা হলে সপ্তাহান্তের ছুটিতে যেতে পারেন মাসানজোর। বাংলা এবং ঝাড়খণ্ড সীমানায় তার অবস্থান। এখানে যেমন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুব আবাস, সেচ দফতরের বাংলো ময়ূরাক্ষী ভবন রয়েছে, তেমনই খানিক দূরে রয়েছে ঝাড়খণ্ড পর্যটন দফতেরর ময়ূরাক্ষী রিসর্টও।

মাসানজোর জলাধার। বর্ষা প্রকৃতির রূপ উপভোগে এবার চলুন সেখানেই।

মাসানজোর জলাধার। বর্ষা প্রকৃতির রূপ উপভোগে এবার চলুন সেখানেই। —নিজস্ব চিত্র।

কলকাতা থেকে সড়কপথে গেলে বীরভূম হয়ে যাওয়া যায়। মাসানজোরে পৌঁছনোর অনেক আগে থেকেই প্রকৃতি নিজেকে মেলে ধরে। বীরভূমের ব্যস্ত শেওড়াকুঁড়ি মোড় পার করলেই বদলাতে থাকে দৃশ্যপট। রাস্তার পাশে তখন সবুজের ছোঁয়া। কোথাও টিনের চালার ঘর, কোথাও ছোটখাটো পাকা বাড়ি। হঠাৎ করেই কোথা থেকে রাস্তার দু’পাশে শালের জঙ্গল বদলে দেয় চেনা ছবি। বর্ষার মরসুমে তা যেন আর সবুজ-সতেজ। অরণ্য শেষ হলে শুরু হয় টিলা। তার পর আস্তে আস্তে ছোটখাটো পাহাড়। কোথাও তালগাছ, কোথাও ঝোপঝাড়। মাখনের মতো রাস্তা। সেই পথই পৌঁছে দেয় মাসানজোরে।

ময়ূরাক্ষী নদীর উপর বাঁধ দিয়ে তৈরি হয়েছে বিশাল জলাধার। স্বচ্ছ জলাধারকে বেড় দিয়ে রেখেছে ছোটবড় পাহাড়সারি। কূল-সীমা টের পাওয়া যায় না এতটাই তার বিস্তৃতি। এক দিকে জলাধার। অন্য দিকে, রয়েছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও। সশব্দে সেখান থেকে দুধসাদা জল ঝর্নার মতো বেরিয়ে আসে। এতটাই শব্দ, জলের তোড় যে পাশের মানুষটির কথাও শোনা যায় না।

এখানে তৈরি হয়েছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও।

এখানে তৈরি হয়েছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও। —নিজস্ব চিত্র।

বর্ষা রূপ বদলে দেয় মাসানজোরের। আকাশে জমা বাদল মেঘ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা রবিকিরণ এক অদ্ভূত মায়াময় পরিবেশ তৈরি করে। কখনও কখনও জমাট বাঁধা কালচে মেঘের সঙ্গে ঘন সবুজ পাহাড়ের রঙের বৈপরীত্য চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। এই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। পরক্ষণেই মেঘ কেটে নীল আকাশ দেখা দিল। বর্ষাপ্রকৃতি যেন ক্ষণ ক্ষণে খেলা দেখায়।

পর্যটকদের থাকার জন্য যুব আবাসটি রয়েছে জলাধারের গায়ে। ছোট্ট একটি টিলার মাথায়। উঁচুতে অবস্থান বলেই এখান থেকে চারপাশের শোভা দারুণ দেখায়। লোহার ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে আবাসের ছাদে উঠলে চোখে পড়ে জলাধারের সুন্দর দৃশ্য। যুব আবাসের ঠিক নীচে জলাধারের উপর চলে গিয়েছে লম্বা সেতু। সেটি যে পড়ন্ত বিকেলে এক অনন্য সাধারণ ‘ভিউ পয়েন্ট’ হয়ে ওঠে, বলার অপেক্ষা রাখে না।

যুব আবাস থেকে ২ কিলোমিটার মূল রাস্তা ধরে গেলেই বোটিং পয়েন্ট। সেখানে স্পিড বোটে চেপে ঘুরে সাক্ষী হওয়া যায় এক মনে রাখার মতো বিকালের। বোটিং পয়েন্ট ছেড়ে মিনিট পাঁচেক হাঁটলে মিলবে বেশ বড় এবং লম্বা সেতু। সেই সেতু থেকেই একদিকে দৃশ্যমান জলাধার। অন্য দিকে, জলের অঝোর ধারা সশব্দে ক্যানালে পড়ছে। ভাল করে লক্ষ করলে চোখে পড়বে, উড়ে বেড়াচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়া।

পশ্চিমবঙ্গ যুব আবাসের খুব কাছেই রয়েছে এই স্থান। এখান থেকে জলাধার সুন্দর দেখায়।

পশ্চিমবঙ্গ যুব আবাসের খুব কাছেই রয়েছে এই স্থান। এখান থেকে জলাধার সুন্দর দেখায়। —নিজস্ব চিত্র।

এই জায়গায় নামী-দামি হোটেল সেই অর্থে এত দিন ছিল না। বরং এখানকার সর্বত্রই মিলত ঝাড়খণ্ডের খুব সাধারণ খাবার-দাবার। আটার পুরি-ছোলার তরকারি, ধুসকা। এ ছাড়াও পাওয়া যেত ডিম টোস্ট, চা-ঠান্ডা পানীয়, ভাত, মাছ, মাংস। তবে ধীরে ধীরে পর্যটনের প্রসার হচ্ছে। বাড়ছে দোকানপাট। সম্প্রতি ঝাড়খণ্ড পর্যটন দফতর জলাধারের গায়ে থাকার জন্য পরিবেশবান্ধব অথচ আধুনিক কাঠের কটেজ তৈরি করেছে।

কী ভাবে যাবেন?

হাওড়া থেকে ট্রেনে সিউড়ি গিয়ে দুমকাগামী বাস ধরে মাসানজোর পৌঁছনো যায়। কলকাতা থেকে সড়কপথেও বীরভূম হয়ে মাসানজোর যাওয়া যায়। দূরত্ব ২২৫ কিলোমিটার। যেতে ৬-৭ ঘণ্টার কাছাকাছি সময় লেগে যায়। যানজট থাকলে সময় আরও বেশি লাগতে পারে।

আর কোথায় যাবেন?

মাসানজোর থেকে ঘুরে নেওয়া যায় মলুটি। এই গ্রামে রয়েছে অসংখ্য পুরনো মন্দির। মন্দিরগাত্রের টেরাকোটার কাজ প্রশংসার দাবি রাখে।

কোথায় থাকবেন?

পশ্চিমবঙ্গ সেচ দফতরের বাংলো আছে ময়ূরাক্ষী ভবন। এখানে থাকতে গেলে অবশ্য আগাম অনুমোদন দরকার হয়। আছে পশ্চিমবঙ্গ যুব আবাস। মৌলালির দফতর থেকে সেটির বুকিং হয়। অনলাইনেও বুক করা যায়। ঝাড়খণ্ড ট্যুরিজমের ময়ূরাক্ষী রিসর্ট ছিল এত দিন। এখন যোগ হয়েছে মাসানজোর ইকো কটেজ।

Massanjore Dam Massanjore Travel Tourist Spot Monsoon
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy